ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৯ ১৪৩১

সড়ক দুর্ঘটনা 

তিন দিনেও থামছে না শোকের মাতম

নূর আহমদ, সিলেট || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৯, ২২ জানুয়ারি ২০২৪  
তিন দিনেও থামছে না শোকের মাতম

কোনও পদ-পদবি ছিল না তাদের। তবুও, ছাত্রলীগের জন্য ছিলেন অন্তঃপ্রাণ। সিলেটের জৈন্তাপুরে দুর্ঘটনায় নিহত চার বন্ধু ও ছাত্রলীগকর্মীর মৃত্যুর ৩ দিন পরও যেন ভুলতে পারেনি এলাকাবাসী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানা স্মৃতিচারণ। একসঙ্গে রাজনীতি, চলাফেরা, এমনকি একসঙ্গেই মৃত্যুর ঘটনা আলোচিত হচ্ছে সর্বত্র। আর নিহতদের পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম।

শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) গভীর রাতে সিলেট তামাবিল সড়কে প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে একসঙ্গে চার জন প্রাণ হারান। তারা হলেন— উপজেলার নিজপাট লামাপাড়া গ্রামের জহুরুল মিয়ার ছেলে জুবায়ের আহসান (২৬), নিজপাট তোয়াসী হাটি গ্রামের রনদিপ পালের ছেলে নিহাল পাল (২৫), নিজপাট পানিহারা হাটি গ্রামের আরজু মিয়ার ছেলে মেহেদী হোসেন তমাল (২৪) এবং নিজপাট জাঙ্গালহাটি গ্রামের হারুন মিয়ার ছেলে সুমন আহমদ (২৫)। তারা ছিলেন বন্ধু ও সহপাঠী। করতে ছাত্রলীগের রাজনীতি। 

সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও টিলাগড় গ্রুপের নাজমুল ইসলাম বলয়ের কর্মী ছিলেন তারা। এর মধ্যে নিহাল সিলেট সরকারি কলেজে স্নাতক তৃতীয় বর্ষে এবং মেহেদী হাসান ও আলী হোসেন জৈন্তাপুর ডিগ্রি কলেজে পড়তেন। বাকিরা ছাত্রলীগ করলেও কোনও পদ-পদবিতে ছিলেন না। তারা জৈন্তাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের আসন্ন কমিটিতে বিভিন্ন পদে প্রার্থী ছিলেন।

নিহত ৪ জন একসঙ্গে চলাফেরা করতেন। তারা ভালো বন্ধু ছিলেন। কিছুদিন আগে জুবায়ের আহসান প্রাইভেট কার কিনেন। সে গাড়িতেই শুক্রবার রাতে তারা জৈন্তাপুর থেকে জাফলংয়ের উদ্দেশে রওনা দেন। আর গাড়ি চালাচ্ছিলেন জুবায়ের। সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের বাংলাবাজার এলাকায় পৌঁছালে প্রাইভেট কারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের খালে পড়ে উল্টে যায়। এ সময় প্রাইভেট কারের দরজা খুলে কেউ বের হতে পারেননি। প্রথমে স্থানীয় লোকজন প্রাইভেট কার থেকে তাদের উদ্ধার তৎপরতা চালান। পরে উদ্ধারকাজে যোগ দেন ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের সদস্যরা। এরপর হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

শনিবার বেলা দুইটায় জৈন্তাপুর রাজবাড়ী মাঠে জুবায়ের, সুমন ও তমালের নামাজে জানাজা শেষে নিজ নিজ পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়েছে। ঐদিনই নিজপাটের উজানী নগরে নিহালের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

জৈন্তাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী মনসুর আহমদ বলেন, ২০১৭ সালের পর থেকে জৈন্তাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি নেই। নিহালসহ আমরা দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। কমিটি হলে আমরা কাজে আরও স্পিড পেতাম। আর নিহালও একটি রাজনৈতিক পরিচয় পেতেন।

একসঙ্গে ছাত্রলীগের চার কর্মীর মৃত্যুর সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সর্বমহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুকুজ্জামান রানা ফেসবুকে লিখেছেন, ‍‘এত অল্প বয়সে নিহালের যে সাংগঠনিক যোগ্যতা, দক্ষতা আর মানুষের সাথে আন্তরিকতা ছিল, আমি আমার এই বয়সে আর কাউকে দেখিনি। সে সবসময় পরোপকারী, দক্ষ এবং সংগঠনের জন্য ছিল অত্যন্ত নিবেদিত। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একজন দক্ষ কর্মীকে হারিয়েছে’।

সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম বলেন, নিহত সবাই‌ টিলাগড় গ্রুপের কর্মী ছিলেন। নির্বাচনের কারণে কমিটি দেওয়া হয়নি। ১০/১২ দিনের মধ্যেই জৈন্তাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি হওয়ার কথা ছিল। নিহাল পালের নেতৃস্থানীয় পদে আসার কথা ছিল। অন্যদের মধ্যে তমাল ও সুমনেরও কমিটিতে পদ পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।

জৈন্তাপুর উপজেলা আ.লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল আহমদ বলেন, চার জনের একসঙ্গে মৃত্যু আওয়ামীকর্মীদের মধ্যে নয়, পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এই মৃত্যু মেনে নিতে কষ্ট হয়েছে। পুরো এলাকার মানুষ এখনও তাদের ভুলতে পারেনি। যার জন্য তাদের মৃত্যুর পর হাসপাতালে হামলা কিংবা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। যেটা উচিত না হলেও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে। 

অন্যদিকে, চার তরুণকে উদ্ধার করে জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে সেখানে তাদের ‘চিকিৎসায় অবহেলার’ অভিযোগ এনে ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত দফায় দফায় হাসপাতাল, স্টাফ কোয়ার্টারে ভাঙচুর করে স্থানীয় একদল লোক। এ সময় হাসপাতালে পার্ক করে রাখা সরকারি জিপে আগুন ও অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করা হয়। তবে চিকিৎসায় কোনও অবহেলা করা হয়নি বলে দাবি করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

জৈন্তাপুর থানার ওসি তাজুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় দুই শতাধিক অজ্ঞাতনামা নেতাকর্মীদের আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

ঢাকা/এনএইচ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়