ঢাকা     সোমবার   ০৮ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২৪ ১৪৩১

খুলনায় মাটি ফেলে ময়ূর নদী ভরাটের অভিযোগ 

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১২, ২৪ জানুয়ারি ২০২৪  
খুলনায় মাটি ফেলে ময়ূর নদী ভরাটের অভিযোগ 

শহরতলীর সঙ্গে নগরকে যুক্ত করা খুলনার গল্লামারিতে নির্মিতব্য ঝুলন্ত সেতু’র খননের মাটি ফেলে ময়ূর নদী ভরাটের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এর ফলে নদীর পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে আশপাশের এলাকায়। ঠিকাদারের এমন কর্মকাণ্ডের প্রতিকার চেয়ে সড়ক বিভাগকে চিঠি দিয়েছে খোদ সিটি করপোরেশন।

এদিকে, সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে মাটি ফেলে নদী ভরাটকে ‘গলা টিপে নদী হত্যা’ বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশবাদীরা। 

ময়ূর নদীর গল্লামারি পয়েন্টে আগে নির্মিত দুটি পুরাতন সেতু ভেঙ্গে সম্প্রতি ঢাকার হাতিরঝিলের আদলে ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এটি খুলনার প্রথম ঝুলন্ত সেতু।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা মহানগরীর প্রবেশ পথ গল্লামারীতে ময়ূর নদীর ওপর পাকিস্তান আমলে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। এই ব্রিজের মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে ২০১৫ সালে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও একটি নতুন ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু, নদীর উপরিভাগে ব্রিজটির উচ্চতা কম থাকায় নদী দিয়ে কোনো নৌযান চলাচল করতে পারে না। উচ্চতা কম থাকায় সেসময় ব্রিজটির নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে সিটি করপোরেশন থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু, সড়ক ও জনপথ বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ আনে। পরবর্তীতে সিটি করপোরেশন সেই চিঠি প্রত্যাহার করে নেয় বলে নিশ্চিত করেছেন কেসিসি’র প্রধান প্লানিং আফিসার আবির-উল-জব্বার।

পরবর্তীতে গল্লামারিতে নির্মিত দ্বিতীয় ব্রিজটি চালু হলে সব মহল থেকে আপত্তি করা হয়। এরপর আবার একই স্থানে নতুন করে ব্রিজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। তবে, দুটি সেতুর পিলারের কারণে নদীর পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় নতুন করে পিলার ছাড়া দৃষ্টি-নন্দন ঝুলন্ত ব্রিজ নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করা হয় গত বছরের ১ অক্টোবর। প্রায় ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৮ দশমিক ৭০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৩ দশমিক ৭০ মিটার প্রস্থ এই ঝুলন্ত ব্রিজ নির্মাণের ঠিকাদার ‘ন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড’। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্যয় সংকোচনের জন্য নদীর ভেতর মাটি ফেলতে শুরু করে। ফলে নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।  

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ম্যানেজার মো. আব্দুল করিম জুয়েল বলেন, দুটি ব্রিজ ভাঙ্গার জন্য তারা মাটি দিয়ে নদীর অংশ ভরাট করছেন। তিনি স্বীকার করেন নদী ভরাট করে প্রবাহ বন্ধ করায় খুলনা সিটি করপোরশেনের নির্বাহী  প্রকৌশলী ‘ক অঞ্চল’ পত্র দিয়ে জানিয়েছেন নদীর পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হওয়ায় পাশ্ববর্তী ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের অভ্যন্তরে পানি প্রবেশ করেছে। এ কারণে নদীর পানি প্রবাহ সচল রাখতে পত্র দিয়েছেন। এই পত্রের পর তারা পাইপ দিয়ে পানি সরানোর কথা ঠিকাদারকে জানিয়েছেন।

একই কথা বলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা জালাল উদ্দিন। তিনি বলেন, পুরাতন পিলার ভাঙার জন্য তারা এই মাটি দিয়ে ভরাট কাজ করছেন। তবে, এই নদী ভরাট ওয়ার্ক অর্ডারে নেই- এমন কথা জানালে তিনি কোনো জবাব দেননি।

নদী শাসনের নামে মাটি ফেলে ভরাট করাকে ‘গলা টিপে নদী-হত্যা’ বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশবিদ ও নাগরিক নেতা অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার। তিনি বলেন, ময়ূর নদী খুলনা মহানগরীর প্রাণ। পানি প্রবাহ সচল রাখতে শত শত কোটি টাকা দিয়ে যেখানে ময়ূর নদী খনন করা হচ্ছে, সেখানে ঠিকাদারের অর্থ বাচাঁতে মাটি দিয়ে ভরাট করে নদীকে গলা টিপে হত্যা করছে।

খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, নতুন ব্রিজের ভীত নির্মাণের জন্য সাময়িক নদী ভরাট করা হয়েছে। নদীর পানি প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য পাইপ দেওয়া হবে। 

নদীর পানি পাইপ দিয়ে সরানো সম্ভব কিনা? এমন প্রশ্ন করলে তিনি নিরব থাকেন। এছাড়া ওয়ার্ক অর্ডারে এই নদী ভরাট করার বিষয় নেই বলেও স্বীকার করেন তিনি।

ময়ূর নদী দিয়ে মহানগরী খুলনার বৃষ্টিপাতের পানিসহ সব ড্রেনের পানি নির্গত হয়। এ কারণে এই নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতে খনন করতে ইতোমধ্যে খুলনা সিটি করপোরেশন ৩০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করেছে। সেখানে মাটি দিয়ে নদী ভরাট করায় সিটি করপোরেশনসহ এলাকাবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

নূরুজ্জামান/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়