ঢাকা     শনিবার   ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৬ ১৪৩১

শিক্ষার্থী ভর্তি কমায় চাকরি হারালেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৬, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  
শিক্ষার্থী ভর্তি কমায় চাকরি হারালেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক

অধ্যাপক ক্যাপ্টেন (অব.) মো. জিয়াউল আহসান। (ছবি- সংগৃহীত)

সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি কমে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে ওই বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ক্যাপ্টেন (অব.) মো. জিয়াউল আহসান’র চাকরি নবায়ন করা হবে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

তবে ওই শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থী ভর্তি কম হওয়ার জন্য শিক্ষককে দায়ী করা যথার্থ নয়। ভর্তির বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব প্রশাসন ও ভর্তি কমিটির।

আর চিঠিতে শিক্ষার্থী কম ভর্তির কারণ উল্লেখ করলেও কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়ম অনুযায়ী তিন বছরের চুক্তি শেষ হওয়ায় সেটি নবায়ন করা হচ্ছে না। তবে শিক্ষার্থী ভর্তি কমার দায়ে চুক্তি নবায়নের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো মন্তব্য করেননি তারা।

২০২১ সালের ৩০ জানুয়ারি তিন বছরের (১ জানুয়ারি ২০২৪) চুক্তিতে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক ক্যাপ্টেন (অব.) মো. জিয়াউল আহসান।

মেয়াদপূর্তির আগে নিয়োগের চুক্তি অনুযায়ী ২০২৩ সালের ২২ ডিসেম্বর তিনি চাকরি নবায়নের আবেদন করেন। জবাবে তার সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করা হবে না বলে জানিয়ে দেয় প্রশাসন। নিয়ম অনুযায়ী, তিন মাস আগে সেই চিঠি দেওয়ার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ চিঠি দেয় মাত্র তিন দিন আগে।

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এস. তাসাদ্দেক আহমেদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘নিয়োগপত্রের প্রথম শর্ত অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৩১ জানুয়ারি আপনার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। আপনি চাকরি নবায়নের অনুরোধ জানিয়েছেন। আপনি যোগদানের পর থেকে পদার্থবিজ্ঞানে শিক্ষার্থী ভর্তি কমে যায়। তিন ব্যাচে মাত্র পাঁচজন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। বিভাগীয় প্রধান হিসেবে শিক্ষার্থী ভর্তিতে আপনার তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। এজন্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী আপনার তিন বছরের চাকরির চুক্তির মেয়াদ নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।‘

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘নিয়োগের শর্ত অনুযায়ী চাকরিকালীন সময়ে নিয়োগ বাতিল হলে তিন মাসের বেতন হস্তান্তরের বিধান রয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেয়াদ বর্ধিত না হওয়ায় তিন মাসের বেতন হস্তান্তরের প্রয়োজন পড়বে না।’

এদিকে কর্তৃপক্ষের এ চিঠির জবাবে দেওয়া চিঠিতে অধ্যাপক ক্যাপ্টেন (অব.) মো. জিয়াউল আহসান বলেন, ‘গত তিন বছরে বিভাগে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করি ও একাডেমিক কাজ সফলভাবে করি। গত ২৯ জানুয়ারি আমার চাকরির মেয়াদ নবায়ন না করে উপযুক্ত কারণ না দেখিয়ে আমাকে চুক্তি নবায়ন করা হবে না জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, শিক্ষার্থী ভর্তি কম হওয়ার জন্য বিভাগীয় প্রধানকে দায়ী করা যথার্থ নয়। এটি প্রশাসন ও কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির মূখ্য দায়িত্ব।’

চিঠিতে তিনি আরও বলেন, ‘রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান থাকার সময়ে বিভাগের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের কারণে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি সংখ্যা যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছিল। তাছাড়া বিভাগীয় প্রধান হিসেবে আমি একাডেমিক কার্যক্রম ও ক্লাসসহ যাবতীয় কার্যক্রম সাফল্যজনকভাবে পালন করে আসছি। এছাড়া নিয়োগপত্র অনুযায়ী চাকরিকালীন সময়ে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে হলে তিন মাস আগে অবহিত করার বিধান রয়েছে। অন্যথায় তিন মাসের বেতনসহ অব্যাহতি দেওয়ার বিধান রয়েছে। বর্ণিত বিষয়ের প্রেক্ষিতে আমার চাকুরির মেয়াদ নবায়নের জন্য অথবা ৩ মাসের বেতনসহ অব্যাহতি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।’

মো. জিয়াউল আহসান বলেন, ‘নিয়োগের চুক্তির শর্তের সঙ্গে শিক্ষার্থী ভর্তির কোনো শর্ত ছিল না। কোথাওই এমন নিয়ম থাকে না। নিয়োগপত্রে অনেক শর্ত আছে, তবে এটা নেই। এইটা রেজিস্টার, ভর্তি কমিটির বিষয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে দেখভাল যেটুকু করার, এমনিতেই করি আমরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি এর আগেও শিক্ষকতা করেছি। এমআইএইচটিতে ছিলাম ১৫ বছর। ওখানেও দেখিনি, শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য বিভাগীয় প্রধান দায়বদ্ধ। অফিসিয়ালি শিক্ষার্থী ভর্তিতে শিক্ষকের কোনো দায়বদ্ধতা নেই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি অনুযায়ী এই কারণ যথার্থ কি-না প্রশ্নে এস. তাসাদ্দেক আহমেদ বলেন, ‘লেখা আছে, তিন বছর হলে আমরা নবায়ন না করতে পারি। আমরা তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেই। আমরা লিখেছি, ছাত্রছাত্রী নাই।’

শিক্ষার্থী ভর্তি কমার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘এই কারণ না, এই কারণ না। চিঠিতে আছে, তিন বছর হয়ে যাওয়ায় এটি করা হলো। এটাই নীতি। আমরা সবাইকেই তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেই। যার পারফরম্যান্স ভালো। তাকে বাড়াই। যার কম তারটা বাড়াই না।’

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) বলেন, ‘এমন কোনো নিয়ম নেই। শিক্ষার্থী ভর্তি কমলে সেটার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার। বলা আছে, তিন বছর পর্যন্ত চুক্তি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে চুক্তি বৃদ্ধি করতেও পারে। নাও পারে।’

আরিফুল/ফয়সাল

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়