ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

ছুরিকাঘাতে যুবকের ভুঁড়ি বের হওয়া নিয়ে রহস্য

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৩১, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ২২:৩৫, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
ছুরিকাঘাতে যুবকের ভুঁড়ি বের হওয়া নিয়ে রহস্য

আহত শাহাদত হোসেন।(ছবি- সংগৃহীত)

রাজশাহীতে ছুরিকাঘাতে এক যুবকের ভুঁড়ি বের হয়ে যাওয়া নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। কে তাকে ছুরিকাঘাত করেছে তা নিশ্চিত হতে পারছে না পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে পেট থেকে বের হয়ে যাওয়া ভুঁড়ি গামছা দিয়ে বেঁধে শাহাদত হোসেন (২৩) নামের এই যুবককে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান তার ভাতিজার বউ।

কীভাবে শাহাদতের পেটের ভুঁড়ি বের হলো, হাসপাতালে যাওয়ার পরে দু’জনের কেউই এ নিয়ে মুখ খুলছিলেন না। একপর্যায়ে হাসপাতালেই ওই তরুণীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

পরে ওই তরুণী দাবি করেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শহরের অলোকার মোড়ে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে ভুঁড়ি বের হয়েছে। কিন্তু অলোকার মোড়ে এ ধরনের কোনো ঘটনা খুঁজে পায় না পুলিশ। পরে নগরীর টিকাপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় গিয়ে পুলিশ দেখে, মেঝেতে পড়ে আছে রক্ত আর রক্তমাখা ছুরি। পরে ওই তরুণী দাবি করেন, শাহাদত নিজেই নিজের পেটে ছুরি চালিয়েছেন। যদিও বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।

আহত শাহাদত হোসেনের বাড়ি নাটোরে। পেশায় তিনি একজন রংমিস্ত্রি। তার ভাতিজার নাম তানভীর ইসলাম। তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। সম্প্রতি ভাতিজা তানভীরের বউকে নিয়ে শাহাদত টিকাপাড়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। ঘটনাটি ঘটেছে এই বাসাতেই। এ ঘটনায় শুক্রবার দুপুরে শাহাদতের বড় ভাই নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা করেছেন। এই মামলায় তিনি তার ছেলের বউকে একমাত্র আসামি করেছেন। হাসপাতাল থেকে আটক করা ওই তরুণীকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ভাতিজার বউয়ের সঙ্গে শাহাদতের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। সেই সূত্রেই তারা এক বাসায় থাকতেন। বিয়ে করতে চাইলে মেয়েটি রাজি না হলে শাহাদত নিজেই পেটে ছুরিকাঘাত করেন। তবে বিষয়টি শাহাদতের মুখ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঘটনার পরে রাতেই অস্ত্রোপচার করে ভুঁড়ি ভেতরে ঢোকানো হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাহাদত বেঁচে ছিলেন।

মামলার বাদী ও শাহাদতের বড় ভাই নূরুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে গিয়েই তিনি শাহাদতকে জিজ্ঞেস করেছিলেন কে তাকে ছুরিকাঘাত করেছে। প্রথমে শাহাদত চুপ করেছিলেন। একপর্যায়ে বলেছেন যে তার জীবন তো শেষ। আর বলে লাভ কী। আরেকজনের ক্ষতি করে কী করবেন।

তারপরেও জানার জন্য জিদ করলে শাহাদত বলেছেন, তার ভাতিজার বউ তাকে ছুরি মেরেছে।

শাহাদতের বড় ভাই নূরুল ইসলাম আরও বলেন, এক বছর আগে তার ছেলে তানভীরের সঙ্গে এই মেয়ের বিয়ে হয়। মেয়ের তখন এসএসসি পরীক্ষা ছিল। প্রথম পরীক্ষার দিনেই বিয়েটা হয়। বিয়ের পরে তিনি জানতে পারেন যে তার ছেলে, ছেলের বউ এবং তার ভাই শাহাদত; এরা তিনজনই মাদকাসক্ত। এসব দেখে তিনি তাদের আলাদা করে দেন এবং ছেলের সঙ্গে কথা বলেন না। তার ছোট ভাই শাহাদত রংমিস্ত্রির কাজ করে। সে তাদের  পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমি বিক্রি করার ৩ লাখ টাকা নিয়ে রাজশাহীতে আসে। কিছুদিন পরে তার ছেলেরও বউ বাবার বাড়িতে আসেন। আসার সময় তার হাতে ২৪ হাজার টাকার একটা মোবাইল ফোন ছিল। কে কিনে দিলো জানতে চাইলে সে বলেছে, শাহাদত কাকু কিনে দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ছেলের শ্বশুর বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী পৌর এলাকায়। নাটোর থেকে আসার তিনদিন পর ছেলে শ্বশুর বাড়িতে বউয়ের খোঁজ নিতে এসে জানতে পারে যে, বউ তার চাচা শ্বশুর শাহাদতের সঙ্গে নওগাঁয় বেড়াতে গেছে। ছেলে আরেকবার খোঁজ নিতে এলে বউ মাস্তান দিয়ে ছেলেকে পিটুনি দিয়েছে। তারপর ছেলে ফিরে গেছে। হঠাৎ গত বৃহস্পতিবার রাতে তিনি এই দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে আহত ছোট ভাইয়ের পাশে ছেলের বউকে দেখতে পান। তিনি তার সঙ্গে কথা বলেননি।

নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ূন কবির বলেন, মেয়েটি দাবি করেছেন যে কোনোভাবে তার চাচা শ্বশুরের নিজের হাতের ছুরিতেই পেটের ভুঁড়ি বের হয়ে গেছে। আবার ছেলেটা নাকি বলেছে ওই মেয়েই ছুরিকাঘাত করেছে। বিষয়টির তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষেই সবকিছু পরিষ্কার করে বলা যাবে। আপাতত মেয়েটিকে তার শ্বশুরের দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।

কেয়া/ফয়সাল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়