ঢাকা     সোমবার   ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১৫ ১৪৩১

অজানা ভাইরাসে ২ শিশুর মৃত্যু

আইসোলেশন থেকে বাড়ি ফিরলেন বাবা-মা, তদন্তে আইইডিসিআর

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩৩, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  
আইসোলেশন থেকে বাড়ি ফিরলেন বাবা-মা, তদন্তে আইইডিসিআর

রাজশাহীতে অজানা ভাইরাসে দুই শিশুর মৃত্যুর পর সরেজমিনে তদন্ত কাজ শুরু করেছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রতিনিধি দল। ঢাকা থেকে আসা এই দলে তিনজন রয়েছেন। গতকাল রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাতেই রাজশাহী পৌঁছে তারা কার্যক্রম শুরু করেছেন। প্রতিনিধি দলে আইইডিসিআরের মেডিক্যাল অফিসার ডা. ক্য থোয়াই প্রু প্রিন্স ও ডা. মো. মাইনুল হাসান রয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহের জন্য আছেন সিনিয়র মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। 

আরও পড়ুন: নিপাহ নয়, অজানা ভাইরাসেই রাজশাহীর ২ শিশুর মৃত্যু

সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে প্রতিনিধি দলটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের আইসোলেসন ওয়ার্ডে গিয়ে মারা যাওয়া শিশু দুটির বাবা মনজুর রহমান (৩৫) ও মা পলি খাতুনের (৩০) সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলেন। দুপুরে দলটি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে চারঘাটের সারদায় ক্যাডেট কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এরপর দুপুরে মনজুর রহমান ও পলি খাতুনকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে পাঠানো হয়। এর আগে, গতকাল রাতেও দুই শিশুর বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে আইইডিসিআরের প্রতিনিধি দল।

আরো পড়ুন:

আরও পড়ুন: অজানা ভাইরাসে রাজশাহীতে ২ বোনের মৃত্যু, বাবা-মা হাসপাতালে

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহাম্মদ বলেন, ‘দুই শিশুর বাবা-মা এখন শারীরীকভাবে সুস্থ আছেন। তাই তাদের ছুটি দেওয়া হয়েছে।’

মনজুর রহমান চারঘাটের সারদায় থাকা রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিতের শিক্ষক। তার গ্রামের বাড়ি দুর্গাপুরের চুনিয়াপাড়া গ্রামে। তিনি দুই শিশুকন্যা ও স্ত্রীকে নিয়ে কলেজের কোয়ার্টারেই থাকতেন। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি গৃহকর্মী কলেজ ক্যাম্পাসের গাছের পড়ে থাকা বরই কুড়িয়ে এনে মনজুরের শিশুকন্যা দুই বছর বয়সী মুনতাহা মারিশা ও পাঁচ বছরের মুফতাউল মাশিয়াকে খেতে দিয়েছিলেন। না ধোয়া বরই খাওয়ার পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি ছোট মেয়ে মারিশার জ্বর আসে, সঙ্গে শুরু হয় বমি। হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়। দুদিন পর ১৬ ফেব্রুয়ারি মাশিয়ারও জ্বর ও বমি শুরু হয়। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রাজশাহীর সিএমএইচ হয়ে রামেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মাশিয়াও মারা যায়। এ অবস্থায় প্রাণঘাতি ভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কায় শিশু দুটির বাবা-মাকে আর হাসপাতাল থেকে যেতে দেওয়া হয়নি। তাদের আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল।

মারা যাওয়ার আগে দুই শিশুরই শরীরে ছোপ ছোপ কালো দাগ উঠেছিল। এটি নিপাহ ভাইরাসের লক্ষণ না হলেও শিশু দুটি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে আশঙ্কা করছিলেন চিকিৎসকেরা। তাই হাসপাতালে মারা যাওয়া শিশু এবং তার বাবা-মায়ের নমুনা পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছিল ঢাকায়। গতকাল রোববার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা যায়, তারা কেউই নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না। একটি ব্যাকটেরিয়ার পরীক্ষা করে তারও রিপোর্ট নেগেটিভ হয়েছে। তাই শিশু দুটি কোন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল তা এখনো জানা যায়নি।

রামেক হাসপাতালে সরেজমিনে তদন্ত করতে আসা আইইডিসিআরের মেডিক্যাল অফিসার ডা. ক্য থোয়াই প্রু প্রিন্স বলেন, ‘আমরা তদন্ত কাজ শুরু করেছি। কিন্তু, আমরা কোনো মন্তব্য করতে পারব না। আমরা সরেজমিনে তদন্তে যা পাব তা আমাদের কর্তৃপক্ষকেই জানাব।’

এই দলটির সঙ্গে ছিলেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘ল্যাবের পরীক্ষায় কিছু শনাক্ত করা যায়নি বলেই আইইডিসিআরের প্রতিনিধিদল ঢাকা থেকে এসেছেন। তারা সরেজমিনে সবকিছু তদন্ত করে দেখবেন। পাশাপাশি নমুনার আরও পরীক্ষা চলতে থাকবে। হাসপাতালে মারা যাওয়া শিশুটির পাকস্থলী থেকে খাবারের নমুনাও সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। সেটাও পরীক্ষা করা হবে। তাহলে জানা যাবে, খাবারে কোনো বিষক্রিয়া হয়েছিল কি না। আমরা সবাই দুই শিশুর মৃত্যুর কারণ জানতে চাই। এ জন্য যা যা করা প্রয়োজন তার সবকিছুই করা হচ্ছে।’

কেয়া/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়