ঢাকা     শনিবার   ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২০ ১৪৩১

গোপালগঞ্জে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো ‘জ্ঞানের আলো পাঠাগার’

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৬, ২৯ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১১:৫৬, ২৯ জানুয়ারি ২০২৪
গোপালগঞ্জে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো ‘জ্ঞানের আলো পাঠাগার’

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার হিজলবাড়ি গ্রামের সুধির বাড়ৈ ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। একবেলা খাবার জুটলেও অন্যবেলা খাবার জুটতো না।

অসহায় এই পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছে কোটালীপাড়ার মানবিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘জ্ঞানের আলো পাঠাগার’। তারা ফেসবুকের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে এই পরিবারটিকে মুদি মালামালসহ একটি চায়ের দোকান স্থাপন করে দিয়ে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

রোববার (২৮ জানুয়ারি) উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের হিজলবাড়ি গ্রামে নির্মিত দোকান ঘরটি উদ্বোধন করেন কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিম উদ্দিন।

এ সময় কলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট বিজন বিশ্বাস, প্রেসক্লাব কোটালীপাড়ার সভাপতি মিজানুর রহমান বুলু, সাংবাদিক এইচ এম মেহেদী হাসানাত, সুজিত মৃধা, সুমন বালা, জ্ঞানের আলো পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সাংবাদিক মনিরুজ্জামান শেখ জুয়েল, সভাপতি সুশান্ত মন্ডল, সহ সভাপতি সুশান্ত বর্ণিক, সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান পারভেজ, ইউপি সদস্য মনোজ বৈদ্য সহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, হিজলবাড়ি গ্রামের মৃত সুনীল চন্দ্র বাড়ৈর ছেলে সুধীর বাড়ৈ শারীরিক প্রতিবন্ধী। ঠিকমতো উপার্জন করতে না পারায় বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও ৩ সন্তান নিয়ে সুধীর অসহায় জীবনযাপন করছিলেন। পাশাপশি রয়েছে দুই সন্তানের লেখাপড়ার খরচ। এ অবস্থায় দিশেহারা সুধীরের পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে এগিয়ে আসে ‘জ্ঞানের আলো পাঠাগার’।

সুধীর বাড়ৈ বলেন, চিকিৎসার জন্য অনেক আগেই বন্ধক রেখেছি পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া জমি। এনজিও থেকে ঋণ নিয়েও চিকিৎসা করিয়েছি। এনজিওর কিস্তির টাকা, পরিবারের ভরণপোষনের খরচ, ২ সন্তানের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে দিশেহারা হয়ে পড়ি। শারীরিক কারণে ঠিকমত কাজও করতে পারি না। বউকে নিয়ে অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করে যা পাই তা দিয়ে এনজিওর ঋণের কিস্তি দিয়ে ১ বেলা খেতে পারলেও পরিবারের সবাইকে আরেক বেলা না খেয়ে থাকতে হতো। জ্ঞানের আলো পাঠাগারের দেওয়া এই চায়ের দোকানটি আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিবে। এটা আমার বেঁচে থাকার জন্য একটি অবলম্বন।

‘জ্ঞানের আলো পাঠাগার’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মনিরুজ্জামান শেখ জুয়েল বলেন, সুধীর বাড়ৈর পরিবারটি চরম অসহায়ত্বের মাঝে জীবনযাপন করছিলো। বিষয়টি জেনে আমরা উদ্যোগ নেই পরিবারটির জন্য কিছু একটা করার। ওই পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে একটি মুদি ও চায়ের দোকান দেওয়ার উদ্যোগ নেই। ‘জ্ঞানের আলো পাঠাগার’র ফেসবুক আইডি থেকে সহায়তা চাওয়া হয় এই পরিবারটিকে একটি দোকানঘর করে দেওয়ার জন্য। বিভিন্ন মানবিক ব্যক্তি এগিয়ে আসেন। সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় আন্তর্জাতিক সংস্থা এসএফআইও। সংগ্রহ হয় ৪০ হাজার টাকা। সেই টাকা দিয়ে সুধীর বাড়ৈর পরিবারকে স্বাবলম্বী করার জন্য দোকানঘর নির্মাণ করে মালামাল তুলে দেওয়া হয়। তবে এই দোকানের উপরে নির্ভর করে ৬ সদস্যের পরিবারকে চলতে হলেও আরো কিছু মালামাল প্রয়োজন।

কলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট বিজন হালদার বলেন, সুধীর বাড়ৈর পরিবারটি সত্যিই খুব অভাব-অনটনের মধ্যে দিয়ে দিনযাপন করছিলো। সরকারিভাবে সুধীর বাড়ৈকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া হয়েছে। যা সামান্য আয় করে তা দিয়ে পুরো পরিবারের খরচ মিটতো না। জ্ঞানের আলো পাঠাগারের এই উদ্যোগের ফলে আশাকরি সুধীর বাড়ৈ তার পরিবার নিয়ে ৩ বেলা খেয়ে পরে বাঁচতে পারবে।

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিম উদ্দিন বলেন, ‘জ্ঞানের আলো পাঠাগার’ শিক্ষামূলক নানা কর্মকাণ্ডসহ সব সময় অসহায়-দরিদ্র মানুষের কল্যাণে কাজ করে আসছে। এরই অংশ হিসেবে আজ সুধীর বাড়ৈর পরিবারকে স্বাবলম্বীকরণে দোকানঘর নির্মাণ করে দিয়ে জ্ঞানের আলো পাঠাগার মানবতার এক অনন্য উদাহরণ তৈরি করেছে। তাদের এ ধরনের কর্মকান্ড অব্যাহত থাকলে উপজেলা প্রশাসনও তাদের সাথে থাকবে।

বাদল/টিপু


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়