ঢাকা     রোববার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৮ ১৪৩১

ইউপি সদস্যের বেয়াই বাড়ির রাস্তা করতে জমি দখলের অভিযোগ

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৩, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৬:৪৪, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
ইউপি সদস্যের বেয়াই বাড়ির রাস্তা করতে জমি দখলের অভিযোগ

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্যের বেয়াই বাড়ির রাস্তা করতে জোরপূর্বক জমি দখল করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইউপি চেয়ারম্যানও এই দখলদারিত্বের পক্ষে থাকায় অসহায় হয়ে পড়েছে ভুক্তভোগী পরিবারটি। জমি দখল করে রাস্তায় করতে বাধা দেওয়ায় চেয়ারম্যানের সামনে এই পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে।

ভুক্তভোগী ব্যক্তির নাম আবদুস সালাম। গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের বারীনগর গ্রামের বাসিন্দা তিনি। তার বসতভিটার একাংশ দখল করে রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে বাধা দিতে গেলে চর আষাড়িয়াদহ ইউপির চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলামের সামনেই পরিবারটির ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে আবদুস সালামের ভাই আবু হাসান (৩৫), আবদুল মমিন (৪০), ভাতিজা মো. রাকিব (১০), আবদুস সাত্তার (১১) ও প্রতিবেশী আতাউর রহমান (৬০) আহত হন। এদের মধ্যে আবু হাসান ও আতাউর রহমানকে উপজেলা (প্রেমতলী) স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।

এদিকে, ঘটনার পর আবদুস সালাম মামলা করতে থানায় গেলেও মামলা নেওয়া হয়নি। তবে, পুলিশ একটি সাধাারণ ডায়েরি (জিডি) গ্রহণ করেছে। জিডিতে চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য তোজাম্মেল হকসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

ভ্ক্তুভোগী আবদুস সালাম বলেন, বারীনগর গ্রামে তার ১ একর ৯ শতক বসতভিটা রয়েছে। তার বাড়ির পশ্চিম দিকে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য তোজাম্মেল হকের বেয়াই মইদুল ইসলামের বাড়ি। মইদুলের বাড়ি যাতায়াতের জন্য অন্যদিক দিয়ে রাস্তা আছে। তবে যাতায়াত সহজ করার জন্য ওয়ার্ড সদস্য তোজাম্মেল হক তার বসতভিটার ওপর দিয়ে আরেকটি রাস্তা করছেন। চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলামের সহায়তায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে ৫৫০ মিটার ইটবিছানো একটি রাস্তার প্রকল্পও পাস করিয়ে এনেছেন।

সালামের দাবি, তার বসতবাড়ির সামনের অংশে প্রায় ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্যে এবং ১৫ ফুট প্রস্থের জমি রাস্তার জন্য দখল করা হচ্ছে। এর আগে একবার রাস্তা করার উদ্যোগ নেওয়া হলে তিনি আদালতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করেছিলেন। গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর মামলা করা হয়। এরপর ২০ নভেম্বর আদালত এই রাস্তা নির্মাণের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু কয়েকদিন আগে আবার রাস্তা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যান ও মেম্বার গ্রামপুলিশ এবং ঠিকাদারদের শ্রমিকদের নিয়ে গিয়ে তাদের বাড়ির বেড়া ভাঙতে শুরু করেন। এতে বাধা দিতে গেলে ইউপি সদস্য তোজাম্মেল হকের বেয়াই মইদুল ইসলামের লোকজন পাঁচজনকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন। পরে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর তিনি থানায় গেলে মামলা নেওয়া হয়নি। শুধু একটি জিডি নেওয়া হয়েছে।

আবদুস সালাম বলেন, ‘এই গ্রামের লোকজনের চলাচলের জন্য রাস্তা আছে। এরপরও বেয়াই বাড়ির চাওয়া পূরণ করতে আলাদা আরেকটা রাস্তা করতে চাচ্ছেন ইউপি সদস্য তোজাম্মেল হক। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি।’ তিনি বসতভিটা রক্ষায় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

জানতে চাইলে ইউপি সদস্য তোজাম্মেল হক বলেন, ‘শুধু বেয়াই বাড়ির উপকার হবে এমনটা না। রাস্তাটা হলে গ্রামের সব মানুষের উপকার হবে। সালামের বাড়ির বিপরীত পাশের বাড়িটি একেবারে রাস্তা লাগোয়া। তাই ওই বাড়ি ভেঙে রাস্তার জন্য জমি নেওয়া যাচ্ছে না। সালামের বাড়ির সামনে ফাঁকা আছে। তাই ১২ ফুট করে জায়গা লম্বালম্বিভাবে নিতে চাচ্ছি।’

একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যানের সামনেই পরিবারটির ওপর লাঠি নিয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘মারামারি না, একটু ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। আমরা বলেছি, জায়গার দাম দিয়ে দেওয়া হবে। তারপরও সালাম রাজি না। এলাকার মানুষের উপকারের কথা চিন্তা করেই রাস্তাটা করতে চাই।’

অন্যের জমির ওপর দিয়ে রাস্তার প্রকল্প দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা বিপুল কুমার বলেন, ‘রাস্তা করার আগে তো আমরা মাপজোখ করে এনেছি। তখন কেউ আমাদের কাছে আপত্তি করেননি। এখনও কারও আপত্তি থাকলে আমাদের কাছে আসতে পারেন। কাজ বন্ধ রেখে আমরা বিষয়টি দেখব। কেউ না চাইলে তার জমি দিয়ে রাস্তা হবে না।’

কেয়া/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়