ঢাকা     রোববার   ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১৪ ১৪৩১

ভালোবাসার ফুলে ভাইরাস, তবু ৪০ কোটি টাকা বিক্রির আশা

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৪৮, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ২২:২৩, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
ভালোবাসার ফুলে ভাইরাস, তবু ৪০ কোটি টাকা বিক্রির আশা

আগামী ১৪ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসবকে ঘিরে জমে উঠেছে ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের গদখালী পাইকারি ফুলের বাজার।

রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) ভোর থেকে জমজমাট কেনাবেচা শুরু হয়েছে এ বাজারে। এদিন অন্যান্য ফুলের তুলনায় বাজারে ভালোবাসার প্রতীক গোলাপ ফুলের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি।

কৃষকরা জানান, চলতি বছরে আবহাওয়াজনিত কারণে গোলাপের বাগানে ভাইরাসের আক্রমণ হয়। ফলে গোলাপ ফুলের উৎপাদন কম হওয়ায় চড়া দাম পাচ্ছেন তারা। তবুও লোকসানের শঙ্কায় শঙ্কিত কৃষকেরা।

অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা জানান, সারাদেশে গদখালীর ফুলের চাহিদা অনেক বেশি। গোলাপ ফুলের উৎপাদন কম এবং বাজারে আমদানি কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী গোলাপ ফুল সরবরাহ করতে পারছেন না তারা।

সরেজমিনে রোববার সকালে গদখালীর ফুলের বাজার ঘুরে দেখা যায়, এ বাজারে গোলাপ বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ২৫-৩০ টাকা, চায়না গোলাপ প্রতি পিস ৪০ টাকা, গ্লাডিওলাস প্রতি পিস ১৭-১৮ টাকা, জারবেরা প্রতি পিস ১৫-১৬ টাকা, রজনীগন্ধা ১৩-১৫, গাদা প্রতি হাজার ৩০০-৮০০, চন্দ্রমল্লিকা প্রতি পিস ৩-৫ টাকা। ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসবকে কেন্দ্র করে বেশিরভাগ বেপারীরা গোলাপ ফুলের কেনা-বেচা নিয়েই বেশি ব্যস্ত রয়েছেন।

নন্দির ডুমুরিয়া গ্রামের চাষী মো. শাহাবুদ্দিন সাইকেলে করে ৪০০ পিস গোলাপ ফুল নিয়ে এসেছেন গদখালির বাজারে। তিনি বলেন, 'আমি প্রায় এক বিঘা জমিতে গোলাপের চাষ করেছিলাম। কিন্তু ছত্রাক, ভাইরাসের আক্রমণে অধিকাংশ গাছে ফুল আসেনি। ফলে উৎপাদন কম হয়েছে। তবে যা উৎপাদন হয়েছে, বাজারে ভালোই দাম পাচ্ছি।'

নীলকন্ঠ নগর গ্রামের চাষী মেহেদী হাসান বকুল বলেন, 'গোলাপ নিয়ে এসেছি ৫০০ পিস। বেপারীরা দাম বলেছে ২৫-৩০ টাকা। এতে আমরা সন্তুষ্ট। তবে ভাইরাস না লাগলে আমাদের উৎপাদন বেশি হতো। ভাইরাস লাগায় গোলাপ ধরেছে এক হাজার না হলে দুই হাজার গোলাপ ফুটতো আমার বাগানে।'

ঈশ্বরদী থেকে গদখালীর বাজারে ফুল কিনতে এসেছেন ব্যবসায়ী মো. জুয়েল। তিনি বলেন, 'আমি ২৫ বছর ধরে এ বাজার থেকে ফুল কিনে নিয়ে যাই। এতো কম ফুল কোনোদিন দেখিনি। অন্যান্য বছর গোলাপে বাজার লাল হয়ে যায়। কিন্তু এ বছর ভাইরাস লাগায় গোলাপের সংখ্যা কম বাজারে। তবে দাম ভালো।'

গদখালী থেকে ফুল কিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠান সেলিম রেজা। তিনি বলেন, 'গদখালীর ফুলের চাহিদা সারাদেশেই। কিন্তু এবার ফুল কম আমরা চাহিদা মোতাবেক ফুল সরবরাহ করতে পারছি না।'

অনলাইনে দেশের বিভিন্ন জেলায় ফুল সরবরাহ করেন আল আমিন নামে এক কলেজছাত্র। তিনি বলেন, 'বিগত দুইদিন আগে থেকে ফুলের চাহিদা প্রচুর পরিমাণে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে গোলাপের চাহিদা বেড়েছে। দামেও ভালো। আমরা অনলাইনে অর্ডার নিচ্ছি আর ফুল সরবরাহ করছি।'

যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি কৃষক নেতা আব্দুর রহিম বলেন, ‘গদখালিতে এবার গোলাপ ফুলের সংখ্যা কম, তবে কৃষকেরা দাম ভালো পাচ্ছে। আগামী দুই-তিনদিন ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে এমন চড়া দামে ফুল বিক্রি হলে তারা ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে উঠতে পারবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রায় ৪০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আমরা ধারণা করছি।’

ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, ‘এ বছর ঝিকরগাছার ১৫০ হেক্টর জমিতে গোলাপের চাষ হয়েছে। আবহাওয়া বিপর্যয়, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে গোলাপের ক্ষেতে এক ধরণের ছত্রাকের আক্রমণ হয়েছে। আমরা কৃষকদের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছি এবং তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি।’

রিটন/ফয়সাল


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়