ঢাকা     সোমবার   ০৮ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২৪ ১৪৩১

লক্ষ্মীপুরে ৪২৫২৫ হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৩২, ২৮ জানুয়ারি ২০২৪  
লক্ষ্মীপুরে ৪২৫২৫ হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা

লক্ষ্মীপুরে ৪২ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এর ফলে, চলতি মৌসুমে তেল বীজটির উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৮০ হাজার ৭৯৮ টন। কৃষকরা বলছেন, উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলোচ্ছ্বাস ও অতিবৃষ্টির কারণে ফসল হানি ঘটে। তবে, ২০২২-২৩ বিপণন বছরে সয়াবিনের ভালো ফলন এসেছে। গত মৌসুমে ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় এবারো সয়াবিন আবাদে আগ্রহী হয়েছেন তারা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ বিপণন বছরে ৪১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে ৮৩ হাজার ২০০ টন সয়াবিন উৎপাদন হয়েছে। এর আগে, ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৭২ হাজার ২০০ টন। উচ্চফলনশীল নতুন জাতের বিইউ-১, বিইউ-২, বারি-৫ ও ৬, বিনা-৫ ও ৬ জাতের সয়াবিন চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন কৃষকরা। বিদায়ী মৌসুমে ৬০০ কোটি টাকার বেশি সয়াবিনে বাণিজ্য করেছেন কৃষকরা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তেল বীজটির উৎপাদন আরো বাড়াতে কৃষি বিভাগ মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বছরে দুইবার সয়াবিন উৎপাদন করেন লক্ষ্মীপুরের চাষিরা। প্রথমবার আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি সয়াবিন বীজ আবাদ করা হয়, যা খরিপ-২ মৌসুম নামে পরিচিত। দ্বিতীয়বার পৌষ মাসের মাঝামাঝি থেকে মাঘ মাসের শুরুর দিকে কৃষকরা রবি শস্য হিসেবে সয়াবিনের আবাদ করেন। জেলার রায়পুর উপজেলার টুনুর চর, চর ঘাষিয়া, চর কাচিয়া, কানিবগার চরে সয়াবিন বীজ উৎপাদন করা হয়। এখানকার বীজ উন্নত মানের হওয়ায় অন্যান্য জেলার কৃষকরাও এখানে বীজ কিনতে আসেন।

খরিপ-২ মৌসুমে প্রায় ৪ হাজার টন সয়াবিন বীজ উৎপাদন হয়। যার টন প্রতি আনুমানিক বাজার মূল্য ২ লাখ টাকা। এ হিসাবে চার হাজার টন সয়াবিন বীজ থেকে স্থানীয় বাজারেই লেনদেন হয় প্রায় ৮০ কোটি টাকা। আর রবি মৌসুমে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিন চাষ হয়। এই মৌসুমে প্রতি মণে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পান কৃষকরা। জেলাজুড়ে সয়াবিন লেনদেন হয় প্রায় ৬০০ কোটি টাকার।

কমলনগর হাজিরহাট এলাকার সয়াবিন চাষি নুর উদ্দিন বলেন, ‘সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া’ নামে একটি সংস্থার সহায়তায় ‘নারিশ’, ‘আফতাব’ ও ‘এগ্রিগেইট’সহ বিভিন্ন ফিডস মিল কোম্পানি খেত থেকেই উৎপাদিত সয়াবিন আগাম কিনে নেয়। এ কারণে আমরা ভালো দাম পাচ্ছি। আর বঙ্গবন্ধু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কয়েকজন গবেষক মাঠ পর্যায়ে উন্নত জাতের বিইউ-২, ৩, ৪ জাতের সয়াবিন বীজ বিনামূল্যে সরবরাহ করেছেন। কৃষি কর্মকর্তারা আমাদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিচ্ছেন। 

তিনি আরও বলেন, ধান কাটার পর পরই সয়াবিন চাষের জন্য খেত তৈরি করবো। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. জাকির হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, লক্ষ্মীপুরের পাঁচ উপজেলার মধ্যে রায়পুর, রামগতি, কমলনগর ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় বেশি পরিমাণে সয়াবিন আবাদ হয়। বর্তমানে জলাবদ্ধতাসহিষ্ণু সয়াবিন উৎপাদনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ড. খালেদ কমলনগর উপজেলায় কিছু নতুন জাতের সয়াবিন ট্রায়েল ফলক বসিয়েছেন। সেই বীজের ফলাফল ভালো পেয়েছি। 

১৯৮২ সালে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার হায়দারগঞ্জে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে সয়াবিনের চাষ করে মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি (এমসিসি) নামে একটি সংস্থা। উৎপাদন উপযোগী উর্বর মাটি ও অনুকূল আবহাওয়ায় প্রথমবারেই বেশ সাফল্য আসে। দেশে মোট উৎপাদিত সয়াবিনের ৮০ শতাংশই আসে লক্ষ্মীপুর থেকে। উৎপাদিত সয়াবিন পোলট্রি খাদ্য, ফিশ ফিড, সয়া নাগেট, সয়াবিস্কুট, সয়ামিট, সাবান, সয়াদুধ, শিশু খাদ্যসহ ৬১টি ধরনের পুষ্টিকর খাদ্য ও পণ্য তৈরিতে ব্যবহার হয় বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

জাহাঙ্গীর/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়