ঢাকা     রোববার   ০৬ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২১ ১৪৩১

অর্ধশত বছরের পুরনো পুকুর ভরাট, প্রশাসন নীরব

মাইনুদ্দীন রুবেল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০৭, ১৭ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ২২:৪৭, ১৭ জানুয়ারি ২০২৪
অর্ধশত বছরের পুরনো পুকুর ভরাট, প্রশাসন নীরব

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে বিপণী-বিতান নির্মাণ করতে পুকুর ভরাট করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। গত দুই মাস ধরে ট্রাক্টরে করে মাটি ফেলে ভরাট কাজ চললেও উপজেলা প্রশাসন নীরব ভূমিকায় রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, বিজয়নগরের চান্দুরা-আখাউড়া সড়কের উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের মির্জাপুর মোড়ে রাস্তা সংলগ্ন পূর্বদিকে প্রায় ৪০-৫০ বছর পুরনো একটি পুকুর রয়েছে। পুকুরের পূর্বদিকের বাসিন্দা জলফু মিয়া, তার ছোট ভাই আজিজুল হক ওরফে মলাই মিয়া ও করিম মিয়াসহ স্থানীয়রা ৭২ শতক পরিমাণের এই পুকুরের মালিক। উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটক থেকে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ মিটার দূরত্বে পুকুরটির অবস্থান। প্রতিনিয়ত এর সামনে দিয়েই উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। গত ৩ থেকে সাড়ে ৩ মাস আগে মাটি দিয়ে ভরাট করতেই পুকুরের পানি সেচে সরানো হয়। পরে জলফু, মলাই ও করিমসহ পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দারা বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাক্টর দিয়ে মাটি এনে পুকুর ভরাটের কাজ শুরু করে। এখানে বিপণী-বিতান নির্মাণ করতেই তারা পুকুর ভরাটের কাজ শুরু করেন। ভরাটকারীরা অনুমতির জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত আবেদনও করেছেন।

প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী, কোনও পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী, প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন বা অন্য কোনভাবে ব্যবহার, ভাড়া, ইজারা বা হস্তান্তর বেআইনি। কোনও ব্যক্তি এ বিধান লঙ্ঘন করলে আইনের ৮ ও ১২ ধারা অনুযায়ী পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যে কোনো ধরনের জলাশয় ভরাট করা নিষিদ্ধ। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর ৬-এর ‘ঙ’ ধারায় বলা হয়েছে, ‘বলবৎ অন্য কোনও আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট বা অন্য কোনভাবে শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় অন্তত চার জন বলেন, ইউএনও-এসিল্যান্ড প্রতিদিন পুকুরের সামনে দিয়ে আসা-যাওয়া করে। তারা কোনও কিছু বলছে না। শুরু থেকে নীরব। তারা বলেন, ভরাটকারীরা সবাই আমার নিজের মানুষ ও ঘরের লোক। গত কয়েকদিন আগে মাটি ফেলার সময় ট্রাক্টরের চাবি নিয়ে যাওয়ার পর ওয়াদুদ (এএসআই) নামে থানার এক দারোগাকে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছি। প্রেসক্লাবের এক সাংবাদিককে ৩০ ও উপজেলা প্রশাসনকে ৯০ হাজার টাকা দিয়েছি। সবটা ভরাট করে এখানে মার্কেট নির্মাণ করা হবে। ভাই আপনেরা কেরে আইলেন। প্রশাসন থেকে শুরু করে সাংবাদিক, সবাইরে ম্যানেজ কইরাই এটা ভরাট করতেছি।

পুকুরের মালিক আজিজুল হক ওরফে মলাই মিয়া বলেন, ম্যাডামের (ইউএনও) কাছে সব কাগজপত্র জমা আছে। সব দিছি। জায়গাটি ২০০০ সালে আমরা কিনছি। এইডা পুকুর না, জলাশয়। এখানে জায়গা আছে ৭২ শতক। আমরার ভাই-বোনদের বাড়িঘরের প্রয়োজনে এইডা ভরাট করতাছি।

ইছাপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জিয়াউল হক বলেন, এটি ৪০ বছর ধরে পুকুর হিসেবে দেখতেছি। ভরাট বন্ধের জন্য বলেছি। বিষয়টি ইউএনও মহোদয়কেও জানিয়েছি।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মেহেদি হাসান খান বলেন, অভিযোগ আসার পর ভরাট বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আবার ভরাট শুরু করে থাকলে আমরা ব্যবস্থা নেব। এটি জলাশয় নাকি পুকুর শ্রেণির, তা কাগজ না দেখে বলা যাবে না।

বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবাইয়া আফরোজ বলেন, আমার কাছ থেকে ভরাটের কেউ কোনও অনুমতি নেয়নি। এ বিষয়ে খোঁজ নেব।

ঢাকা/এনএইচ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়