ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

মোস্তাফিজকে হলে আশ্রয় দেন জাবি ছাত্রলীগ সভাপতি, সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব

জাবি সংবাদদাতা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৯:৪৩, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
মোস্তাফিজকে হলে আশ্রয় দেন জাবি ছাত্রলীগ সভাপতি, সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব

ছবিতে বামে জাবি ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল, ডানে ধর্ষণে অভিযুক্ত মোস্তাফিজ

সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ডেকে এনে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুরকে আশ্রয় ও সংশ্লিষ্ট সিসিটিভি ফুটেজ গায়েবে নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের বিরুদ্ধে।

অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত সোয়া ১টা নাগাদ মীর মশাররফ হোসেন হল থেকে রান্নাঘর সংলগ্ন গেট ভেঙে বের হয়ে পালিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের এক ছাত্রলীগ নেতার কক্ষে যান। ভোর ছয়টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন তিনি। পরে চাপে পড়ে জাবি ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে কয়েকজন নেতাকর্মী মোস্তাফিজকে ক্যাম্পাস থেকে সাভারে নিয়ে যান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা রাইজিংবিডিকে জানান, মোস্তাফিজকে হলে রাত দেড়টার পর দেখেছেন তারা।

এরপর, রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে আটটায় মূল অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর আশুলিয়া থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। পুলিশ তখন তাকে গ্রেপ্তার দেখায়।

এর আগে, শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে সাভার মডেল থানায় ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী নারী। তার পরিপ্রেক্ষিতে রাত দুইটার দিকে ধর্ষণে অভিযুক্তদের পালাতে সহায়তা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল থেকে তিন জনকে আটক করে সাভার থানা পুলিশ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের নির্দেশেই মোস্তাফিজুরকে পলায়নে সহায়তা করেন মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতা সাগর সিদ্দিকী। সভাপতির নির্দেশেই তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে আশ্রয় দেওয়া হয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহলের চাপে ছাত্রলীগ সভাপতির নির্দেশে আত্মসমর্পণ করেন মোস্তাফিজ।

মোস্তাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী।

অভিযুক্ত ধর্ষককে আশ্রয় দেওয়ার সময়কালের সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চাইলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল-কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়, ১-৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার দিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের সকল সিসিটিভি ক্যামেরায় কোনও ফুটেজ রেকর্ড হয়নি। এর জন্য তারা যান্ত্রিক ত্রুটিকে দায়ী করেন।

সরেজমিনে সিসিটিভি সিস্টেম পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত সকল ফুটেজ রয়েছে। আর ৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে সিসিটিভি ফুটেজ রেকর্ড হচ্ছে। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি।

জানতে চাইলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার বলেন, ‘আমি হলে যাব, হলে গিয়ে দেখব। আমি ছুটিতে ছিলাম। গত রাতেই ফিরেছি কুষ্টিয়া থেকে। হলে গিয়ে এই বিষয়টি খতিয়ে দেখব ঘটনাটা কী ঘটেছে।’

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক সহ সভাপতি রাইজিংবিডিকে বলেন, আমরা শুনেছি মোস্তাফিজ ধর্ষণের ঘটনার পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে গিয়েছিল। ছাত্রলীগের সভাপতির নির্দেশে সে আত্মসমর্পণ করে।

তবে, ‘মোস্তাফিজুর নিজে থেকেই থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে’— ছাত্রলীগ সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল শুরুতে এমনটি দাবি করলেও পরে ‘এ বিষয়ে কিছু জানেন না’ বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘ওই দিন আমি ঢাকায় ছিলাম। রাত একটার পর ক্যাম্পাসে আসি’।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ.স.ম ফিরোজ-উল-হাসান রাইজিংবিডিকে বলেন, রোববার ভোরে সোহেল (ছাত্রলীগ সভাপতি) আমাকে জানায়, মোস্তাফিজুর থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করতে চায়। পরে আমি তাকে বলি, মোস্তাফিজ আত্মসমর্পণ করুক আর না করুক, পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করবে।

উল্লেখ্য, গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ আবাসিক হলের ৩১৭ নং কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে কৌশলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন আসামি মোস্তাফিজ ও মামুনুর রশীদ মামুন।

পড়ুন:

ছাত্রলীগ নেতাসহ ৪ জনের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন

জাবিতে ধর্ষণ: বিক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাস

জাবিতে ধর্ষণ: আশুলিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের 

 

প্রতিবেদনে সহায়তা করেছেন রাইজিংবিডির সাভার প্রতিনিধি

আহসান/আরিফ/এনএইচ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়