হাইমচরে সম্ভাবনাময় পেশা ‘নারিকেলের ছোবড়া বিক্রি’
অমরেশ দত্ত জয়, চাঁদপুর || রাইজিংবিডি.কম
চাঁদপুরের হাইমচর। চরাঞ্চল হওয়ার সুবাদে এখানে নারিকেলের ভালো ফলন হচ্ছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বেকার যুবকরা নারিকেলের ফেলা দেওয়া অংশ আঁশ বা ছোবড়া বিক্রির পেশায় আকৃষ্ট হচ্ছেন। স্থানীয় অনেকেই এটিকে সম্ভাবনাময় পেশা বলে মনে করছেন।
আর তাই এই শিল্পকে ঘিরে কর্মপরিকল্পনা নেওয়ার আশ্বাস দিলেন বর্তমান ইউএনও পূর্বিতা চাকমা।
শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) মেঘনা নদীর পূর্বপাড়ে মাস্টার সুনিল সরকারের বাগানে গেলে আলাপে আলাপে পাওয়া যায় নারিকেলের ছোবড়া বেচাবিক্রির অনেক খবর।
তারা জানান, বাড়ি বাড়ি গিয়ে পাইকাররা বা ছোবড়া বিক্রিতে সংশ্লিষ্টগণ একবারে অনেক নারিকেল দরদাম করে কিনে নেন। ছোবড়া ২১ থেকে ২৫ টাকা এবং এর উচ্ছিষ্ট ভূষি ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
ছোবড়া জাজিম ও সোফার ভেতরেসহ নানাকাজে ব্যবহৃত হয়। আর ভুষি হাঁস মুরগি ফার্মে এবং কফি হাউজগুলোতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
নারিকেলের ছোবড়া বিক্রিতে জড়িত শান্তি সরকার, নিতাই সরকার, মাখন ছৈয়ালসহ অন্যরা বলেন, আমরা প্রতিদিনই যাদের বাড়িতে নারিকেল গাছ আছে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিয়ে নারিকেল সংগ্রহ করি। এরপর নারিকেলের ছোবড়া শ্রমিকের মাধ্যমে আলাদা করে এগুলো বিক্রি করছি। শুধু নারিকেলের ছোবড়া নয় বরং নারিকেলটির ছোবড়া করার পর যেই তুষ বা ভুষি বের হয় সেগুলোও বস্তাভর্তি করে বিক্রি করে ব্যবসা করছি।
যাদব চক্রবর্তী, মো. আলামিন, বাবুল বেপারী, জাহাঙ্গীর বেপারীসহ কয়েকজন বললেন, প্রতি এক জোড়া নারিকেল বর্তমানে ১৫০ টাকা দামে ক্রয় করছি। তবে কখনো কখনো সময় অনুযায়ী ৬০ টাকা জোড়াও কিনে থাকি। ছোবড়া আলাদা করে বিক্রি করলে প্রতিটি নারিকেলের ছোবড়া ৩/৪ টাকা দামে বিক্রি হয়। আর সততার সাথে এ থেকে যা লাভ হয় আমরা এতেই সন্তুষ্ট।
তবে ছোবড়া তোলার কাজে নিয়োজিত নিমাই তালুকদারসহ অন্যান্য শ্রমিকরা জানালেন, নারিকেল থেকে ছোবড়া উঠানোর কাজটি সহজ নয়। ছোবড়া উঠানোর এ কাজে আমরা প্রতি নারিকেল থেকে ১ টাকা থেকে ১ টাকা পঁচিশ পয়সা পর্যন্ত পারিশ্রমিক পেয়ে থাকি। দিনে ৬/৭ শ নারিকেলের ছোবড়া উঠানো যায়। যদি আমাদের দিকে সহায়তা নিয়ে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা এগিয়ে আসতো তাহলে হয়তো অন্য বেকাররাও সম্ভাবনাময়ী এ পেশায় ঝুঁকতো।
এই বিষয়ে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাকিল খন্দকার বলেন, নারিকেল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে আমরা চাষিদের এরমধ্যেই ৫ শ নারিকেলের চারা বিতরণ করেছি। নারিকেলের সব অংশই বিক্রয়যোগ্য। নারিকেলের ছোবড়া জ্বালানি ছাড়াও জাজিম, পাপোস, রশি, সোফা ও চেয়ারের গদিসহ বিভিন্ন ধরণের সৌখিন ও প্রয়োজনীয় পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এসব তৈরিতে যথাযথ বিকল্প উপকরণ না থাকায় সবখানেই হাইমচরের নারিকেলের ছোবড়ার বেশ কদর রয়েছে।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূর্বিতা চাকমা বলেন, নারিকেলের ছোবড়া বিক্রি করে ভাগ্য বদলের প্রচেষ্টায় রয়েছে হাইমচরের নারিকেল চাষিরা। বৈশাখ মাস থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত এখানে নারিকেলের উৎপাদন বেশি হয়। শহরের পাইকার বা তৈল কারখানার লোকজন নারিকেল অর্ডার করে এখানকার পাইকারদের থেকে কিনে থাকেন। তাই উনাদের এ ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে উনারা আমাদের কাছে আসলে সকলে বসে এ নিয়ে কি করা যায় সে কর্মপরিকল্পনা সাজাবো।
/টিপু/