ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৪ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২০ ১৪৩১

খতনায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ

সেই শিশুর চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ বাবার, নাকচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের

নোয়াখালী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৩৮, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ২০:৪০, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
সেই শিশুর চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ বাবার, নাকচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে খতনার সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অসুস্থ শিশু আল নাহিয়ান তাজবীবের (৭) চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ করেছেন তার বাবা আলমগীর হোসেন বাদল। শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন তিনি। হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম বলেন, শিশুর চিকিৎসায় কোনো গাফিলতি হচ্ছে না। হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) ডা. সাইফ উদ্দিন তাকে (নাহিয়ান) দেখভাল করছেন।  

নাহিয়ানের বাবা আলমগীর হোসেন বাদল বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা আমাদের ব্যাপক আশ্বাস দিয়ে নাহিয়ানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে নিয়ে আসেন। এখানে আসার পর থেকে আমার ছেলে আশানুরূপ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না। আজ শুক্রবার সকাল থেকে তার জ্বর। কিন্তু, চিকিৎসক একবারের জন্যও তাকে দেখতে আসেনি। হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে আজ শুক্রবার তাই ডাক্তার আসবেন না।

অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে খুবই যত্ন সহকারে চিকিৎসা দিচ্ছে। হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) ডা. সাইফ উদ্দিনের তত্ত্বাবধায়নে শিশুটির চিকিৎসা চলছে। তিনি শিশুটিকে শুক্রবার বিকেলে এসে দেখে গেছেন। শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি অছে। তবে, তাতে ভয়ের কিছু নেই। সেবক-সেবিকারা আন্তরিকতার সঙ্গেই সেবা দিচ্ছে। সে এখন ভালোর দিকে আছে।

প্রসঙ্গত, বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নের প্রবাসী আলমগীর হোসেন বাদল তার ছেলেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান খতনার জন্য। তখন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রহরীসহ তিনজন শিশুটির বাবাকে ডাক্তার আসবেন বলে জরুরী বিভাগে নিয়ে নিজেরাই খতনা করাতে থাকেন। এ সময় তিনি জরুরী বিভাগে গিয়ে আবারও চিকৎসকের খোঁজ করলে তারা নিজেদেরকে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ দাবি করে ছেলের বাবাকে আশ্বস্ত করে সেখান থেকে বের করে দেন। এর কিছুক্ষণ পর ছেলের চিৎকার শুনে তিনি সেখানে গিয়ে দেখেন শিশুর অতিরিক্ত রক্তপাত হচ্ছে। এ সময় খতনা করানো উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা বিজয় কুমার দে ও শিক্ষানবীশ উপ-সহকারী কর্মকর্তা সৌরভ ভৌমিক কৌশলে জরুরী বিভাগ থেকে পালিয়ে যায়।

ঘটনা শুনে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সেলিম জরুরী বিভাগে এসে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেন। এ ঘটনার পরের দিন স্বাস্থ্য বিভাগের চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন ও জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। তারা শিশুর বাবার অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা বিজয় কুমার দে’কে কক্সবাজার জেলার সেন্টমার্টিন দ্বীপ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলির আদেশ দেন। অভিযুক্ত শিক্ষানবীশ উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা সৌরভ ভৌমিকের বিরুদ্ধে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা হয়। ঘটনা তদন্তে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. যোবায়েরকে প্রধান ও উপজেলা মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. শাহাদাত হোসেনকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

সুজন/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়