ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

লক্ষ্মীপুরে ৫০৯ হেক্টরের বেশি জমিতে বোরো আবাদ হচ্ছে

জাহাঙ্গীর লিটন, লক্ষ্মীপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১০, ২৬ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ২১:০০, ২৬ জানুয়ারি ২০২৪
লক্ষ্মীপুরে ৫০৯ হেক্টরের বেশি জমিতে বোরো আবাদ হচ্ছে

বর্তমান খরিপ মৌসুমে লক্ষ্মীপুর জেলার পাঁচটি উপজেলার কৃষকেরা বোরো ধান চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শৈত্যপ্রবাহ ও কনকনে শীত উপেক্ষা করেই ভোলা এবং রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কয়েক শ’ শ্রমিকের সাহায্যে স্থানীয় কৃষকরা করছেন ধান রোপণের কাজ। 

জেলায় এবার খরিপ মৌসুমে ৩৫ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বিনা জাতের বোরো ধান চাষ করার লক্ষ্যে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। চাষকৃত জমির পরিমাণ গত বছরের তুলনায় ৫০৯ হেক্টর বেশি। এবার ১ লাখ ৫৪ হাজার ১৫৯ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। গত বছর লক্ষ্মীপুর জেলায় ৩৪ হাজার ৭৯১ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ৫১ হাজার ৩৭৩ মেট্রিক টন ধান।

লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. জাকির হোসেন বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং যথাযথভাবে সেচ, সার ও কীটনাশক দেওয়া গেলে জেলায় এবার ১ লাখ ৫৪ হাজার ১৫৯ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে। গত বছরের তুলনায় এবার ২ হাজার ৭৮৬ মেট্রিক টন ধান বেশি উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, এবার জেলায় হাইব্রিড জাতের বোরো ধানের চাষ হচ্ছে ১৬ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধান ৪ দশমিক ৮২ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ৪ দশমিক ৮০ মেট্রিক টন হাইব্রিড ধান। এবার জেলায় এই ধান উৎপাদন হবে ৮০ হাজার ৫৪২ মেট্রিক টন। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ৭৮ হাজার ৭৬৮ মেট্রিক টন। এছাড়া, উফশী জাতের ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টর জমিতে ৩ দশমিক ৯৬ মেট্রিকটন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে এবার জেলায় ৭৩ হাজার ৬১৬ মেট্রিক টন উফশী জাতের ধান উৎপাদিত হবে। গত বছর এ জেলায় প্রতি হেক্টরে উফশী জাতের ধান উৎপাদন হয়েছিল ৩ দশমিক ৯৫ মেট্রিক টন হারে ৭২ হাজার ৬০৫ মেট্রিক টন।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ধান উৎপাদন বাড়াতে এবার জেলার কৃষকদের মধ্যে ধানের বীজ ও সার বিতরণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেচ পাম্প ও গভীর নলকূপগুলোতে আগে থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সঠিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে জেলার ৭০ ভাগ জমিতে বোরো ধান চাষ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি জানুয়ারি মাসের মধ্যেই কৃষকরা তাদের জমিতে ধান চাষ সম্পন্ন করতে পারবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা কেন্দ্রীয় সমিতির চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ জানান, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বোরো চাষ হয়ে থাকে লক্ষ্মীপুর ও রামগঞ্জ উপজেলায়। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা কেন্দ্রীয় সমিতির অধীনে নিবন্ধিত ৩০০ কৃষি সমিতি রয়েছে। কেন্দ্রীয় সমিতির অধীনে বর্তমানে ৯টি গভীর নলকূপ রয়েছে। প্রতিটি নলকূপ সমিতির মধ্যস্থতায় এবার আগেভাগেই চালু করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সমিতির পক্ষ থেকে কৃষকদের ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কংশ নারায়ণপুর কৃষি সমবায় সমিতির সভাপতি মো. সামছুল ইসলাম বলেন, দেশে ধান-চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা এবার অন্য বছরের তুলনায় বোরো চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তার সমিতির অধীনে থাকা নলকূপগুলো যথা সময়ে চালু করায় কৃষকদের ধান চাষ শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

সদর উপজেলার দাউদপুর গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, তিনি এবার দেড় একর জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কেজি প্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা বেশি দাম দিয়ে সার কিনতে হচ্ছে। সারের দাম বেশি হওয়ায় ইচ্ছে থাকার পরও তিনি খরচের কথা বিবেচনা করে চাষ বৃদ্ধি করতে পারেননি। তিনি সরকার নির্ধারিত মূল্যে যেন কৃষকরা সার কিনতে পারেন সে জন্য কৃষি কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ করেন।

সদর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন ও দাউদপুর গ্রামের মো. ইউছুফ বলেন, ধান চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা এবার লাভবান হবেন।  কৃষকদের কথা বিবেচনা করে সরকার যেন সারের দাম কমায় এবং কৃষকরা যেন সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার পান সে ব্যবস্থা নিতে কৃষি বিভাগের প্রতি অনুরোধ
জানান।

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়