ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

কেরানীগঞ্জে রাসেল হত্যা: প্রধান আসামিসহ গ্রেপ্তার ১১

কেরানীগঞ্জ(ঢাকা)প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৪, ১৭ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৮:০৭, ১৭ জানুয়ারি ২০২৪
কেরানীগঞ্জে রাসেল হত্যা: প্রধান আসামিসহ গ্রেপ্তার ১১

ঢাকার কেরাণীগঞ্জে রাতভর পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়ে রাসেল (৩২) নামে এক যুবককে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকান্ডের মূল হোতা বহিষ্কৃত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রাব্বিসহ ১১জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- আফতাব উদ্দিন রাব্বি (৩৫), সজীব (৩৬), রাজীব (৩৫), হীরা (৩০), ফিরোজ (৩১), আলমগীর ঠান্ডু (৩৯), আমির (৩৮), রনি (৩৫), দেলোয়ার দেলু (৩৭), শিপন (৩১), মাহফুজ (৩৬) ও মো. রতন শেখ (২৮)।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পরপরই গত মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) রাতে আফতাব উদ্দিন রাব্বি তার বন্ধু রাসেলকে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার তৈলঘাটে পারভিন টাওয়ারের নিচ তলায় তার নিজ অফিসে ডেকে নিয়ে যায়। রাসেল রাব্বির অফিসে হাজির হলে সেখানে উপস্থিত রাব্বির অন্যান্য বন্ধুরা তার নেতৃত্বে রাতভর রাসেলকে এলোপাতাড়িভাবে লাঠিসোটা দিয়ে আঘাত করে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মকভাবে জখম করে এবং কেচি দিয়ে রাসেলের মাথার চুল কেটে দেয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে রাত ২টার দিকে রাসেল গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে রাব্বির নির্দেশে ৪/৫জন রাসেলকে অজ্ঞান অবস্থায় তার বাসায় পৌঁছে দেয় এবং রাসেলের স্ত্রীকে এ বিষয়ে থানা-পুলিশ বা কাউকে না জানানোর জন্য হুমকি দিয়ে আসামিরা চলে যায়। রাসেল মারা যাওয়ার পর রাব্বির অফিসে নিহত রাসেলকে নির্যাতনের বিভিন্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্য ও আলোড়ন তৈরি হয়। আলোচিত এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহত রাসেলের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হাওলাদার বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় আফতাব উদ্দিন রাব্বিকে প্রধান আসামি করে ১৩জন এজাহারনামীয়সহ আরও অজ্ঞাতনামা ১০/১৫ জন আসামির বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। চাঞ্চল্যকর ও ব্যাপক আলোচিত এই হত্যাকান্ডের শুরু থেকেই ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন ও ঘটনায় জড়িত আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার জন্য আমার নেতৃত্বে একটি অভিযানিক দল গঠন করা হয়। হত্যাকান্ডের সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশ হত্যার ঘটনাস্থল রাব্বির অফিসে গিয়ে হত্যাকান্ড সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করে। হত্যাকান্ডে জড়িত এজাহারনামীয় আসামি ছাড়াও তদন্তকারী দল ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া নির্যাতনের বিভিন্ন ভিডিও পর্যালোচনা করে ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামিদের সনাক্ত করে। পরবর্তীতে উক্ত দল তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে ঝিনাইদহ জেলার মহেষপুর থানার বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বাঁশবাড়িয়া বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকান্ডের মূল হোতা আফতাব উদ্দিন রাব্বিসহ ৫জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে পরে আরও ৭জনকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে আমরা সক্ষম হই। গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের কারণ সম্পর্কে জানা গেছে যে, নিহত রাসেল মামলার প্রধান আসামি আফতাব উদ্দিন রাব্বির বন্ধু ছিল।  আর্থিক লেনদেনকে কেন্দ্র করে ও পারস্পরিক মতবিরোধের জেরে রাব্বি ও তার সহযোগীরা রাসেলের উপর ক্ষুব্ধ হয়। এই ঘটনার জের ধরেই আফতাব উদ্দিন রাব্বির নেতৃত্বে তার সহযোগীরা রাসেলকে পৈশাচিক কায়দায় নির্মমভাবে হত্যা করে।

এদিকে এই ঘটনায় রাসেল হত্যার প্রধান আসামি আফতাব উদ্দিন রাব্বির সাথে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মাসুদুর রহমানের সখ্যতা থাকার অভিযোগে তাকে ইতোমধ্যেই ক্লোজ করেছে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে নিহত রাসেলের স্ত্রী সুমি বেগম এই ঘটনার সাথে জড়িত রানা, রাকিব ও বাপ্পিসহ আরও ৫/৬জনকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

রাসেলের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামীর লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই যারা তড়িঘড়ি করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য দাফন করার ব্যবস্থা করেছে; তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

শিপন/ফয়সাল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়