‘বুকের ধনকে বাঁচাতে গিয়ে ওরা তিনজনই ট্রেনে কাটা পড়ল’
নাটোর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
স্বামী-সন্তানকে চোখের সামনে ট্রেনে কাটা পড়ার দৃশ্য ভুলতে পারছেন না উর্মি খাতুন
নাটোরে বড়াইগ্রাম উপজেলার রতন প্রামাণিক স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে বাস করে যাচ্ছিলেন ঢাকায়। পথে বাস বিকল হলে চার বছরের সানিকে প্রসাব করাতে সড়কের পাশের রেললাইনের দিকে যান রতন।বাসের ভেতর থেকে জানালা দিয়ে সেদিকেই তাকিয়েছিলেন ঊর্মি খাতুন। হঠাৎ লাইনে ট্রেন চলে এলে তাতে কাটা পড়ে মারা যান রতন-সানিসহ তিনজন। এই দৃশ্য কিছুতেই ভুলতে পারছেন না নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জোনাইল ইউনিয়নের আদগ্রামের বাসিন্দা উর্মি খাতুন।
আহাজারি করতে করতে উর্মি খাতুন শুধুই বলছিলেন, ‘চোখের সামনেই আমার বুকের ধনকে (শিশুসন্তান) বাঁচাতে গিয়ে ওরা তিনজনই ট্রেনে কাটা পড়ল। আমি এ দৃশ্য ভুলতে পারছি না। আমি এখন কী নিয়ে বাঁচব?’ ঊর্মির এমন আর্তনাদে চোখ ভিজে উঠছে আশপাশের মানুষেরও।
আরও পড়ুন: টাঙ্গাইলে ট্রেনে কাটা পড়ে শিশুসহ নিহত ৩
টাঙ্গাইলের আনালিয়াবাড়ি এলাকায় গতকাল শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ট্রেনে কাটা পড়ে রতন প্রামাণিক (২৮), তার ছেলে মো. সানি (৪) ও সহযাত্রী শরিফ মণ্ডল (৪০) মারা যান। নিহত শরিফ মণ্ডল রাজশাহীর বেলপুকুর থানার মাহিন্দ্রা গ্রামের আলম মণ্ডলের ছেলে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ঢাকাগামী বাসটি আনালিয়াবাড়ি এলাকায় থেমে ছিল।
রতন প্রমাণিক ও তার সন্তান সানি
আজ শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে আদগ্রামে রতন প্রামাণিকের বাড়িতে লাশ দেখতে ভিড় করেন শত শত মানুষ। ট্রেনে কেটে বিকৃত হওয়ায় আগত কাউকেই বাবা-ছেলের লাশ দেখানো হচ্ছিল না। কাফনের কাপড়ে ঢেকে পাশাপাশি রাখা ছিল লাশ দুটি। অসময়ে বাবা–ছেলের মর্মান্তিক মৃত্যুতে শুধু পরিবারই নয়, আশপাশের মানুষের মধ্যেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সকাল ১১টার দিকে জানাজা শেষে মরদেহ দুটি দাফন করা হয়।
নিহত রতন প্রমাণিকের পারিবার সূত্রে জানা গেছে, উচ্চমাধ্যমিক পড়া শেষ করে রতন কিছুদিন ছাত্রলীগের রাজনীতি করেন। একই সঙ্গে চাকরির জন্যও চেষ্টা করছিলেন। কয়েকদিন আগে ঢাকার একটা পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরির ব্যবস্থা হয়। গত বৃহস্পতিবার রতন বাড়িতে এসেছিলেন স্ত্রী-ছেলেকে ঢাকায় নিয়ে যেতে।
রতন প্রামাণিকের চাচাতো ভাই মিনারুল প্রামাণিক বলেন, গতকাল বিকেল ৫টার দিকে বাসে করে ঢাকায় যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন রতন। বড়াইগ্রাম থেকে বাসে পাশাপাশি আসনে বসে সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় রওনা হন স্বামী–স্ত্রী। বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর টাঈাইলের আনালিয়াবাড়ি এলাকায় পৌঁছালে বাসটি বিকল হয়ে যায়। স্ত্রীকে বাসে বসিয়ে শিশুসন্তানকে প্রসাব করানোর জন্য পাশের রেললাইনের কাছে যান তিনি। সেখানে সন্তানের পর তিনিও প্রসাব করছিলেন। এ সময় শিশুটি রেললাইনে উঠে পড়ে। তখনই ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেন চলে আসে। শিশুটিকে রক্ষা করতে রতন ও তাঁর সহযাত্রী শরিফ মণ্ডল রেললাইনে উঠলে তিনজনই ট্রেনে কাটা পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।
আরিফুল/মাসুদ