ঢাকা     রোববার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৭ ১৪৩১

খোয়াসাগর দিঘিতে ‘ডিসি পার্কের’ সাইনবোর্ড, সমালোচনা

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩৪, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  
খোয়াসাগর দিঘিতে ‘ডিসি পার্কের’ সাইনবোর্ড, সমালোচনা

লক্ষ্মীপুরের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা খোয়াসাগর দিঘি পার্কের নাম পরিবর্তন করে ‘ডিসি পার্কের’ সাইনবোর্ড লাগানো নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। স্থানীয় বাসিন্দারা কোনোভাবেই ডিসি পার্ক নামটি সমর্থন করছেন না। গতকাল রোববার দুপুর থেকে লক্ষ্মীপুরের নেটিজেনরা ফেসবুকে ডিসি পার্ক লেখা সাইনবোর্ডের ছবি দিয়ে সমালোচনামূলক মন্তব্য করছেন। 

জানা গেছে, সদর উপজেলার দালাল বাজার এলাকার রায়পুর-লক্ষ্মীপুর মহাসড়কের পাশেই প্রায় ২২ একর জুড়ে বিস্তৃত খোয়াসাগর দিঘিটি। এর একপ্রাপ্ত থেকে অন্য প্রান্তে তাকালে কুয়াশাছন্ন দেখা যায়। তাই এই দিঘিকে খোয়া বা কুয়াশাময় দিঘি বলা হয়। প্রায় পৌনে ৩০০ বছরের পুরনো বিশাল আয়তনের দিঘিটি খোয়াসাগর দীঘি নামেই দেশব্যাপী পরিচিত। ধারণা করা হয়, ১৭৫৫ সালের দিকে দালাল বাজারের জমিদার ব্রজবল্লভ রায় দিঘিটি খনন করেন। পরবর্তীতে জমিদার রাজা গৌড় কিশোর রায় দিঘিটির সংস্কার করেন। প্রাচীন এই দিঘিকে ঘিরে জড়িয়ে আছে নানা কল্পকাহিনী। 

দীর্ঘ সময় এই দিঘিটি অযত্নে পড়ে ছিল। পরে সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন। দিঘির দুইপাড়ে শোভাবর্ধন করা হয়। দিঘির পানিতে চাষ করা হয় মাছ। সবকিছু তদারকি করা হয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে। 

সৌন্দর্য বর্ধনের পর জেলা শহরের খুব কাছাকাছি হওয়ায় দিঘিটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এখানে আসেন। ঐতিহাসিক নামেই দিঘিটি সারাদেশে পরিচিতি পাক এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।  

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মেহের নিগার সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে আমার জানা নেই। কে বা কারা ডিসি পার্কের বোর্ড ঝুলিয়েছে তাও জানি না। আজই জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে ডিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’ 

খোয়াসাগর দিঘি নিয়ে প্রকাশিত একটি সংবাদ পোষ্ট করে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি চৌধুরী মাহমুদুন্নবী সোহেল ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেন, ‘লক্ষ্মীপুরের ইতিহাস ঐতিহ্যের অন্যতম স্বারক দালাল বাজার খোয়াসাগর দিঘি। এর ইতিহাস অক্ষুন্ন রেখে গড়ে উঠুক সব নতুন স্থাপনা। নামকরণ থাকুক খোয়াসাগর দিঘির নামে। এটা আমাদের লক্ষ্মীপুর বাসীর দাবি।’

জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রাকিব হোসেন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, এসব হঠকারী সিদ্ধান্ত দ্রুত প্রত্যাহার চাই।

মহিবুল বাশার তার ফেসবুকে লেখেন, ‘শতবছর ধরে চলে আসা খোয়াসাগর দিঘি নামটা এভাবে পরিবর্তন হয়ে গেল! দুঃখজনক।’ 

লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম পাবেল বলেন,  ‘জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে দালালবাজার খোয়াসাগর দিঘি। এটির নাম পরিবর্তন কোনোভাবেই সমিচীন নয়। অন্য কোন স্থানে ডিসি পার্ক নামে আলাদা পর্যটন স্পট করা যেতে পারে।’

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুরাইয়া জাহান বলেন, খোয়াসাগর দিঘির নাম পরিবর্তন করা হয়নি। ডিসি পার্কের সাইনবোর্ডটি এক বছর আগে লাগানো হয়েছে। এর বেশি আমার জানা নেই। 

জাহাঙ্গীর/মাসুদ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়