ঢাকা     সোমবার   ০১ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

চায়ের দোকান দিয়ে সংসার চালাচ্ছেন যুবলীগ নেতা 

জেলা প্রতিনিধি, চাঁদপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১২, ১৭ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৫:২৭, ১৭ জানুয়ারি ২০২৪
চায়ের দোকান দিয়ে সংসার চালাচ্ছেন যুবলীগ নেতা 

চা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন মাহবুব আলম ফরাজী (৫০)। তিনি স্থানীয় আওয়ামী যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। প্রায় ২০ বছর ধরে পৌরসভার ছেঙ্গারচর বাজারে ‘বঙ্গবন্ধু স্টোর’ নামে একটি চায়ের দোকান পরিচালনা করছেন তিনি। 

মাহবুব আলম চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেঙ্গারচর পৌরসভার বালুরচর গ্রামের মৃত মো. নিজাম উদ্দিন ফরাজীর ছেলে। তিনি পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।

ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যখন হরহামেশাই অনৈতিক কর্মকাণ্ড, দুর্নীতি, অপরাজনীতির অভিযোগ পাওয়া যায় তখন মাহবুব আলম ফরাজীর চা বিক্রি করে সংসার চালানোর বিষয়টি আদর্শ এবং নিবেদিত রাজনীতির অনন্য দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন দলীয় নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয়রা।

জানা যায়, ২০০৪ সাল থেকে ছেঙ্গারচর বাজারে ‘বঙ্গবন্ধু স্টোর’ দিয়ে ব্যবসা করছেন মাহবুব আলম। বাজারে যেখানে এক কাপ রং চা ৮ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি করছেন অন্যরা সেখানে তিনি দাম রাখছেন ৫ টাকা। এ ছাড়া দোকানে তিনি বিস্কুট, পান, সিগারেট বিক্রি করেন। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দোকান করেন তিনি। 

ব্যক্তিগত জীবনে মাহবুব আলম দুই ছেলে এবং দুই কন্যাসন্তানের জনক। 

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির করছেন মাহবুব আলম ফরাজী। ব্যক্তি হিসেবে অত্যন্ত সাধারণ তিনি। পৌরসভাসহ আশপাশের ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাকর্মীর নামে নিয়োগ বাণিজ্য, তদবির বাণিজ্য, ড্রেজার ব্যবসা, নানা ধরণের অবৈধ ব্যবসা পরিচালনাসহ টিআর, সরকারি ঘর ও করোনাকালীন সরকারের দেওয়া সাধারণ মানুষের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ থাকলেও মাহবুব আলমের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। উল্টো দোকান থেকে উপার্জিত টাকায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করার সুনামও রয়েছে তার। বিতর্কিত না হওয়ায় তার দোকানে নিজ দলসহ বিরোধীদলের নেতাকর্মীরাও আসেন। ফলে তার দোকানে বিক্রি অন্যদের তুলনায় ভালো হয়। 

বাজারের ব্যবসায়ী এবং আদুরভিটি গ্রামের বাসিন্দা মো. নাজিম দর্জি বলেন, মাহবুব ভাই অনেকদিন আওয়ামী যুবলীগের রাজনীতি করছেন। লোক হিসেবেও ভালো। দূর এলাকা থেকেও লোক আসে তার দোকানে চা খেতে। 

সানসাইন একাডেমিক কিন্ডার গার্ডেনের সিনিয়র শিক্ষক মো. জনি সরকার বলেন, মাহবুব আলমের চা খুবই ভালো হয়। এ কারণে প্রতিদিন আসি চা খেতে। বাজারে কয়েকটি চায়ের দোকান থাকলেও এই দোকানের চা ব্যতিক্রম। 

দলীয় পদে থেকেও মাহবুব আলমের বিরুদ্ধে কোনোদিন কোনো দুর্নীতির কথা শোনেননি বলেও জানান জনি সরকার। 

মাহবুব আলম ফরাজী বলেন, ছেঙ্গারচর ডিগ্রি কলেজে লেখাপড়া করা অবস্থায় কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত পড়ি। ২৪ বছর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের  দায়িত্ব পালন করছি। চা বিক্রির টাকায় সংসার চলে। অন্য কোনো ব্যবসা বা জমিজমা নেই। যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে চা বিক্রি করছি এটা অনেকে খারাপ চোখে দেখলেও আমাকে যারা পছন্দ করেন তারা প্রশংসা করেন। চা বিক্রি করে আমি গর্বিত। দলকে ভালোবাসি। রাজনীতি করে কি পেলাম সেটি কখনও ভাবিনি।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আর ভাষণ আমার খুবই পছন্দ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মেনে চলার চেষ্টা করি। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসেই তার নামে চায়ের দোকান দিয়েছি। বলেন মাহবুব আলম।

ছেঙ্গারচর পৌরসভার সাবেক (ভারপ্রাপ্ত) মেয়র হাজী রুহুল আমিন মোল্লা বলেন, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক চা বিক্রি করে খেলেও তাকে সম্মানের চোখে দেখেন স্থানীয়রা। আমরাও তার দোকান থেকেই চা খাই। 

এ প্রসঙ্গে মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান এমএ কুদ্দুস বলেন, মাহবুব ভাই দলের নিবেদিত তৃণমূল নেতা। চা বিক্রি করে যেমন জীবিকা নির্বাহ করছেন, তেমনি চা স্টল থেকে দলের নিবেদিত প্রচার প্রচারণা করছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে খুবই সম্মানের চোখে দেখি।

 
 

অমরেশ/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়