ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

কনকনে শীতে মানবেতর দিন কাটছে ফেনীর শতাধিক জেলে পরিবারের

ফেনী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৩৯, ২২ জানুয়ারি ২০২৪  
কনকনে শীতে মানবেতর দিন কাটছে ফেনীর শতাধিক জেলে পরিবারের

শীতের তীব্রতা বাড়ায় এক সপ্তাহ ধরে সাগরে মাছ আহরণে কোন ট্রলার বা নৌকা ছেড়ে যায়নি। উপার্জনের একমাত্র উৎস মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকা বন্ধ থাকায় মানবেতর দিন কাটছে ফেনীর সোনাগাজী উপকূলীয় অঞ্চলের শতাধিক জেলে পরিবারের।

শীতের তীব্রতা বাড়ায় গত এক সপ্তাহ ধরে সাগরে যেতে পারেনি মাছ ধরার ট্রলার বা নৌকা। জেলেরা বলছেন অতিরিক্ত ঠান্ডা আর সাগরে পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ না পাওয়ায় ১২০ পরিবারের আহারের যোগান ও বিভিন্ন এনজিওর টাকা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই নদীর পাড়ে সারি সারি নৌকা নিয়ে অপেক্ষায় অলস সময় কাটাচ্ছেন জেলেরা। 

সরেজমিনে দেখা যায়, সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের চর খন্দকার এলাকার নদীর পাড়ে সারি সারি নৌকা ও মাছ ধরার ট্রলার দাঁড়িয়ে আছে। তীব্র শীতের কারণে জেলেরা নদীতে মাছ শিকার করতে পারছেন না। ঠান্ডা নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন জেলেরা। এছাড়াও অনেকে বলছেন গত ১৫ দিন ধরে নদীতে জোয়ার নেই। তাই অলস সময়ের পাশাপাশি অনেকে নৌকা মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জেলেরা বলেছেন, ঠান্ডায় নদীতে জাল ফেলা যায় না। তাছাড়া শীতকালে নদীতে তেমন মাছও পাওয়া যায় না।

নরউত্তম জলদাস নামে এক জেলে বলেন, পরিবারে আমিসহ ৫ জন সদস্য । তীব্র শীতে নদীতে জাল ফেলতে পারছি না আর যদিও নদীতে জাল ফেলি তেমন মাছ পাওয়া যায় না। তাছাড়া বছরের ভিতর কখনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কখনো সরকারের পক্ষ থেকে মাছ ধরতে নিষেধ করা হয়। আমরা তা মান্য করে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকি। এভাবে একের পর এক লেগেই থাকে। এখন অপেক্ষা করছি শৈত্য প্রবাহ কেটে গেলে নদীতে জাল ফেলার।

খোকন চন্দ্র জলদাস নামে আরেক জেলে বলেন, পরিবারে সদস্য ৬ জন। আমার উপার্জনে বাচ্চার পড়ালেখা ও পরিবার নির্ভর করে। একটা নৌকা সাগরে নিতে ৫ হাজার টাকা খরচ হয় কিন্তু মাছ পাই তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকার। যার জন্য গত এক সপ্তাহ নদীতে যাইনি। আগামী মাসে শীত না থাকলেও জোয়ার থাকার সম্ভাবনা কম। তাই চোখ মুখে যেন পথই দেখছি না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক জেলে জানান, শীতে সাগরে পানি কমে যাওয়ায় গত ১৫ দিন ধরে জোয়ার আসে না। একদিকে চরের জায়গাগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে আমরা জেলেরা সাগরে ট্রলার নিয়ে গেলেও সময়মতো আসতে পারি না। জোয়ার আসলে তখন আমরা মাছ ধরতে যাই। মাছ ধরা শেষ করে ফেরার সময় আর জোয়ার থাকে না। কারণ চরাঞ্চলে বিভিন্ন স্থানে ভূমিদস্যুরা চর দখল করে বিভিন্ন মৎস্য প্রকল্প করে বাঁধ নির্মাণ করেছে। তাই ট্রলার নিয়ে তীরে আসতে পারি না। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে নদীর গভীরতা নেই। নদীর যে জায়গাগুলো সংকুচিত হয়ে গেছে। সেসব জায়গা দিয়ে জোয়ারের পানি নেমে গেলে আমরা নৌকা ও ট্রলার নিয়ে আসতে পারি না। এতে করে আমাদের আয়-রোজগার অনেক কমে গেছে। পরিবার নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছি।

নদীতে মাছ ধরতে না পারার প্রভাব পড়েছে সোনাগাজীর উপজেলার বাজারগুলোতে। মাছের আড়তগুলোতে মাছ সরবরাহ কমে গেছে। সর্দার প্রিয় লাল জলদাস বলেন, শীতে নদীতে জাল ফেলতে পারছি না; ফলে আড়তগুলোতে নদীর মাছের সরবরাহ কমে গেছে। একারণে মাছের দামও একটু বেশি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, সাধারণত এসময় জেলেদের কষ্টের মধ্যে দিন যাপন করতে হয়। ঠিকমতো নদীতে পানি না থাকায় মাছ ধরতে পারে না। সরকারিভাবে  মানবিক কর্মসূচির আওতায় জেলেদের জন্য ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল, মে এ চার মাসের জন্য ৮০ কেজি চাল বরাদ্দ রয়েছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তাদের এই চালগুলো দেওয়া হবে। আমি নিজে গিয়ে জেলেদের খবর নিয়েছি। আবহাওয়া অনুকূল হলে অবস্থার পরিবর্তন হবে।

জেলা প্রশাসক মুসাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জেলেপাড়ার ২৫০ পরিবারের জন্য কম্বল পাঠানো হয়েছে। এছাড়া জেলেদের জন্য দুই মাসব্যাপী চাল বরাদ্দ রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের নিকট সেগুলো পাঠানো হয়েছে। দু'একদিনের মধ্যে সেগুলো জেলেদের নিকট পৌঁছে দেওয়া হবে।

চরের জায়গা দখলের অভিযোগ নিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, চরের জায়গা দখল নিয়ে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

সাহাব/ফয়সাল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়