খুলনায় সালাম মূর্শেদী-বাদশা দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে
মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম
![খুলনায় সালাম মূর্শেদী-বাদশা দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে খুলনায় সালাম মূর্শেদী-বাদশা দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে](https://cdn.risingbd.com/media/imgAll/2024February/Khulna-2402271031.jpg)
রূপসা উপজেলা আ.লীগের সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন বাদশা এবং খুলনা-৪ আসনের এমপি আব্দুস সালাম মূর্শেদী
খুলনা-৪ আসনের (রূপসা-দিঘলিয়া-তেরখাদা) সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদী এবং রূপসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং উপজেলা চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন বাদশার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় পর্যায়ের শীর্ষ পদধারী এই দুই নেতা একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। মূলত, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরেই উভয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব দানা বাঁধে।
এদিকে, উল্লিখিত দুই নেতাকে ঘিরে স্ব-স্ব বলয়ের নেতাকর্মীরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যেই দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছে। এক পক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে করেছে বিশদগার।
মো. কামাল উদ্দিন বাদশার সংবাদ সম্মেলন: সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) খুলনা প্রেসক্লাবে সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদী’র বিরুদ্ধে দলীয় নেতাকর্মীদের সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য এবং হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেন রূপসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন বাদশা।
তিনি সালাম মূর্শেদীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে বলেন, গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে খুলনা-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক হুইপ এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার ভাই স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম মোর্তজা রশিদী দারা কাটিং ভোটের প্রায় ৪২ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৬১ হাজার ভোট পান। নৌকার প্রার্থী আব্দুস সালাম মূর্শেদী ভোটের ফলাফলে বিজয়ী ঘোষিত হন। বিজয়ী ঘোষণার পর পরই এমপি সালাম মূর্শেদীর প্রত্যক্ষ নির্দেশে খুলনা-৪ আসনের বিভিন্ন স্থানে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থানকারী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অত্যাচার, নির্যাতন, জখম এবং তাদের সম্পদ ও ব্যবসা লুট ও দখল করা হয়।
কামাল উদ্দিন বাদশা বলেন, সংসদ সদস্য সালাম মূর্শেদী গত ১৫ ফেব্রুয়রি খুলনায় আসেন এবং খুলনা-৪ আসনের রূপসা, তেরখাদা এবং দিঘলিয়া উপজেলাব্যাপী বিভিন্ন ইউনিয়নে গত ১৫ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তার অনুসারীদের সঙ্গে মতবিনিময়সহ বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি প্রকাশ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে আওয়ামী লীগের যে সমস্ত নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের অশ্লীল ভাষায় হুমকি দিয়েছেন। এমনকি, স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষের নেতাদের দলীয় পদপদবী খেয়ে ফেলার হুমকি ও তাদের সালাম দিতেও জনগণকে নিষেধ করেছেন। তিনি ক্ষমতা ও দায়িত্বের এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে রূপসা উপজেলার আইচগাতী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেছেন। সংসদ সদস্য সালাম মুর্শেদী উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মীরজাফর! ইত্যাদি বলে গালি দিয়েছেন। তিনি আমাকেও (রূপসা উপজেলা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান) প্রকাশ্য সভায় রাজাকার বলে আখ্যায়িত করেছেন। এমপির এ ধরনের উক্তি স্বাধীনতার মহান সৈনিকদের শুধু অপমানিত করেনি, তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকেও বিতর্কিত করেছেন। মূলত তার অতীতের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে তিনি স্বাধীনতার বিপক্ষের একজন মানুষ। বর্তমানে রূপসা উপজেলার আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ অধিকাংশ নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান করায় ২০০১ সালের পরে বিএনপি- জামায়াত যেভাবে নির্যাতন করেছিল বর্তমানে তারা সে ধরনের নির্যাতনের সম্মুখীন হচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে আব্দুস সালাম মূর্শেদীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
সংসদ সদস্যের গ্রুপের পাল্টা সংবাদ সম্মেলন: দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের পাল্টা অভিযোগ এনে রূপসা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন বাদশা বিরুদ্ধে মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে রূপসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফ ম আব্দুস সালাম।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, মো. কামাল উদ্দিন বাদশা গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে দলীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন তথ্য উপস্থাপন করেছেন। যা দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবরই আওয়ামী লীগ সভাপতির সব সিদ্ধান্তকে উপক্ষো করে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এছাড়া, কামাল উদ্দিন বাদশা জ্যেষ্ঠ মানুষ। তিনি সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারছেন না। যার ফলে রূপসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির সিদ্ধান্তকে অমান্য করা এবং দলীয় সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদীর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী। এমতাবস্থায় কামাল উদ্দিন বাদশাকে দলের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদানের দাবি জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন। যে কারণে, পরপর তিনবার তাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের কখনো কোনো ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি দেননি।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন মুকুল, উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সরদার আবুল কাশেম ডাবলু, সহ-সভাপতি আরিফুর রহমান মোল্লা, মোর্শেদুল আলম বাবু, যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যাপক শ্যামল দাস, এমদাদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম হাবিব, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা আফরোজ মনা, দপ্তর সম্পাদক আক্তার ফারুক, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন বুলবুল, ইউপি চেয়ারম্যান মোল্লা ওহিদুজ্জামান মিজান, উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান, উপজেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক মো. মফিজুল ইসলাম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক রাজিব দাস টাল্টুসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের অসংখ্য নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মাসুদ
আরো পড়ুন