ঢাকা     শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৭ ১৪৩১

মতলবের ক্ষীর

অমরেশ দত্ত জয়, চাঁদপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৫৯, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  
মতলবের ক্ষীর

চাঁদপুরের মতলব উপজেলার কলাদী গ্রামের গৃহবধু বিউটি রাণী ঘোষ। তিনি লাকড়ি জ্বালানো দাউ দাউ করা আগুনের চুলার ওপর কড়াইয়ের মধ্যে দেশি গরুর দুধ নেড়ে গরম করছেন। দুধ অনেকটা শুকিয়ে আসতে শুরু করলে এতে সামান্য পরিমাণে চিনি ঢেলে দিলেন। আরও কিছুক্ষণ নাড়ার পর কড়াই নামিয়ে ক্ষীর নির্দিষ্ট পাত্রে ঢাললেন। আর এমন কাজ করে বিউটি রাণী ২০১৮ সালে পেয়েছেন জাতীয় পল্লী উন্নয়ন পদক।

বিউটি রাণী বলেন, তিনি অনেকটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে ক্ষীর বানানোর কাজটা শুরু করেন। এখন দিনে ৪/৫ মণ দুধের ক্ষীর তৈরি করছেন। তার সফলতা দেখে স্থানীয় গৃহবধূরা ক্ষীর তৈরি করে বিক্রিতে আগ্রহী হচ্ছেন।

বিউটি রাণীর স্বামী উৎপল চন্দ্র ঘোষ বলেন, তিনি অন্য পেশায় থাকলেও স্ত্রীর অনুপ্রেরণায় ক্ষীর বিক্রির জন্য দোকান দিয়েছেন। খেতে সুস্বাদু হওয়ায় ক্রেতাদের থেকে সাড়া পাচ্ছেন। সৎভাবে বেঁচে থাকার পথ হিসেবে এ পেশাতেই টিকে আছেন।

আরো পড়ুন:

বিউটি রাণী ঘোষ মাটির চুলায় দুধ জ্বাল দিয়ে ক্ষীর বানালেও মতলব দক্ষিণ উপজেলার ব্যবসায়ীরা কারখানায় কারিগরের মাধ্যমে ক্ষীর তৈরি করছেন।

মতলব দক্ষিণ উপজেলার প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যমতে, উপজেলায় ৩টি নিবন্ধিত ডেইরি খামার ও ২৮৯টি অনিবন্ধিত ডেইরি খামারে দুধ উৎপাদন করা হয়। সেখানে ৪৬ হাজার ২২৫টি গরুর মধ্যে দেশি জাতের গরু রয়েছে ৩০ হাজার ৯৯৪টি। আর এর মধ্যে ৬ হাজার ২৫৪টি দেশি গাভী গরু দিচ্ছে। যেখান হতে বছরে ২ কোটি ৩০ লাখ লিটার দুধ পাওয়া যায়। যা মাসে ২ লাখ ৭০ হাজার লিটার। ক্ষীর তৈরিতে দেশি গরুর দুধ লাগে। 

ক্ষীরকে কেন্দ্র করে মতলবের ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেব মন্দির সংলগ্ন এলাকা, নারায়ণপুর বাজার, সাহেব বাজার, গাজীপুর বাজার, দগরপুর বাজার ও নায়ের গাঁও বাজারে সারি সারি বসে দুধ বেচাকেনার প্রচলন শুরু হয়েছে। যেখানে ঢাকির গাও এবং নারায়ণপুর বাজারের খামারিরাও দুধ নিয়ে আসেন।

আদি গান্ধী ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারের পরিচালক সজল ঘোষ বলেন, চাহিদা মেটাতে ক্ষীরের দোকানিদের গরু খামার পরিচালনা করতে হয় কিংবা অন্য বড় খামারিদের সঙ্গে চুক্তিতে গিয়ে দুধ সংগ্রহ করতে হয়। এক কেজি দুধের দাম অনুসারে ক্ষীর ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হয়। এক কেজি ক্ষীর বানাতে ৪ কেজি দুধ ও অল্প পরিমাণে চিনি লাগে। মতলবে ক্ষীরের পাশাপাশি মিষ্টি, রসমলাই, দধিসহ দুগ্ধজাত অনেক মিষ্টি তৈরি হয়।

মতলব দক্ষিণ যুব ঐক্য পরিষদ নেতা চন্দন বিশ্বাস বলেন, মতলবে আদি গান্ধী ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডার, ঘোষ কেবিন সুইটস, ভাই ভাই সুইটস এন্ড মিষ্টান্ন ভান্ডার, মধুবন মিষ্টান্ন ভান্ডার, আনন্দ ক্ষীর হাউজ, বৈশাখী সুইটসসহ অন্যান্য দোকানে সকাল হতে রাত পর্যন্ত ক্ষীর বেচাকেনা হয়।

মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতিমা সুলতানা বলেন, পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ক্ষীর বানানোর বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের নজরদারি আছে। মতলবের সুস্বাদু এ ক্ষীরের খ্যাতি সারা দেশে ছড়াতে উপজেলা প্রশাসন ব্যবসায়ীদের পাশে থাকবে।
 

/বকুল/

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়