ঢাকা     শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৮ ১৪৩১

বরগুনায় ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে পাঠদান

বরগুনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০৪, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  
বরগুনায় ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে পাঠদান

দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে বরগুনার ১৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঝুঁকি নিয়ে এসব স্কুলে পাঠদান করতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষকরা। এতে আতঙ্কিত অবস্থায় রয়েছেন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।

বরগুনার মোট ৭৯৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে জরাজীর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ১৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বরগুনা সদর উপজেলার নবাব সলিমুল্লাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৪০ জন শিক্ষার্থী ১২ জন শিক্ষক নিয়ে এই বিদ্যালয়টি। পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ না থাকায় জরাজীর্ণ কক্ষেই পাঠদান করাতে হচ্ছে এই বিদ্যালয়টিতে।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাইনুল হোসেন বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের দুইটি ভবন। একটি ভবন গত ২৫ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল। চারপাশে ওয়াল দিয়ে উপরে টিনের ছাউনি। গত ২৫ বছরে ছাউনির টিনগুলো অকেজো হয়ে গেছে। বর্ষাকালে পলিথিন দিয়ে তারপর পাঠদান করাতে হয়।

আরো পড়ুন:

সদরের দক্ষিণ মনসাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খান বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর পাতাকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গুদিঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আমতলী উপজেলার উত্তর আমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হলদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তালতলীর ছোট ভাইজোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ জেলার ১৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান চলছে।

স্কুল ভবনে পাঠদান করতে অসুবিধার কথা তুলে ধরে উত্তর আমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তামিমা আক্তার রোজি বলেন, বর্ষাকালে ছাদ থেকে পানি পড়ে শ্রেণিকক্ষের ভিতর। শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবহার উপযোগী টয়লেট নেই। বিশুদ্ধ পানি পানের জন্য নেই কোনো টিউবওয়েল। বিদ্যালয়ে আসার জন্য শিক্ষার্থীদের নেই কোনো পাকা সড়কও। বর্ষাকালে কষ্ট করেই আসতে হয় তাদের লেখাপড়া করতে এই বিদ্যালয়ে। একই কথা বলেন ওই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী সায়মা হাসান সানজিদা।

উত্তর আমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আলাউল হক পলাশ বলেন, বিদ্যালয় ভবনের কলামগুলো নিচের অংশ থেকে ভিন্ন জায়গায় ফাটল রয়েছে। বর্ষাকালে ছাদ থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি পড়ে শ্রেণিকক্ষে। সবসময়ই একটা ভয়ে থাকি কখন বিদ্যালয় ধসে আমাদের মাথায় পড়ে।

উত্তর পাতাকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুনা লায়লা বলেন, বিষখালি নদীর ভাঙন রক্ষা বাঁধের পাশেই আমাদের বিদ্যালয়। ঝুঁকিপূর্ণ একটি বিদ্যালয় ভবন ছিল। সেটিও নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে গত বছর। এখন কোনো রকমের টিনের বেড়া দিয়ে বিদ্যালয়ের পাঠদান কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ভালো ভবন না থাকায় শিক্ষার্থীরাও স্কুলে আসতে অনীহা জানায়। স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ও বিশুদ্ধ খাবারের পানিরও ব্যবস্থা নেই এ বিদ্যালয়ে। নতুন একটি ভবন পাওয়ার আবেদন জানিয়েছি কর্তৃপক্ষের কাছে, কিন্তু এখনো কোনো সাড়া পাইনি।

খান বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসিরুদ্দিন বলেন, সচিব এবং জেলা প্রশাসক মহোদয়দের স্কুলে এনে দেখিয়েছি এবং একাধিকবার স্কুলের ভবনের জন্য আবেদন করেছি কর্তৃপক্ষের কাছে। এখন পর্যন্ত ভবন অথবা কোনো বড় ধরনের বরাদ্দ পায়নি তারা। নতুন স্কুল ভবন নির্মাণের জন্য আবেদন জানিয়েছি কর্তৃপক্ষের কাছে।

বরগুনার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সুপ্রিয় মুখার্জি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি মন্ত্রণালয়ে। যেসব প্রতিষ্ঠানের ভবন মেরামত করলে আরও কিছুদিন ব্যবহার করা যাবে, সেসব ভবন মেরামত করে দেওয়া হবে।

ইমরান/ফয়সাল


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়