ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

তথ্য পেতে ১৩ পৃষ্ঠার মূল্য ৩৫ হাজার টাকা!

জাহিদুল হক চন্দন, মানিকগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১০, ১৫ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৯:১১, ১৫ জানুয়ারি ২০২৪
তথ্য পেতে ১৩ পৃষ্ঠার মূল্য ৩৫ হাজার টাকা!

তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করেছেন। প্রকাশযোগ্য তথ্য সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে তথ্য কমিশন নিরলসভাবে কাজ করছে। তবে, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তারা তথ্য অধিকার আইন যথাযথ অনুসরণ না করায় সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা এলজিইডি অফিসে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেননি তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা। তিনি তথ্য সরবরাহ করতে ৩৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করেন। তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী সরবরাহকৃত ওই ১৩ পৃষ্ঠার মূল্য হওয়ার কথা ছিল ২৬ টাকা। যদিও আপিলের পর ওই তথ্য নিয়ম অনুযায়ী বিনামূল্যে ই-মেইলে সরবরাহ করা হয়।

প্রথম সিদ্ধান্তপত্র

হরিরামপুর উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ে তথ্য অধিকার আইনে তথ্য পেতে আবেদন করেন রাইজিংবিডি ডটকম-এর মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জাহিদুল হক চন্দন। আবেদনের পর তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মাজহারুল হক আকন্দ ১৭ হাজার ৫৬৭টি পৃষ্ঠা নির্ধারণ করেন। এ ছাড়া, তথ্য সরবরাহ করার জন্য ৩৫ হাজার ১৩৪ টাকা নির্ধারণ করে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয়। এমন সিদ্ধান্তের পর কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল করেন চন্দন। আপিল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের পর তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি ই-মেইলে ৪টি পিডিএফ ফাইল সরবরাহ করে সিদ্ধান্তপত্র প্রেরণ করেন।

তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা মাজহারুল হক আকন্দ

পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ওই ৪টি পিডিএফ ফাইল ফটোকপি করলে ১৪ পৃষ্ঠা হয়, যার ১৩ পৃষ্ঠা সরবরাহকৃত তথ্য, আর এক পৃষ্ঠা সিদ্ধান্তপত্র। কিন্তু আপিল আবেদনের আগে তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা ১৭ হাজার ৫৬৭ পৃষ্ঠা নির্ধারণ করেন। আর মূল্য নির্ধারণ করেন ৩৫১৩৪ টাকা। কিন্তু আপিল আবেদন করার পর তথ্য সরবরাহ করলে সেটা মাত্র ১৩ পৃষ্ঠায় দাঁড়ায়। তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী সরবরাহকৃত তথ্যের মূল্য হয় ২৬ টাকা। 

তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তার এমন কর্মকাণ্ডে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তথ্য অধিকার আইন নিয়ে কাজ করা একাধিক ব্যক্তি।

পড়ুন: তথ্য কমিশনেও মিলছে না তথ্য

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী ফটোকপির মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কেউ ফটোকপি আকারে তথ্য চাইলে অস্বাভাবিক বিল তৈরি করে হয়রানি করা অন্যায়। অস্বাভাবিক বিল তৈরির ফলে অনেক তথ্যগ্রহীতা বিমুখ হয়ে যান। ফলে তথ্য অধিকার আইনের সুফল থেকে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। এমন বিষয়ে তথ্য কমিশনে অভিযোগ দাখিলের সুযোগ রয়েছে। আবেদনের পরে তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তার অস্বাভাবিক বিল তৈরি করা কোনভাবেই কাম্য নয়।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, তথ্য অধিকার আইন যথাযথভাবে অনুসরণ না করে এমন অস্বাভাবিক বিল তৈরি করা নেতিবাচক বার্তা দেয়। এতে করে সেবাপ্রার্থীরা হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হন। তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তার এমন কর্মকাণ্ড তথ্য অধিকার আইনকে বাধাগ্রস্ত করেছে।

সর্বশেষ সিদ্ধান্তপত্র

ই-মেইলে সরবরাহকৃত তথ্য ১৩ পৃষ্ঠা হয়, তাহলে কেন তিনি ১৭ হাজার পৃষ্ঠা দাবি করে ৩৫ হাজার টাকা মূল্য নির্ধারণ করেছিলেন? জবাবে হরিরামপুর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) ও তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা মাজহারুল হক আকন্দ কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে তিনি দাবি করেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে।

তথ্য কমিশনের উপ-পরিচালক (প্রশাসন, রুটিন দায়িত্ব) সোহানা নাসরিন বলেন, এ ধরনের ঘটনা আমি প্রথম শুনলাম। এ বিষয়ে অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঢাকা/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়