ঢাকা     সোমবার   ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১৫ ১৪৩১

অনেক স্কুলে মাতৃভাষার বই দেওয়া হয়নি

বান্দরবান প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫০, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ০৮:৪৬, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
অনেক স্কুলে মাতৃভাষার বই দেওয়া হয়নি

পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি শিশুদের জন্য মাতৃভাষার পাঠ্যপুস্তক প্রবর্তনের আট বছরেও পুরোদমে ক্লাসে তা কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না।

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বান্দরবান আলীকদমে আমতলী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দয়াল চন্দ্র পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চম্পট পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গেলে, আদিবাসীদের মাতৃভাষায় বই এখনো পাননি বলে জানিয়েছেন এইসব বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

গত বছরগুলোতে আদিবাসীদের মাতৃভাষার বই দেওয়া হলেও শিক্ষক না থাকায় পড়াতে পারেননি। তাছাড়া এ বছরে আদিবাসীদের মাতৃভাষায় বই এখনো পাননি বলে অভিযোগ করেন বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

আরো পড়ুন:

২০১৭ সাল থেকে সরকার দেশের পাঁচটি মাতৃভাষার প্রাক-প্রাথমিকে পাঠ্যপুস্তক প্রবর্তন করে। প্রথম দফায় পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাদের ভাষায় বই ছাপানো হয়েছে। এ ছাড়া সমতলের সাদ্রি ও গারো শিশুরাও নিজেদের ভাষায় পাঠ্যপুস্তক পেয়েছে। ২০১৭ সালে প্রাক-প্রাথমিক এবং পর্যায়ক্রমে ২০২০ সালে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষায় ছাপা হয়।

আমতলী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় দুইশো ছাত্রছাত্রী রয়েছে। তার মধ্যে মারমা, চাকমা ও তংচংগ্যাসহ মোট ৬৭ জন আদিবাসী সম্প্রদায়ের ছাত্র-ছাত্রী আছে।

স্কুলে গিয়ে শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর আদিবাসীদের মাতৃভাষায় বই দেওয়া হলেও এ বছর এখনো দেওয়া হয়নি। তাছাড়া আদিবাসী ভাষায় দক্ষতা সম্পন্ন শিক্ষক না থাকায় পড়াতে পারছেন না বলেও জানান।

শিক্ষক দেশমনি তংচংঙ্গ্যা বলেন, আমাদের স্কুলে ত্রিপুরা, ম্রো ও তংচংঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা বেশি থাকা সত্ত্বেও এখনো তংচংঙ্গ্যা ভাষায় বই প্রকাশিত হয়নি বলে চাইলেও পড়াতে পারছি না।

একই উপজেলায় দয়াল চন্দ্র পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুলে প্রায় দেড়শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী আছে। এদের মধ্যে ৩০ জনের অধিক মারমা ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে।

এই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রইলে ম্রো ও সহকারী শিক্ষিকা কোহিনুর আক্তার জানান, স্কুলে মোট ৫ জন শিক্ষক আছেন। শিক্ষকদের মধ্যে একজনও মারমা সম্প্রদায়ের শিক্ষক না থাকায় গেল বছরগুলোতে মারমা ভাষায় পাঠদান করতে পারেনি। প্রশিক্ষণও কেউ পায় নাই। পড়াতে চাইলেও পারি না।

সহকারী শিক্ষক বিপ্লব কান্তি দাশ বলেন, যদি আদিবাসীদের মাতৃভাষার বইগুলোতে মাতৃভাষার হরফের পাশাপাশি বাংলা উচ্চারণের লিখিত রূপ সম্বলিত থাকলে আমরাও পড়াতে পারতাম। সেই সঙ্গে নিজেরাও শিখতে পারতাম। যেমনটি ইংরেজি ও আরবি ভাষায় লেখা থাকে।

চম্পট পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কয়েকজন ত্রিপুরা শিক্ষার্থী বলেছে, 'এখনো মাতৃভাষার বই পাইনি।'

চম্পট পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াহুল হক বলেন, এই স্কুলে মোট ৩০২ জন ছাত্র-ছাত্রী আছে। এদের মধ্যে মারমা, তংচংগ্যা, ত্রিপুরা ও ম্রো মিলে ৯১ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। এ বছর আদিবাসী সম্প্রদায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মাতৃভাষার বই এখনো আসেনি বিধায় বিতরণ করতে পারি নাই।

আলীদকদম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় সরকারি ও বেসরকারি মিলে মোট ৭৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। অফিসে বই বিতরণের লিস্টে দেখা যায় সরকারি নিয়মানুযায়ী বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে বই বিতরণ করা হয়েছে। তবে বইয়ের গুদাম খুললে দেখা যায়, গুদামে আদিবাসীদের মাতৃভাষার পাঠ্যপুস্তক থরে বিথরে পড়ে আছে।

বিদ্যালয়গুলোতে আদিবাসীদের বই না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, আমি গত ২৮ ডিসেম্বরে যোগদান করেছি। সে হিসেবে আমি এই উপজেলায় একদম নতুন। মাতৃভাষার বই পায়নি বলেও কেউ অভিযোগ করে নাই। এখনো যদি বই বিতরণ করা না হয় তাহলে অতি শিঘ্রই বিতরণের ব্যবস্থা করা হবে।

চাইমং/ফয়সাল

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়