ঢাকা     রোববার   ০৭ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২৩ ১৪৩১

নরসিংদীতে ৭০০ বছরের পুরনো বাউল মেলা   

নরসিংদী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৪:৫৩, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
নরসিংদীতে ৭০০ বছরের পুরনো বাউল মেলা   

নরসিংদীর মেঘনা-তীরে শুরু হয়েছে বাউল ঠাকুরের মেলা। দেশ-বিদেশের ভক্তদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী এই মেলা প্রাঙ্গণ। আত্মশুদ্ধি আর আত্মমুক্তির লক্ষ্যে কীর্তন, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সরব হয়ে উঠেছে মেঘনা পাড়ের বাউল ঠাকুরের আখড়াধাম।

সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে যজ্ঞানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ৭০০ বছরের পুরনো এই মেলার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। মেলা চলবে আগামী বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত।

সরেজমিনে মেলা ঘুরে দেখা যায়, মেলা উপলক্ষে মেঘনার পাড়ে শিশুদের হরেক রকমের খেলনা, খাবারসহ বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। কুটির শিল্প, মৃৎশিল্প, কাঠ-বাঁশ ও মাটির তৈরি বিভিন্ন সামগ্রীর হরেক রকম দোকানে চলছে বেচাকেনা। এ ছাড়াও শিশুদের আকৃষ্ট করতে মেলায় বসেছে পুতুল নাচ, নাগর-দোলাসহ নানা বিনোদন-আয়োজন। 

আখড়াবাড়ি সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর মাঘী পূর্ণিমার দিন শ্রীচৈতন্য দেবের জন্মতিথী উপলক্ষে এই মহাযজ্ঞের আয়োজন করা হয়। মেলা ঘিরে লক্ষাধিক নারী-পুরুষের সমাগম ঘটে। নদীতে ভক্তরা পুণ্যস্নান করেন। পাশেই রয়েছে বাউল ঠাকুরের আখড়া। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাউল শিল্পীরা আখড়ায় এসে গানের আসর বসান। 
কথিত আছে, ৭০০ বছর আগে নরসিংদীতে এক বাউল ঠাকুর ছিলেন। তিনি নিজেকে শুধু বাউল বলেই পরিচয় দিতেন। এজন্য বাউল ঠাকুরের প্রকৃত নাম জানা যায়নি। তাকে স্মরণ করেই তার আখড়াধামে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই বাউল মেলা। তবে কে প্রথম বাউল মেলার আয়োজন করেন প্রকৃত তথ্য জানা যায় না। সর্বশেষ ব্রিটিশ শাসনামল থেকে এখন পর্যন্ত মেলার আয়োজন করছেন রামচন্দ্র বাউল, জিতেন্দ্রচন্দ্র বাউল, ডা. মনিন্দ্রচন্দ্র বাউল ও তাঁর পরবর্তী প্রজন্ম। গত দুই বছরে আখড়াবাড়ির সেবায়েত তত্ত্বাবধায়ক প্রাণেশ কুমার ঝন্টু বাউল ও মৃদুল বাউল, মিন্টু বাউল এ তিন ভাই মৃত্যুবরণ করলে তাদের পরিবর্তে বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সাধনচন্দ্র বাউল।

বাউল ভক্ত ও দর্শনার্থীরা জানান, এই আখড়ায় বাউল ঠাকুরের অন্তর্ধান হয়েছিল। বাউল আখড়ায় জগন্নাথ দেবতার মন্দির রয়েছে। মন্দিরে মহাবিষ্ণুর পূর্ণাঙ্গ প্রতিমা, জগন্নাথ দেবতার প্রতিমা, মা গঙ্গার (৩৩ কোটি দেবতার) ঘট, নাগ দেবতার বিগ্রহ ও শিবলিঙ্গ রয়েছে, যা বাউল ঠাকুর নিজে প্রতিস্থাপন করে গেছেন বলে কথিত রয়েছে। পাশে রয়েছে বাউল ঠাকুর ও মাতাজির সমাধি মন্দির। শুক্রবার ব্রহ্মা দেবের পূজা মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয় এখানে। 

মেলার আয়োজক সাধনচন্দ্র বাউল বলেন, জীবের মঙ্গলার্থে বাউল ঠাকুরের আবির্ভাব হয়েছিল। কীভাবে সহজে মানুষ নিজেকে চিনতে পারবে সেই পথ তিনি দেখিয়ে গেছেন। আমরা তার পথ অনুসরণ করে ভেদাভেদ না করে ঈশ্বরের সৃষ্টিকে ভালোবেসে যাচ্ছি। জাতীধর্ম নির্বিশেষে প্রতিবছর সকলের মিলন ঘটানোর জন্যই মেলার এই আয়োজন। 
 

হৃদয়//

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়