ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৯ ১৪৩১

রাজশাহীতে বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের কারখানায় অবস্থান

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৫, ১৮ জানুয়ারি ২০২৪  
রাজশাহীতে বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের কারখানায় অবস্থান

রাজশাহীর একটি সোয়েটার কারখানায় শ্রমিকদের তিন মাস থেকে আট মাস পর্যন্ত বেতন বকেয়া পড়েছে। তাই বেতন আদায়ে তারা আন্দোলন শুরু করেছেন। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে তারা কারাখানায় অবস্থান নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরেও তারা কারখানায় ছিলেন। এর আগের রাতটাও তারা কারখানার ভেতরে কাটিয়েছেন। নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে তারা এভাবে তাদের বেতন আদায়ের চেষ্টা করছেন। 

রাজশাহী নগরীর বিসিক শিল্পনগরীতে অবস্থিত এই কারখানাটির নাম সাকোয়াটেক্স। এটি রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সদ্য সাবেক এমপি এনামুল হকের এনা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। বর্তমানে প্রায় ৩০০ শ্রমিক এই সোয়েটার কারখানায় কর্মরত আছেন। সবার বেতন বকেয়া পড়েছে। 

শ্রমিকেরা জানান, কারও তিন মাস, কারও আট মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। চার মাস, পাঁচ মাস, ছয় মাস কিংবা সাত মাসের বেতনও পাবেন কেউ কেউ। তিন-চার মাস ধরে প্রতিসপ্তাহে তাদের বেতন পরিশোধের আশ্বাস দেওয়া হয়। সপ্তাহের সোমবার কিংবা বৃহস্পতিবার বেতন দেওয়া হবে বলে কারখানার কর্মকর্তারা জানান। কিন্তু বেতন দেওয়া হয় না। মাসের পর মাস তারা এভাবে বেতন আটকে রাখা হয়েছে। বেতন ছাড়া শ্রমিকেরা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। 

আরো পড়ুন:

কারখানার লিংকিং অপারেটর আশা বেগম বলেন, ‘এখানে শ্রমিকেরা উৎপাদনের ওপর নির্ভর করে পারিশ্রমিক পান। মাসে গড়ে তারা ১৫ হাজার টাকা করে বেতন পান। কারখানার ২০০ শ্রমিকের কেউ সর্বনিম্ন তিন মাসের এবং সর্বোচ্চ আট মাসের বেতন পাবেন। আমি নিজে পাব চার মাসের বেতন। প্রতি মাসে বেতন না পাওয়ার কারণে বাড়িভাড়া বাকি পড়েছে। দোকানে অনেক টাকা বাকি পড়েছে। এখন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারছি না। নতুন বছরে বাচ্চাদের স্কুলড্রেস করে দেওয়ার মতো টাকাও নেই। খুব বিপদে আছি।’

সম্পা খাতুন নামের আরেক নারী শ্রমিক বলেন, ‘কেউ বেতন চাইতে গেলে কারখানার কর্মকর্তারা দুর্ব্যবহার করেন। যারা বেতন চায়, তাদের নামের তালিকা করা হয়। এর পর দিন থেকে গেট দিয়ে আর ওই শ্রমিকদের কারখানায় ঢুকতে দেওয়া হয় না। এভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। সম্প্রতি এভাবে ১৫ থেকে ২০ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এবার আমরা একজোট হয়ে আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের আর চাকরির দরকার নেই, বেতনের দরকার।’

সেলিনা বেগম নামের আরেক নারীকর্মী বলেন, ‘বেতন চাইতে গেলে জোর করে সাদা কাগজে সই নেয়। বলে, এটা রিজাইনের কাগজ। বেতন দিয়ে দেবে। তারপর বের করে দেয়। ওই বেতন আর দেয় না। তিন মাসের বেতনও মেরে খেয়ে নেয়। এবার ঈদের দিন আমার এতিম বাচ্চাকে নিয়ে খালিমুখে দিন কাটিয়েছি। বেতন দেয়নি। এখানে কাজ করে শ্রমিকদের এই অবস্থা।’

শ্রমিকেরা তিন থেকে আটমাসের বেতন বকেয়া থাকার কথা বললেও এনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনামুল হক বলেন, ‘শ্রমিকদের মাত্র একমাসের বেতন বাকি আছে। সম্প্রতি কারখানার সোয়েটার রপ্তানি নিয়ে একটু ঝামেলা হওয়ায় শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা যায়নি। আজ বিকালের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন দিয়ে দেওয়া হবে।’

কেয়া/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়