ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে রাতভর রং-তুলির কর্মযজ্ঞ, রঙিন হলো সড়ক

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১৩, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ২১:৩৫, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে রাতভর রং-তুলির কর্মযজ্ঞ, রঙিন হলো সড়ক

মধ্যরাত, রং-তুলির কর্মযজ্ঞে রঙিন হচ্ছে শহিদ মিনারে যাওয়ার পিচঢালা পথ। কাজ করছে একঝাঁক শিক্ষার্থী। কেউই পেশাদার শিল্পী নয়। উৎসাহ থেকেই উদ্যোগ। তারপর নেমে পড়া। প্রথমবারের মতো একটি পুরো সড়ক রাঙানোর আনন্দ তাদের চোখেমুখে।

ঢাকার ধামরাইয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে উপজেলা পরিষদের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনের সড়কে আলপনা আঁকা হয় মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে। সেখানে গিয়ে দেখা মেলে এসব শিক্ষার্থীর।

কারো হাতে বড় ডাস্টার। লম্বা লম্বা সাদা রংয়ের দাগে গড়ে তুলছে আলপনার অবয়ব। কেউ বা আলপনাকে রঙিন করতে সেখানে ফুটিয়ে তুলছে ভিন্ন রং। লাল, নীল, সবুজ, হলুদ বিভিন্ন রঙে রাঙানোর এ কর্মযজ্ঞে যোগ দেয় ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী। জানা গেল, কোনো সংগঠন কিংবা কোনো প্ল্যাটফর্মে নয়; বরং কয়েকজনের প্রচেষ্টায় এ কর্মযজ্ঞ। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, অমর একুশে উপলক্ষে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারসহ নানা জেলা, উপজেলার সড়ক, শহিদ মিনারের পাদদেশে আলপনা আঁকা হয়। কিন্তু ধামরাইয়ে তো এমন কিছু কখনও হয়নি। সেখান থেকেই চিন্তা আসে আলপনা আঁকার। 

জানা গেল, কোনো পৃষ্ঠপোষক ছাড়াই একে একে একত্র হন তারা।

উদ্যোগের শুরুটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ নাওভি, কলেজ পড়ুয়া সোহেল রানা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সজীব হোসেন। উপজেলার তিন প্রান্তে তিনজনের বাড়ি। তবে ধামরাইকে রঙিন করার চিন্তা থেকে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় তাদের বন্ধুরাও। 

‘কাজের শুরুতেও ছিল না পেশাদার কেউ। যে একজন আসার কথা তারও দেরি হচ্ছিল। শেষমেশ যখন কূল-কিনারা মিলছে না, তখনই তাদের সঙ্গে দেখা হয় ধামরাই থেকে ঢাবির চারুকলায় পড়া জাহিদ হাসান ও আর্ট কলেজের শরণ হোসাইনের। শেষমেশ এই দুই শিল্পীর নেতৃত্বে আকার পেতে থাকে আলপনা। সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করে বাকিরাও।’

কোনো সংগঠন কিংবা প্ল্যাটফর্মের না হয়েও একত্র হওয়ার ঘটনা জানতে চাইলে সাব্বির আহমেদ নাওভি বলেন, শুরুতে দুই তিনজন উদ্যোগ নেই। উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভার অনুমতি নেই। এরপর যার যার বন্ধুবান্ধবকে একত্র করি। আইডিয়াটা জানাতেই সবাই সাড়া দেয়। নিজের মতো করে চলেও আসে।

এতো বড় কর্মযজ্ঞের অর্থের যোগান পেতে বেগ পোহাতে হয়েছে বলে জানান তারা। সাব্বির বলেন, চেনাজানা পেশাদার শিল্পী কাউকে পাচ্ছিলাম না। উদ্যোগ নিয়ে খোঁজ নিতে শুরু করি রংমিস্ত্রিদের কাছে। যে হিসাব দেন ওই অর্থের যোগাড়ে বেশ বেগ পোহাতে হয়। এক দুইজন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি পৃষ্ঠপোষকতা করতে চাইলেও নানা নিয়ম বেধে ও তাদের পছন্দসই মতো করতে বললে আমরা সরে আসি। তারপর নিজেরাই কাজ শুরু করি। তবে সাহস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়।

এই আঁকাআঁকি চলতে চলতেই ঘড়ির কাঁটার সময় চলে আসে ১২টায়। একে একে ইউএনও, ওসি, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফুল দিতে উপস্থিত হন কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে। ফুল দেওয়া শেষে ফেরার সময় আলপনা মনোযোগ দিয়ে দেখেন অনেকেই। কেউ কেউ তুলে নেন ছবিও। শিক্ষার্থীদের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান তারা।

ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাজওয়ার ইবনে সাকাপি সাজ্জাদ বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের যে কোনো ভালো কাজে উপজেলা প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। 

সাব্বির/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়