ঢাকা     শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১৩ ১৪৩১

হবিগঞ্জে গিনেস বিশ্ব রেকর্ডের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ভারতের শিবানন্দ

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০১, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  
হবিগঞ্জে গিনেস বিশ্ব রেকর্ডের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ভারতের শিবানন্দ

ভারতীয় ধর্মগুরু সন্ন্যাসী ডক্টর স্বামী শিবানন্দ (যোগী)।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়স্ক ও সুস্থ মানুষ হিসেবে গিনেস বিশ্ব রেকর্ডের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ভারতীয় ধর্মগুরু সন্ন্যাসী ডক্টর স্বামী শিবানন্দ ভক্তদের আমন্ত্রণে এসেছেন হবিগঞ্জে।

ধর্মগুরু সন্ন্যাসী স্বামী শিবানন্দ (যোগী) বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়স্ক মানুষ। তার বয়স ১২৭ বছর। এই বয়সেও তিনি দিব্যি হেঁটে বেড়ান। তাই বিশ্বজুড়ে ‘স্বামী শিবানন্দ’নামটি এখন স্বাস্থ্য সচেতনতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

মানুষের গড় আয়ুকালকে উপেক্ষা করে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন তিনি। তার ভক্তরা তাকে শ্রদ্ধাভরে ডাকেন বাবা শিবানন্দ আবার অনেকেই ডাকেন যোগগুরু বলে। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী বর্তমান বিশ্বের প্রবীণতম ব্যক্তি চিতেতসু ওয়াতানাবে হলেও শিবানন্দ হচ্ছেন বিশ্বের প্রবীণতম সম্পূর্ণ সুস্থ ব্যক্তি।

মনোরোগে পিএইচডি করা স্বামী শিবানন্দ (যোগী) ১৮৯৬ সালের ৮ আগস্ট হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার হরিতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শ্রীনাথ গোস্বামী মাতা ভগবতী দেবী। মা ও বাবা কয়েক বছরের বড় দিদি আরতিসহ দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে জীবন ধারণ করতেন। চরম দারিদ্র্যতার কারণে ৪ বছর বয়সে উনাকে নবদ্বীপের বিখ্যাত সন্ন্যাসী স্বামী ওঙ্কারানন্দর কাছে দিয়ে দেওয়া হয়। এর দুই বছর পর, যখন তার বয়স ৬ বছর তিনি সন্ন্যাসীর সঙ্গে বাড়ীতে ফিরে এসে শোনেন তার দিদি না খেতে পেয়ে মারা গেছেন। তার বাড়িতে আসার ৭ দিন পর মা-বাবাও একই দিনে মারা যান। তিনি স্বামী ওঙ্কারানন্দের সঙ্গে বাবা-মায়ের শ্রাদ্ধ শেষ করে ১৯০১ সালে আবার নবদ্বীপে গমন করেন।

ধর্মগুরু সন্ন্যাসী স্বামী শিবানন্দ (যোগী) জানান, তিনি জীবনে ৩ শতক সময়কাল দেখেছেন। গত বছর ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ ‘পদ্মশ্রী’ সম্মাননা লাভ করেছেন। বিশ্বের ‘প্রবীণতম’ যোগসাধক বলা হয় তাকে। নিজের বয়সের প্রমাণ জাতীয় পরিচয়পত্র (ভারতীয়), পাসপোর্টসহ সব বৈধ পরিচয়পত্র আছে তার।

তিনি বলেন, সুস্থ জীবন ও দীর্ঘায়ুর রহস্য নিয়মিত যোগব্যায়াম ও খাদ্যাভ্যাস। রুটি আর সিদ্ধ সবজি খেয়ে বেঁচে আছি আমি। তেল, চর্বি এবং মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার, ফল-দুধ বর্জন করেছি অনেক আগেই। শরীরে কোনো রোগ বালাই নেই, দুঃখ-কষ্ট, দুশ্চিন্তা, কামনা-বাসনা নেই। কোনো প্রকার অর্থিক সহায়তা কিংবা দান গ্রহণ করি না। মধ্যরাতে ঘুম থেকে উঠে যোগব্যায়াম করি। আধ্যাত্মিক সাধনায় সিদ্ধিলাভ করতে মন্ত্রজপ করি।

ডক্টর স্বামী শিবানন্দের পড়াশোনা শুরু ১৯০১ সালে নবদ্বীপে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন তিনি। ১৯২৫ সালে তিনি বিদেশে যান উচ্চ শিক্ষার জন্য। তিনি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন। ১৯২৫ সালে শুরু করেন বিশ্বভ্রমণ। বিদেশি ভক্ত অনুরাগীদের আমন্ত্রণে তিনি ইংল্যান্ড, গ্রিস, ফ্রান্স, স্পেন, অস্ট্রিয়া, ইতালি, হাঙ্গেরি, রাশিয়া, পোল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, বুলগেরিয়া, যুক্তরাজ্যসহ অর্ধশতাধিক দেশ সফর করেছেন। ৩৪ বছর টানা বিদেশ ভ্রমণ করেন তিনি।

তার গুরু বিখ্যাত সন্ন্যাসী স্বামী ওঙ্কারানন্দরের নির্দেশে ১৯৫৯ সালে কাশীধামে ফিরে সাধনা শুরু করেন। নিঃস্বার্থভাবে করতেন সেবামূলক কাজ। আত্মত্যাগ ও দীর্ঘ অধ্যবসায়ের ফলে যোগশাস্ত্রকে এক অনন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। অনুশীলন ও নিয়মিত শরীরচর্চার মধ্য দিয়ে অর্জন করেছেন দীর্ঘায়ু। সন্ন্যাসী স্বামী শিবানন্দ (যোগী) বলেন, সম্পূর্ণরুপে বিশুদ্ধ ও নিরামিষ খাবার খাওয়ার জন্যই তিনি সুস্থ আছেন।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে আসেন ভারতের ধর্মগুরু স্বামী শিবানন্দ। তিনি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে যান। পরে চলে আসেন হবিগঞ্জে। তিনি বানিয়াচং উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিম হাওড় পাড় বিথঙ্গল গ্রামে একটি আখড়ায় অবস্থান করেন। রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ভারতে ফিরে যাবেন এই প্রবীণ ধর্মগুরু সন্ন্যাসী ডক্টর স্বামী শিবানন্দ (যোগী)।

মামুন/ফয়সাল


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়