ঢাকা     শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৮ ১৪৩১

ইতালি পাড়ি জমাতে গিয়ে লাশ হলেন গোপালগঞ্জের ৩ যুবক

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ২১:১৪, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
ইতালি পাড়ি জমাতে গিয়ে লাশ হলেন গোপালগঞ্জের ৩ যুবক

ইতালি যাওয়ার পথে মারা যাওয়া আপন, রাসেল ও রিফাত

ইতালিতে পাড়ি জমাতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে ট্রলার ডুবে মারা যাওয়া ৮ জনের মধ্যে তিন জনের বাড়ি গোপালগঞ্জে মুকসুদপুর উপজেলায়। মারা যাওয়া এই যুকদের বাড়িতে এখন চলছে শোকের মাতম। সংসারের হাল ধরতে দালালদের মাধ্যমে অবৈধ পথে বিদেশ যেতে গিয়ে সন্তানদের এমন পরিণতি মেনে নিতে পারছেন না কেউ। 

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার গয়লাকান্দি গ্রামের পক্ষঘাতগ্রস্ত পান্নু শেখ অপেক্ষায় রয়েছেন ছেলে ইমরুল কায়েস আপনকে ফিরে পাওয়ার আশায়। তিনি এখনো জানেন না ছেলে বেঁচে আছেন, নাকি মারা গেছেন। কেউ বলেছেন হাসপাতালে আছে। কেউ বলেছে জেলে। পান্নু শেখ বলেন, ‘আমি শুধু আমার ছেলেকে ফিরে পেতে চাই। ছেলেকে ফিরে পেলে আমার কোনো অভিযোগ নেই। ছেলেকে না পেলে তারপর ব্যবস্থা নেব।’ তার একটাই চাওয়া তিনি যেন তার ছেলেকে ফিরে পান।

আরও পড়ুন: তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবি: ৮ বাংলাদেশির পরিচয় প্রকাশ

আরো পড়ুন:

মারা যাওয়া ইমরুল কায়েস আপনের মা কেয়া কামরুন নাহার ছেলের মৃত্যুর খবর পেলেও জানাননি অসুস্থ স্বামীকে। কেয়া কামরুন নাহার ছেলের শোকে পাথর হয়ে গেছেন। কারো সঙ্গে কোনো কথা বলছিলেন না তিনি। 

শুধু ইমরুল কায়েস আপনই নয় একই উপজেলার বড়দিয়া গ্রামের দাদন শেখের ছেলে রিফাত শেখ ও ফতেপট্টি গ্রামের রাসেল শেখও ইতালি যাওয়ার পথে মারা গেছেন।

আরও পড়ুন: ইতালির পথে প্রাণ হারানো ৫ যুবকের বাড়িতে মাতম

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টায় মুকসুদপুর উপজেলার গয়লাকান্দি গ্রামে ইমরুল কায়েস আপন বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে শোকের ছায়া। জানা গেছ, বাবা পান্নু শেখ ২০০৪ সালে সৌদি আরবে যান। ১৫ বছর পর ২০১৯ সালে দেশে ফিরে একটি কোম্পানিতে গাড়ি চালকের চাকরি শুরু করেন তিনি। এক বছর আগে তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেললে বন্ধ হয়ে যায় আয় রোজগার। তাই সংসারের হাল ধরতে এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরুল কায়েস আপন ইতালি যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন পরিবারের কাছে। পরে রহিম নামের এক দালালকে ১১ লাখ টাকা দিয়ে গত ১০ জানুয়ারি ইতালির উদ্দেশ্যে পাঠান ছেলে আপনকে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি লিবিয়া থেকে ট্রলারযোগে ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা দেন আপন। ভূমধ্যসাগরে ট্রলার ডুবে আপন মারা যান। তার মৃত্যুর খরর বাড়িতে আসলে নেমে আসে শোকের ছায়া।

আরও পড়ুন: ইতালি যাওয়ার পথে মাদারীপুরের ৩ যুবকের মৃত্যু

পান্নু শেখ সৌদি আরব থাকার সময় ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে স্ত্রী কেয়া কামরুন নাহার পাবনায় বাবার বাড়িতে থাকতেন। ইমরুল কায়েস আপন পাবনাতেই পড়ালেখা করেছেন। সেখান থেকে এসএসসিও এইচএসসি রীক্ষায় জি‌পিএ-৫ পে‌য়ে পাস করেন তিনি। এরপর ভর্তি হন রাজশাহী এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

ইমরুল কায়েস আপনের বাবা পান্নু শেখ বলেন, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুরসহ আশপাশের অনেকেই ইতালি যায়। তাদের সঙ্গে ছেলেকে পাঠিয়েছেন। তাকে পাঠিয়ে এখন মনে হচ্ছে ভুল করেছি। গত ৮ জানুয়ারি এক্সিম ব্যাংকের টেকেরহাট শাখার মাধ্যমে দালাল রহিমের কাছে ১১ লাখ টাকা পাঠাই। রহিম লিবিয়ায় থাকে। তার বাড়ি মুকসুদপুর উপজেলার রাগদী ইউনিয়নের গজনা গ্রাম। জীবনের সঞ্চিত সব সম্বল দিয়ে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছি। 

বাদল/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়