ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

লক্ষ্মীপুরে অস্তিত্ব সঙ্কটে বাঁশশিল্প

জাহাঙ্গীর লিটন, লক্ষ্মীপুর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:২১, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ২০:৫৮, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
লক্ষ্মীপুরে অস্তিত্ব সঙ্কটে বাঁশশিল্প

প্লাস্টিক সামগ্রীর প্রসার, প্রয়োজনীয় পুঁজি এবং পরিকল্পিত উদ্যোগের অভাবে অস্তিত্ব সঙ্কটে লক্ষীপুরের বাঁশশিল্প। উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য না থাকায় এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের অনেকেই ইতোমধ্যে পেশা পাল্টাতে শুরু করেছেন। দরিদ্রতাকে সঙ্গী করে যারা নিজেদের বাবা-দাদাদের পেশাকে এখনো ধরে রেখেছেন তারাও রয়েছেন নানা সমস্যায়। মূলত প্রচলিত প্লাস্টিক দ্রব্য সামগ্রীর সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন এই শিল্পে জড়িতরা। 

একসময় মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় অনুষঙ্গের মধ্যে বাঁশের তৈরি দ্রব্য সমগ্রীর প্রয়োজনীয়তা ছিল অনেক। কুলা, খাঁচা, চালনী, চাটাই, ডোল, ঝুড়ি, পলো, ডালা প্রভৃতি বাঁশজাত পণ্যের ছিল ব্যাপক চাহিদা। কিন্তু, আধুনিক বিজ্ঞানের প্রসারতায় বর্তমানে বাঁশের তৈরি এসব সামগ্রীর অনেক পণ্যই তৈরি করছে প্লাস্টিক পণ্য নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। সাশ্রয়ী দাম, ঠেকসই ও স্থায়ীত্বের কারণে এসব প্লাস্টিকের সামগ্রী দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সবার কাছে। ফলে প্রতিনিয়ত কমছে বাঁশের তৈরি পণ্য সামগ্রীর কদর। 

জেলার রায়পুর, রামগতি, রামগঞ্জ ও কমলনগর উপজেলার গ্রামীণ জনপদে বাঁশের তৈরি পণ্যের সবচেয়ে বেশি যোগান আসতো লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায়। এই উপজেলাগুলোতে বিভিন্ন এলাকায় ছিল প্রায় কয়েক শতাধিক বাঁশশিল্পী পরিবারের বসবাস। বাঁশের সামগ্রী তৈরি করে আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিলো তাদের জীবনে। বিগত কয়েকবছর ধরে বাঁশশিল্পে বিরাজ করছে চরম মন্দাভাব। ব্যবহারকারীর অভাব ও বাঁশের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে বাঁশশিল্পীদের অনেকেই তাদের পৈত্রিক পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। 

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার রাজীবপুর ও তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের শহর কসবা গ্রামের প্রায় ৫০০ পরিবার ৪০ বছর ধরে বাঁশ দিয়ে পণ্য তৈরির পেশায় নিয়োজিত। সংসারের স্বচ্ছলতার পাশাপাশি সন্তানদের লেখাপড়ার যোগান চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। বর্তমানে প্লাস্টিক সামগ্রীর কারণে সমস্যা সৃষ্টি হলেও পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এই পেশায় রয়েছেন তারা। শহর কসবা গ্রামে ব্যাপকভাবে তৈরি হচ্ছে টুকরি, ছালনি, খাঁচা, কুলা, মাছ ধরার বিভিন্ন ফাঁদ, টেপা, লাই-ওড়া, টেবা, আদলাই, খলি, হাচী, কাইরসহ বাঁশের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র। আকার ও মানভেদে এক একটি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত। বাঁশ দিয়ে তৈরি এ পণ্যগুলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনও প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে। 

বাঁশশিল্পের কারিগর সোলেমান, নুরুল ইসলাম, নুর জাহান, বিলি বেগম বলেন, ছোট মুলি বাঁশ আনতে হয় খাগড়াছড়ি থেকে। সড়ক পথে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায় লাভ কম হয়। তাই অল্প মুনাফায় এখন ব্যবসা পরিচালনা করা যায় না। সরকারিভাবে যদি বেশি ঋণ দেওয়া হয় তাহলে তারা এ পেশায় আরও ভালো করতে পারবেন। বাজারে বাঁশের তৈরি পণ্যের চাহিদা থাকলেও শুধুমাত্র অর্থ সঙ্কটের কারণে তারা ঠিকমতো মালামাল সরবরাহ করতে পারছেন না।

বিসিক শিল্প নগরী লক্ষ্মীপুরের উপ-ব্যবস্থাপক আসাদ উল্যাহ হাসান রাইজিংবিডিকে বলেন, বাঁশ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের সহজ শর্তে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা দ্রুত সময়ের মধ্যে করে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। 

মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়