‘সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী অধিকাংশ বাঁধের কাজ হয়নি ’
মনোয়ার চৌধুরী, সুনামগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম
সুনামগঞ্জে দুই-তিন দিন থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় কয়েকটি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধে ফাটল ধরেছে। এছাড়া বৃষ্টির ফলে বাঁধের কোথাও কোথাও মাটি দেবে গেছে। বাঁধের কাজ নীতিমালা অনুযায়ী না করার কারণই সামান্য বৃষ্টিতে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কৃষক ও ‘হাওর বাঁচাও’ আন্দোলনের নেতারা।
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওরের দাসনওয়াগাঁও থেকে হালেয়া প্রকল্পের কিছু কিছু অংশে ফাটল ধরেছে। এছাড়া, শান্তিগঞ্জ উপজেলার দেখার হাওর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরের ৮টি বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে।এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
আগাম বন্যা বা পাহাড়ি ঢলের হাত থেকে সুনামগঞ্জের ফসল রক্ষার জন্য সরকারিভাবে হাওরে নির্মাণ করা হয় ফসলরক্ষা বাঁধ। এবার সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলার বিভিন্ন হাওরে ফসল রক্ষার জন্য ৭৩৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করা হয়েছে। যার মধ্যে ৭৩৪টি অংশে ৫৯১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। ফেব্রুয়ারি মাসের ২৮ তারিখের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। তবে, এখন পর্যন্ত অধিকাংশ বাঁধের কাজ বাকি রয়েছে বলে কৃষকদের অভিযোগ।
বাঁধের কাজের মান ভালো না হওয়ার অভিযোগ করে খরচার হাওরের কৃষক আশিক মোড়ল রাইজিংবিডিকে বলেন, খরচার হাওরে বাঁধের যে কাজ করা হয়েছে তা পাহাড়ি ঢল আসলে টিকবে না। দুই দিনের বৃষ্টিতেই বাঁধের অবস্থা কাহিল। জানি না এবার কোন বিপদে পড়ি আমরা।
সদর উপজেলার কৃষক সাইদুর আলম বলেন, বৃষ্টি আমাদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার আর মাত্র চার দিন বাকি আছে। এর মধ্যেই অল্প বৃষ্টিতে বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। বন্যা হলে এই দুর্বল বাঁধ ভেঙে আমাদের সব ধান ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। বাঁধের ওপর কোনো বিশ্বাস নেই। আমরা সবকিছু এখন আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি।
জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওরের কৃষক সুলেমান হোসেন বলেন, ‘আমরা সাধারণ কৃষক। আমাদের কথা রেকর্ড কইরা নিলে কী কেউ শুনবো। এবার কতো টাকা হাওলাত করে হাওরে ধান চাষ করছি। এখন যদি বাঁধের সঠিক কাজের অভাবে হাওর ডুবে টাকা ফিরতে দিবো কিভাবে, সারাবছর খাবো কিভাবে। বাঁধের কাজে গাফলাতি বন্ধ না হলে কৃষক বাঁচা কঠিন হয়ে যাবে। আমি সরকাররে অনুরোধ জানাই যাতে বাঁধের কাজ সঠিভভাবে শেষ হয়।’
হাওর বাঁচাও আন্দোলন-এর কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালেহিন চৌধুরী শুভ বলেন, ‘বাঁধের কাজে শুরু থেকেই আমরা অনিয়ম দেখতে পাচ্ছি। বারবার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও আসছি। কিন্তু, অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করার কথা। হাওরের অধিকাংশ বাঁধের কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি। সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী অধিকাংশ বাঁধের কাজ হয়নি। অগ্রগতিও সন্তোষজনক নয়। সাম্প্রতি অল্প বৃষ্টিতে অনেকগুলো বাঁধে ফাটল দেখা দেওয়ায় আমরা চিন্তিত। অধিকাংশ বাঁধেই দায়সারাভাবে কাজ করা হয়েছে।
দুই-তিন দিনের বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জের ফসল রক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দেওয়ার কারণ কী? এমন প্রশ্নের জবাবে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-১ মামুন হাওলাদার রাইজিংবিডিকে বলেন, বৃষ্টি হওয়ার কারণে বাঁধে রেইন কাট হয়েছে। ফাটল দেখা দেয়নি কোথাও, বাঁধ টেকসই আছে। কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে রেইন কাট হয়েছে। আমাদের পিআইসিদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। বৃষ্টি না থাকায় তারা ইতোমধ্যে বাঁধের রিপিয়ারিং কাজ শুরু করেছেন। ফসল রক্ষা বাঁধের কাজের অগ্রগতি ৮১ শতাংশ।
মনোয়ার/মাসুদ