ঢাকা     রোববার   ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৭ ১৪৩১

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যার হাসপাতালে

বিশেষজ্ঞের অভাবে ইকোকার্ডিওগ্রাফি বন্ধ দেড়মাস

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৪, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  
বিশেষজ্ঞের অভাবে ইকোকার্ডিওগ্রাফি বন্ধ দেড়মাস

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে প্রায় দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষা। বিশেষজ্ঞের অভাবে বন্ধ রয়েছে হাসপাতালের এই চিকিৎসা সেবা। ফলে রোগিরা হৃদরোগ নির্ণয়ের  এ সেবাটি না পেয়ে বেসরকারি ক্লিনিকগুলোয় বেশি টাকা দিয়ে ইকো পরীক্ষা করাচ্ছেন। এই সঙ্কট নিরসন না হওয়া পর্যন্ত সেবা বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল প্রশাসন।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হৃৎপিণ্ডের রোগ নির্ণয়ের জন্য ডাক্তারা বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা করে থাকেন। তার মধ্যে কার্ডিওগ্রাফি হৃৎপিণ্ডের বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে বহুলপ্রচলিত একটি পরীক্ষা। আলট্রাসাউন্ডের (অতিশব্দ) মাধ্যমে হৃৎপিণ্ড পরীক্ষাকে ইকোকার্ডিওগ্রাফি বা ইকো বলে। বর্তমানে ইকোকার্ডিওগ্রাফি একটি জনপ্রিয় পরীক্ষা। যা হৃৎপিণ্ড ও রক্তসংবহনতন্ত্রের পরীক্ষায় ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মানবদেহের অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হৃৎপিণ্ডের  পরীক্ষা করাতে গেলে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞর খুবই প্রয়োজন। ইকো পরীক্ষা সরকারি কোনো হাসপাতালে করাতে গেলে ২০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে হয়ে যায়। একই পরীক্ষায় বেসরকারি ক্লিনিকে গুনতে হয় আড়াই হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। সরকারি হাসপাতালগুলোয় অভিজ্ঞ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ থাকায় এতে ঝুঁকি কম থাকে। অন্যদিকে বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে অনভিজ্ঞদের দ্বারাই ইকো পরীক্ষা করানোয় রোগির ঝুঁকি বাড়ে বহুগুণে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে সিনিয়র কনসালটেন্ট কার্ডিওলজি ও জুনিয়র কনসালটেন্ট কার্ডিওলজি পদে একজন করে দুইজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও পদ দুটি এখন শূন্য। অন্যদিকে কার্ডিওগ্রাফার পদে ৫ জন কর্মরত থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র একজন। তিনি কর্মচারি হওয়ায় তার মাধ্যম দিয়ে ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষা করা সম্ভব নয় বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্রটি। ফলে এই দুটি পদে ৭ জনের বিপরীতে কর্মরত রয়েছে মাত্র একজন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে এই হাসপাতালে ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষা করা হতো। সে সময় আকস্মিকভাবে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞর পদটি শূন্য হয়। দীর্ঘদিন ইকো পরীক্ষার মেশিনটি ব্যবহৃত না হলে নষ্ট হয়ে যায়।  পরে রোগিদের চাহিদার প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর জেলা হাসপাতালে অত্যাধুনিক মেশিনের সাহায্যে ইকোকার্ডিওগ্রাফির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ। উদ্বোধনের পর নিয়মিতভাবেই নামমাত্র ফি দিয়ে ইকো পরীক্ষা করতেন রোগিরা। এই কার্যক্রম শুরু হওয়ার কয়েকমাস পর হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ আব্দুল মজিদ অন্য জায়গায় বদলি হন। ফলে আবারও বন্ধ হয়ে যায় হৃৎপিণ্ডের রোগ নির্ণয়ের এই পরীক্ষাটি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দা আহম্মদুল্লাহ আল মামুন। তার মাকে নিয়ে জেলা হাসপাতালে ইকোকার্ডিওগ্রাফির জন্য এসেছিলেন। বিশেষজ্ঞ না থাকায় হাসপাতালে ইকো পরীক্ষা বন্ধ থাকায় তিনি আবার ঘুরে গেছেন। 

আহম্মদুল্লাহ বলেন, খবর নিয়ে জানতে পারলাম হাসপাতালে এখন ইকো পরীক্ষা করা হয়না। অনেকদিন ধরে রোগিরা এই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বাধ্য হয়ে বাহিরে মায়ের ইকো পরীক্ষা করানো হয়েছে। এরকম রোগিদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া খুব কষ্টের। এতে ওই রোগির শারীরিক অবস্থা আরও নাজেহাল হয়ে পড়ে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব মনিরুজ্জমান বলেন, জেলা হাসপাতালের যারা দায়িত্বে রয়েছেন তাদের উচিত শিগগির বিষয়টি মাথায় নিয়ে এই সঙ্কটের নিরসন করা। এতে সাধারণ মানুষ কম টাকায় জেলা হাসপাতালেই ইকো পরীক্ষা করাতে পারবেন। নতুবা তাদের অনেক কষ্টের সম্মুখীন হতে হবে।

প্রায় দেড় মাস ধরে ইকোকার্ডিওগ্রাফি বন্ধ রয়েছে জানিয়েছেন ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মাসুদ পারভেজ। তিনি বলেন, এখানে একজন কার্ডিওলজি ইকো পরীক্ষা করতেন। তিনি পদোন্নতি পেয়ে অন্য জায়গায় বদলি হয়েছেন। এই সঙ্কট নিরসনের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবগত করেছি। মন্ত্রণালয় যখন এখানে লোকবল দিবেন, আবারও ইকো পরীক্ষা চালু হবে।

শিয়াম/টিপু


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়