হাতির আক্রমণে মৃত্যু
‘অবুঝ ছেলের এভাবে মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না’
আবু নাঈম, পঞ্চগড় || রাইজিংবিডি.কম
‘আমার ছেলেটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছিল। আব্বা আর মা ছাড়া তেমন কোনো কথা বলতে পারতো না। কয়েক বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় আমার পা ভেঙে যায়। এরপর থেকে আমার সঙ্গে দোকানে বসে ব্রয়লার মুরগির মাংস বিক্রিতে সাহায্য করতো সে। আমার সব কথা সে ইশারায় বুঝতো। আমি গরিব মানুষ। অবুঝ ছেলের এভাবে মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না’
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় গত মঙ্গলবার ভারত থেকে আসা বন্য হাতির আক্রমণে মারা যাওয়া প্রতিবন্ধী যুবক নুরুজ্জামানের (২৩) বাবা আবদুল হামিদ ওরফে আবুল হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন। নুরুজ্জামানের বাড়ি তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ গ্রামে। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।
আব্দুল হামিদ বিলাপ করে বলেন, ‘হাতির আক্রমণের পর হাসপাতালে নেওয়ার সময় নাক-মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছিল ছেলেটার। অ্যাম্বুলেন্সে আমি ওকে জড়িয়ে ধরে ছিলাম। তিনবার আব্বা ডেকে চোখের সামনেই মারা গেল ছেলেটা। আমার সব শেষ হয়ে গেলো।’
তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার ভোরে দুটি বন্য হাতি তেঁতুলিয়ার শালবাহান ইউনিয়নের ইসলামবাগ এলাকা দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢোকে। পরে হাতি দুটি দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ এলাকার মহানন্দা নদীসংলগ্ন নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির ভুট্টাখেতে অবস্থান নেয়। হাতি আসার খবর জানাজানি হলে উৎসুক লোকজন হাতি দেখতে ভুট্টাখেতের চারপাশে ভিড় করেন। উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের পক্ষ থেকে হাতির কাছাকাছি যেতে নিষেধ করে মাইকিং করা হয়। বিকেল সোয়া ৫টার দিকে হাতি দুটি ভুট্টাখেত থেকে বের হয়ে ছুটোছুটি শুরু করে। তখন হাতির আক্রমণে নুরুজ্জামান আহত হন। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আহত নুরুজ্জামানকে উদ্ধার করে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা তাঁকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখানে জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে নুরুজ্জামানের মৃত্যু হয়।
হাতির আক্রমণে মারা যাওয়া নুরুজ্জামানের পরিবারকে তিন লাখ ক্ষতিপূরণ দেবে বন বিভাগ। শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাইজিংবিডিকে এতথ্য জানান বন বিভাগের দিনাজপুর অঞ্চলের সহকারী বন সংরক্ষক নুরুন্নাহার। তিনি বলেন, বন্যপ্রাণী জানমালের ক্ষতি করলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধি রয়েছে। যেহেতু, মারা গেছে, তাই ওই পরিবারকে তিন লাখ টাকা দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে বন বিভাগের একটি টিম ওই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে একটি আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছে। একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হবে। কমিটিতে আমি সদস্য সচিব থাকবো। আমরা বন্য হাতির আক্রমণে মৃত্যুর বিষয়ে প্রতিবেদন দিলে আগামী ৬০ দিনের মধ্যেই ক্ষতিপূরণ পাবে ওই পরিবার। সবকিছু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বন্য হাতি দুটি ভারত থেকে আসা, নিহতের পরিবারকে ভারতীয় বন বিভাগ কোনো ক্ষতিপূরণ দেবে কি-না জানতে চাইলে বন বিভাগের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদেরও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধি রয়েছে। আলাদা ভূখণ্ডে হওয়ায় তারা কোনো ক্ষতিপূরণ দিতে পারবে কি-না তা এখনো নিশ্চিত করেনি।
মাসুদ