ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৯ ১৪৩১

খুলনায় শৈত্যপ্রবাহে কাতর শিশু-বয়স্করা

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২০, ২৩ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৬:২২, ২৩ জানুয়ারি ২০২৪
খুলনায় শৈত্যপ্রবাহে কাতর শিশু-বয়স্করা

খুলনা শিশু হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগের চিকিৎসা নিচ্ছে অসংখ্য শিশু

জেঁকে বসা তীব্র শীতে খুলনায় ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রন্ত বিভিন্ন বয়সী রোগীর চাপ বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে। বিশেষ করে এসময় সবচেয়ে বেশি রোগাক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। এ অবস্থায় ডায়রিয়া রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছেন শতাধিক রোগী।  ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ড না থাকায় রোগীদের মেঝে ও বারান্দায় বিছানা পেতে থাকতে হচ্ছে। 

এদিকে, মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) খুলনায় তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসায় জেলার সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে শিক্ষা দপ্তর। খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ অহিদুল আলম এবং মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ফারহানা নাজ আলাদা বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির উপরে না ওঠা পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতিবারই শীত মৌসুমে ঠান্ডাজনিত নানা রোগ আক্রান্ত হন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। এসময় সবচেয়ে বেশি থাকে শ্বাসতন্ত্রের রোগ। এছাড়াও নিউমোনিয়ার সমস্যা বড় হয়ে ওঠে শিশু ও বয়স্কদের জন্য। ফলে মৃত্যুও হয় অনেক রোগীর। শীতের আবহাওয়া শুষ্ক, ধুলাবালির মাত্রাটাও কিছুটা বেড়ে যায়। এ কারণে স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। তাই শীত মৌসুমে ঠান্ডা খাবার ও পানীয় পরিহার করা, কুসুম গরম পানি পান করা এবং হালকা গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করা উচিত। আর প্রয়োজনমতো গরম কাপড় পরিধান জরুরি। তবে, খুব বেশি জ্বর, গলাব্যথা, কাশি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।

আরো পড়ুন:

উন্নত চিকিৎসা সেবায় দক্ষিণাঞ্চলের ১২ জেলার শিশুদের অন্যতম আশ্রয়স্থল খুলনার ২৫০ শয্যা’র শিশু হাস্পাতাল। কিছুদিন ধরে শীত বেড়ে যাওয়ায় এই হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। স্থান সংকুলানের অভাবে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ নতুন রোগী ভর্তি করতে পারছেন না। সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সেবিকারাও। আবার অতিরিক্ত রোগী আসায় বহির্বিভাগ থেকে সেবা নিয়েও ফিরে যেতে হচ্ছে শিশুদের। এই হাসপাতালে প্রতিদিন ৪০০-৬০০ রোগীকে বহির্বিভাগের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং চিকিৎসকদের সূত্র জানিয়েছে, শীতের সময় ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন রোগীরা চিকিৎসা নেন। শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলো শয্যা সংকটের কারণে অনেককে মেঝে ও বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন। হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে অনেকে বাসাবাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

খুলনা শিশু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বর্হিবিভাগে শিশু রোগী এবং তাদের অভিভাবকের পদচারণায় ফ্লোরে তিল ধারণের ঠাই নেই। প্রতিদিন প্রায় ৬০০ শিশু এই হাসপাতালে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেয়। 

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রূপসা উপজেলার মো. আকরাম হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলের বয়স আড়াই বছর। পাতলা পায়খানা হচ্ছে। নাক দিকে অঝরে পানি ঝরছে। তাই ডাক্তারের কাছে আনছি। ডাক্তার বলেছে, কোল্ড ডায়রিয়া হয়েছে। তবে ভয় নেই।’

খুলনা শিশু হাসপতালে সন্তানকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা বটিয়াঘাটা এলাকার মোসা. আফরোজা খানম বলেন, ‘মেয়েটা বমি করছে। পাতলা পায়খানাও করছে। আস্তে আস্তে কেমন যেন নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। স্থানীয় ডাক্তারের কাছে নিলে হাসপাতালে ভর্তি করতে বলেছেন। তাই হাসপতালে আসলাম। এখানে ডাক্তার দেখেছে। ডাক্তার বলেছে, অতিরিক্ত ঠাণ্ডার জন্য এমন হয়েছে। তবে হাসপাতালে ভর্তির কোনো সিট নেই।’

হাসপাতালের একজন সেবিকা (নার্স) বলেন, আমরা অনেক সময় রোগীর সিট দিতে পারি না, তারপরও চেষ্টা করি শিশুর চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়ার জন্য।

শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এ কে মামুনুর রশীদ বলেন, শীত বাড়ার কারণে শিশুদের ডায়রিয়া এবং শ্বাসকষ্টজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। এসময় শিশুদের প্রতি বিশেষ কেয়ার রাখতে হয় যাতে ঠান্ডা না লাগে। খাবারেও বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। আর কোল্ড ডায়রিয়া হলে স্যালাইন খাওয়াতে হবে। শিশুর কোনো ধরণের সমস্যা মনে হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

খুলনা শিশু হাসপাতালের আরএমও ডা. সৈয়দ ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ঠান্ডা পড়ায় শিশু রোগ বেড়ে গেছে। বিশেষ করে কোল্ড ডায়রিয়া এবং শ্বাসকষ্টজনিত রোগের আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। শিশুদের সর্দি কাশি হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জামাকাপড় পরিস্কার রাখতে হবে। ডাস্ট থেকে দূরে রাখতে হবে শিশুকে। খুলনা শিশু হাসপাতালে ২৭০ জন শিশু রোগি ভর্তি করতে পারি। আমাদের সব সিটে রোগী রয়েছে। ফলে আমরা নতুন করে কোনো রোগী ভর্তি করতে পারছি না। তবে, প্রতিদিন যে সব রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে তাদের সেই সিট খালি হলে সেখানে রোগী ভর্তি করতে পারছি।

খুলনা শিশু হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কামরুজ্জামান বলেন, আউটডোরে প্রতিদিনই প্রায় ৬০০ রোগী থাকে। কোনো কোনো দিন রোগীর সংখ্যা আরও বেশি হয়। সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট জনিত রোগীরা বেশি আসেন।

খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, ‘বর্তমানে এই হাসপাতালে ভর্তি রোগীর ৭০-৮০ ভাগই শীতজনিত কারণে অসুস্থ। তাদের বেশির ভাগই শিশু ও বৃদ্ধ। এই হাসপাতালে এখন দৈনিক ১৫০০-১৬০০ রোগী ভর্তি হচ্ছে। আবার শীতজনিত কারণে মারা গেলেও পরিসংখ্যান ওইভাবে করা সম্ভব হয় না। কারণ, শীতের কারণেই রোগীর অ্যাজমা সমস্যা বাড়ে, কাশি বাড়ে, জ্বর থেকে নিউমোনিয়া হয়।’

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়