ঢাকা     সোমবার   ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৮ ১৪৩১

ছয় বছরে ঠাকুরগাঁওয়ে কমেছে গমের আবাদ

মঈনুদ্দীন তালুকদার হিমেল, ঠাকুরগাঁও  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৭, ৩১ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৬:২৩, ৩১ জানুয়ারি ২০২৪
ছয় বছরে ঠাকুরগাঁওয়ে কমেছে গমের আবাদ

মাটি ও আবহাওয়া ভালো থাকায় ঠাকুরগাঁওয়ে গমের আবাদ ভালো হয়। সারা দেশের পাঁচ ভাগের এক ভাগ গম উৎপাদন হতো উত্তরের এই জেলায়। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে এই গম রপ্তানি হতো দেশের অন্য জেলাগুলোতেও। কিন্তু, গত কয়েক বছর ধরে ঠাকুরগাঁওয়ে আবাদ কমতে শুরু করেছে গমের। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যমতে, গত ৬ বছরের গম চাষের হিসাব বিশ্লেষণ করলে অনুমান করা যায়, ধীরে ধীরে এই ফসলটির আবাদ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছেন চাষিরা।

হিসাব বলছে, ২০১৬-১৭ মৌসুমে ঠাকুরগাঁও জেলায় গম চাষ হয়েছিল ৬৭ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে। ২০১৭-১৮ মৌসুমে তা কমে দাঁড়ায় ৬১ হাজার হেক্টর। ২০১৮-১৯ মৌসুমে ৫০ হাজার ২২০ হেক্টর, ২০১৯-২০ মৌসুমে ৫০ হাজার ৬৫০ হেক্টর, ২০২০-২১ মৌসুমে ৪৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর, ২০২১-২২ মৌসুমে ৪৫ হাজার ১৯২ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছিল। সর্বশেষ ২০২২-২৩ মৌসুমে আবাদ আরও কমেছে। গম চাষ হয়েছে ৩১ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। জেলায় ৪৪ হাজার ৬৯৯ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। 

কেন গম চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কৃষকরা এমন প্রশ্নে মিরাজুল, সাদেকুল ও শাহীন ইসলাম নামের কয়েকজন কৃষক রাইজিংবিডিকে বলেছেন, গমের চেয়ে ভুট্টা ও আলু বেশি উৎপাদন হয়। আবাদ ভালো হওয়ায় অনেক কৃষক সরিষা চাষে ঝুঁকছেন। এছাড়া, বীজ সংকট, বীজ পেতে ভোগান্তি, সিন্ডিকেট এবং সরকারের নির্ধারিত দামে বীজ না পাওয়ার কারণেও গম চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলে কৃষকদের কথায় উঠে আসে। 

আরো পড়ুন:

সদর উপজেলার নারগুন গ্রামের কৃষক হোসেন আলী বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে গম উৎপাদন খরচ হয় প্রায় ১০ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি ৩০ মণের বেশি গম পাওয়া যায় না। এতে লাভ কম হয়। তাই আলু উত্তোলনের পর পরই আগাম ভুট্টা চাষ করেছি। ভুট্টাতে একই খরচে বেশি ফলন পাওয়া যায় এবং দামও পাই।’

রাণীশংকৈলের রাতোর এলাকার কৃষক আফজাল আলী বলেন, ‘যেসব জমি আগে গমে ভরে থাকতো সেসব জমিতে এখন ভুট্টাসহ অন্য ফসল ফলাচ্ছেন কৃষকরা। আমি এ বছর ৫ বিঘা জমিতে গম আবাদ করছি।  বীজ কিনতে যে ভোগান্তিতে পড়েছি আগামী বছর আর গম চাষের ইচ্ছে হবে না। সরকার গম বীজের মূল্য নির্ধারণ করেছিল ৫৮ টাকা। কিন্তু সেই বীজ আমাকে ডিলারদের কাছে কিনতে হয়েছে ৭৯-৭৫ টাকায়। তারপরেও বীজ পেতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। সহজভাবে বলেলে আমরা কৃষকরা কোনো কিছুই পাই না।’

ঠাকুরগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইন্সটিটিউট-এর সহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সামছুল ইসলাম মনে করেন, একজন কৃষক আলু উত্তোলণ করেই জমিতে গম চাষ করতে পারেন। গম কাটাইয়ের পর ভুট্টা চাষ করতে পারেন এবং একই জমিতে বোরো ধান চাষ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে একজন কৃষক বেশি লাভবান হতে পারেন। আমরা কৃষকদের এ কথা বোঝানোর চেষ্টা করছি এবং বীজ উৎপাদনে তাদের সহযোগিতা করছি। তারা যেন নিজেরাই নিজেদের বীজ উৎপাদন করতে পারেন।

বিএডিসি কার্যালয়ের বীজ বিক্রয় ও বিতরণ কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, জেলাতে বিএডিসির ১৬১ জন বীজ পরিবেশক রয়েছেন। যাদের এ বছর ৫৫৭ টন বীজ বরাদ্দসহ বিএডিসির বুথ থেকে ৪০ টন বীজ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কৃষি অফিসের গম চাষের জমির লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বীজের চাহিদা হেক্টর প্রতি ১২০ কেজি। যা ৫ হাজার ৩৬৪ টন। যে বীজ পাওয়া গেছে তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম।

এদিকে, গমের চাষ ধীরে ধীরে কমে যাওয়ার কারণে খাদ্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির শঙ্কা দেখছেন বিশ্লেষকগণ। তারা বলছেন, গমের চাষ কমে গেলে দেশকে গমে আমদানি নির্ভর হয়ে যেতে হবে। ফলে খাদ্য পণ্যের দাম বাড়বে। ভুট্টা থেকে বেশিরভাগ গবাদি পশুর খাদ্য উৎপাদন হয় আর গম থেকে মানুষের খাদ্য উৎপাদন হয়। তাই গম চাষে চাষিদের প্রণোদনাসহ এই ফসলটির আবাদ বৃদ্ধিতে নানাবিধ উদ্যোগ নেওয়া জরুরি মনে করেন তারা।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বছরে এ জেলায় গমের চাহিদা ৪ হাজার ৮০০ টন। গত বছর প্রতি কেজি গম সরকার ২৮ টাকা দর নির্ধারণ করেন। এ দরে কৃষকদের অনীহার কারণে গম কিনতে পারেননি তারা। মাত্র ৪ টন গম কিনেছিলেন। সে সময় বাজারে গমের দর ছিল ৪২ টাকা। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, গমের চাষ কমেছে ঠাকুরগাঁওয়ে। যেসব জমিতে গম উৎপাদন হতো সেখানে এখন সরিষা ও ভুট্টার চাষ হচ্ছে। জমি ফাঁকা নেই। সরিষার পরে কৃষকরা বোরো ধান আবাদ করবেন। কৃষকরা তাদের জমি ফাঁকা রাখছেন না। কৃষকরা তাদের জমিতে যে ফসলের আবাদই করুক না কেন আমাদের সহযোগিতা থাকবে।

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়