ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৯ ১৪৩১

টেকনাফ সীমান্তে থেমে থেমে গুলি ও বিকট বিস্ফোরণ 

কক্সবাজার প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:১৭, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ২২:৩০, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
টেকনাফ সীমান্তে থেমে থেমে গুলি ও বিকট বিস্ফোরণ 

কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে সীমান্ত চৌকির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘাতের জেরে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। দুই তিনটি বিস্ফোরণের শব্দের সঙ্গে কম্পন টের পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন সীমান্তের এপারের বাসিন্দারা। 

গত দুই সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তে সংঘাতের আঁচ লাগে বাংলাদেশ সীমান্তের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এবং কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে। টানা কয়েকদিন সংঘাতের পর চারদিন ধরে নাইক্ষ্যংছড়ি ও উখিয়া সীমান্ত পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত। তারপরও সীমান্তঘেঁষা খেত খামারে যেতে ভয় পাচ্ছেন চাষি ও কৃষকরা। 

গত দুইদিন ধরে টেকনাফের পূর্ব ও দক্ষিণাংশের মিয়ানমারের রাখাইনের মংন্ডুতে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের তুমুল সংঘর্ষ চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সেখানে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) কয়েকটি সীমান্তচৌকি রয়েছে। এসব চৌকির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির সঙ্গে লড়াই চলছে। এতে এপারের সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপে দুই-তিন ধরে গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ পাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।  

আরো পড়ুন:

স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টা থেকে আজ সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত তাঁরা থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন। মাঝেমধ্যে বিকট শব্দও কানে আসছে। আজ সকালে প্রায় এক ঘণ্টা তীব্র গোলাগুলিতে এপারের মানুষের ঘুম ভাঙে। ওপারের মংডু এলাকায় আজ সকালে আকাশে হেলিকপ্টার চক্কর দিতে দেখা গেছে। এরপর দুটি বিকট শব্দে কেঁপে উঠে সীমান্ত এলাকা। 

টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম বলেন, নাফ নদীর পূর্ব ও দক্ষিণাংশে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। রাখাইনের মংডুর শহরের আশপাশের মেগিচং, কাদিরবিল, নুরুল্লাহপাড়া, মাংগালা ও ফাদংচা এলাকা অবস্থিত। এসব এলাকার সীমান্তচৌকি ঘিরে সংঘর্ষ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে দুটি বিকট শব্দে এপারের মাটি কেঁপে উঠেছে। এ অবস্থায় সীমান্তের নারী-শিশুরা আতঙ্কে রয়েছেন। 

সেন্টমার্টিনের উত্তর পাড়ার বাসিন্দা আবদুল করিম ও জসিম উদ্দিন বলেন, বুধবার থেকে সেন্টমার্টিনে গেলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। শুক্রবার সকাল ৮ পর্যন্ত কয়েকটি বিকট শব্দও হয়েছে। 

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল বাড়ানোর হয়েছে। সীমান্তের লোকজনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে ২ বিজিবি টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহি উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের জেরে থেমে থেমে রাতভর গোলাগুলির শব্দ শুনতে পেয়েছেন সীমান্তে থাকা বিজিবির সদস্যরা। সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে।

গত ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে তমব্রু রাইট ও লেফট ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। দুই-তিন দিন তীব্র লড়াইয়ের পর তমব্রু ও ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি দখলে নেয় আরাকান আর্মি। সেখানে বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে ঠিকতে না পেরে ৩৩০ জন বিজিপি, সেনা ও বেসামরিক নাগরিক পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাদের গতকাল বৃহস্পতিবার সাগরপথে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। 

গত ৫ ফেব্রুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে দুই জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নারী এবং অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ। 

তারেকুর/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়