মুক্তিপণের টাকা পেয়েও মাদ্রাসা ছাত্রকে হত্যা, ঘাতক গ্রেপ্তার
কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
![মুক্তিপণের টাকা পেয়েও মাদ্রাসা ছাত্রকে হত্যা, ঘাতক গ্রেপ্তার মুক্তিপণের টাকা পেয়েও মাদ্রাসা ছাত্রকে হত্যা, ঘাতক গ্রেপ্তার](https://cdn.risingbd.com/media/imgAll/2024February/Untitled-13-copy-2402121549.jpg)
আটককৃত ঘাতক মকবুল হোসেন। (ছবি- সংগৃহীত)
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ আব্দুল্লাহপুর এলাকায় তওহিদ ইসলাম (১০) নামের এক মাদ্রাসা ছাত্রকে অপহরণ ও শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ সেপটিক ট্যাংক’র মধ্যে ফেলে রেখে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে পালিয়ে যায় ঘাতক।
রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) এ ঘটনায় র্যাব-১০ সদস্যরা রাতে রাজধানীর শ্যামপুর পোস্তগোলা এলাকার একটি আবাসিক হোটেল থেকে মকবুলকে মুক্তিপণের ২ লাখ ৯০ হাজার টাকাসহ গ্রেপ্তার করলে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আব্দুল্লাহপুর মধ্যপাড়া এলাকার সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে রাত সাড়ে এগারোটায় ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, মকবুল পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। নিহতের পরিবার ও মকবুল একই এলাকায় বসবাস করতেন। কিছুদিন আগে বাসায় রাজমিস্ত্রির কাজ করার সুবাধে পারিবারিকভাবে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাওহীদের বাবা একজন প্রবাসী হওয়ায় মুক্তিপণের আশায় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন তিনি।
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, গত শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর এলাকার রসুলপুর জামি’আ ইসলামিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় নাজেরা বিভাগের শিক্ষার্থী তাওহীদ ইসলাম নিখোঁজ হয়। খোঁজাখুজির এক পর্যায় ওইদিন রাতে একজন ব্যক্তি বাসায় থাকা মোবাইল ফোনে জানায় যে, তিনি তাওহীদকে অপহরণ করেছেন এবং মুক্তিপণ হিসেবে তিন লাখ টাকা দাবি করেন। ফোনটি অপহরণকারীই রেখে যায়। পরবর্তীতে তাওহীদের মা বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। নিহতের মা তার ছেলেকে উদ্ধার করতে র্যাবের কাছে অভিযোগ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রাতে র্যাব-১০’র একটি দল মাদরাসা ছাত্রকে অপহরণ করে হত্যার পর সেপটিক ট্যাংকে মরদেহ গুমের পরও মুক্তিপণের টাকা আদায়ের মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারী মকবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। উদ্ধার করা হয় মুক্তিপণের দুই লাখ ৯০ হাজার টাকা। তাওহীদ কেরাণীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর এলাকার একটি মাদরাসা ও এতিমখানায় নাজেরা বিভাগে পড়াশোনা করতো। যার ফলে সে সকালে মাদরাসার উদ্দেশ্যে বাসা হতে বের হতো এবং বাসায় ফিরতে প্রায়ই সন্ধ্যা হয়ে যেত। গ্রেপ্তার মকবুলের ধারণা ছিল যে, ভুক্তভোগীর বাবা প্রবাসী তাই তাকে অপহরণ করলে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করা যাবে। এরই প্রেক্ষিতে মকবুল অল্প সময়ে বেশি অর্থ লাভের আশায় প্রায় ছয় মাস ধরে অপহরণের পরিকল্পনা করে আসছিল। মকবুল ভিকটিম তাওহীদ মাদ্রাসা থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাড়ির রাস্তার পাশে ওৎ পেতে থাকে। এ সময় ভিকটিম মাদরাসা থেকে আনুমানিক রাত ৮টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা মকবুল ভিকটিমের মুখ চেপে ধরে উক্ত এলাকার নিকটস্থ একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে কলাগাছের সঙ্গে তার হাত, পা ও মুখ বেঁধে রাখেন। পরবর্তীতে মকবুল আগে থেকে কিনে রাখা মোবাইলফোন কৌশলে তাওহীদের বাসায় ফেলে রাখে। মকবুল বাসায় রেখে আসা মোবাইল ফোনে কল দিয়ে অপহরণের বিষয়টি জানিয়ে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এসময় মুক্তিপণের টাকা না দিলে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিলে তাওহীদকে হত্যা করার হুমকি দেয়। কলাগাছে বেঁধে রাখা অবস্থায় মুখের বাঁধন খুলে যায় এবং মকবুলকে ভিকটিম চিনে ফেলে চিৎকার করলে মকবুল ক্ষিপ্ত হয়ে তাওহীদের মুখ ও গলা মাফলার দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে শ্বাসরোধ করে নৃশংসভাবে হত্যা করে। লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ওই এলাকার সেপটিক ট্যাংকের ভিতরে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
র্যাব জানায়, হত্যার পরও সে মুক্তিপণের টাকা চায়। নিহত তাওহীদের মামা মকবুলের কথা মতো ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ের ফুটওভার ব্রিজের উপরে ৪ নম্বর পিলারের গোড়ায় তিন লাখ টাকা রেখে আসেন। পরবর্তীতে মকবুল মুক্তিপণের টাকা নিয়ে পোস্তগোলা এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করেন। হোটেলে অবস্থানকালীন সময় র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।
শিপন/ফয়সাল
আরো পড়ুন