ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

মাছের মেলায় ৭০ কেজির বাঘাইড়, জামাইদের ভিড় 

রফিক সরকার, (কালীগঞ্জ) গাজীপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৫, ১৫ জানুয়ারি ২০২৪  
মাছের মেলায় ৭০ কেজির বাঘাইড়, জামাইদের ভিড় 

৭০ কেজির বাঘাইড় মাছ

একদিনের মাছের মেলায় মানুষের ঢল। সোমবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল থেকে জমে ওঠে মেলা। আড়াইশত বছরের বেশি সময় ধরে গাজীপুরের কালীগঞ্জে পৌষ সংক্রান্তিতে মাঘ মাসের প্রথম দিনে বসে ঐতিহ্যবাহী বিনিরাইলের মাছের মেলা। তবে এটা মাছের মেলা হলেও সবাই এটাকে জামাই মেলা বলেন। মেলা ঘিরে ভিড় জমান দূর-দূরান্ত থেকে মাছ কিনতে আসা জামাই, এলাকার শ্বশুর ও উৎসুক দর্শনার্থীরা। মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ৭০ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছ।

এই বাঘাইড় মাছকে ঘিরে ক্রেতাদের জটলা লেগে থাকে। বিক্রেতা দাম হেঁকেছেন ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। ক্রেতাদের মধ্যে স্থানীয় এক জামাই মাছটির দাম সর্বোচ্চ ৮৫ হাজার টাকা বলেন। কিন্তু বিক্রেতা আরও বেশি দাম পাবার আশায় মাছটি ছাড়েননি। পরে চলে দর কষাকষি। যত না ক্রেতা তার চেয়ে অনেক বেশি উৎসুক জনতা ভিড় জমান মাছটি দেখার জন্য। সরেজমিন মেলা ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

মেলা প্রাঙ্গণে প্রায় ২ শতাধিক ব্যবসায়ী বাহারি মাছ সাজিয়ে বসেন। মাছ ছাড়াও আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টি নিয়ে বসেন দোকানিরা। মাছের মেলায় সামুদ্রিক চিতল, বাঘাইড়, আইড়, বোয়াল, কালী বাউশ, পাবদা, গুলসা, গলদা চিংড়ি, বাইম, ইলিশ, কাইকলা, রূপচাঁদা মাছের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে নানা রকমের দেশী মাছও।

বিনিরাইল গ্রামের মাছের মেলা ঘিরে আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষের সমাগমে এখানে দিনভর চলে আনন্দ-উৎসব। আর এ দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকেন স্থানীয়রা। কারণ এটা মাছের মেলা হলেও এখানে চলে এলাকার জামাইদের বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা। বিনিরাইল এবং এর আশপাশের গ্রামে যারা বিয়ে করেছেন, সেই জামাইরা হচ্ছেন মেলার মূল ক্রেতা ও দর্শনার্থী। জামাইরা চান, সবচেয়ে বড় মাছ কিনে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যেতে। শ্বশুররাও চান সবচেয়ে বড় মাছ কিনে জামাইকে আপ্যায়ন করতে। বিনিরাইলের মাছের মেলা যেন জামাই-শ্বশুরদের বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতার বিশাল মাঠ।

কথিত আছে, পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে আটার শতকে মেলার প্রচলন হয়। মাছ মেলা হিসেবে শুরু হলেও পরবর্তীতে এটি জামাই মেলা নামে পরিচিতি পায়। প্রতি বছর মেলা কেন্দ্র করে বিনিরাইল ও আশপাশের কয়েক গ্রামের শ্বশুররা তাদের মেয়ে- জামাতাকে বাড়িতে নিমন্ত্রণ জানায়। মেয়েরা স্বামীদের নিয়ে বাবা বাড়িতে বেড়াতে আসে। জামাইরা মেলা থেকে মাছ কিনে শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যায়। তাই এ মেলা জামাই মেলা নামে পরিচিতি পায়।

বিনিরাইল মেলা প্রাঙ্গণের আশপাশের স্থানীয় প্রবীণরা জানান, উপজেলার জাঙ্গালিয়া, বক্তারপুর, জামালপুর ও মোক্তারপুর ইউনিয়নের মোহনায় বিনিরাইল গ্রামে বসে এই মাছের মেলা। প্রায় ২৫০ বছর ধরে কৃষকের ধান কাটার পর ওই জমিতে স্থানীয়রা এ মেলার আয়োজন করে। মেলার প্রধান আকর্ষণ বিশাল আকৃতির মাছ। প্রতি বছর পৌষ মাসের শেষে মাঘ মাসের প্রথম দিনে এ মেলা বসে। নদী ও সাগরের বড় বড় মাছ, মিষ্টি, ফার্নিচার, তৈজসপত্রসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি হয় এ মেলায়। প্রশাসনের কঠোরতায় জুয়া বা অশ্লীল আয়োজনের সুযোগ নেই। তবে মেলায় ইচ্ছামতো টোল আদায় ও কিছু অব্যবস্থাপনার অভিযোগ রয়েছে।

মেলায় নানা ধরণের মাছের পাশাপাশি হরেক রকম মিষ্টি বিক্রি হয়। প্রতি কেজি মিষ্টি ২০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে ছিল। ১ কেজি ওজনের বালিশ আকৃতির মিষ্টি বিক্রি হয় ৫০০ টাকায়। এ ছাড়া মেলায় কাঠ ও স্টিলের আসবাবপত্র, ফল, খেলনা, নানা ধরনের আচারসহ সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বি্ক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য বেশ কিছু আয়োজন ছিল।

কথা হয় মেলায় আসা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থেকে আসা জামাই মিঠু সূত্রধর পলাশের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বহু বছরের পুরনো এই মেলা দেখার ইচ্ছা ছিল। শ্বশুর বাড়ি থেকে আমাকে নিমন্ত্রণ করেছে, আমিও এসেছি। মেলাই ঘুরছি, কিছু মাছ শ্বশুর বাড়ির জন্য কিনে নিয়ে যাব।’
 

/বকুল/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়