মুন্সিগঞ্জে ইছামতীর তীরে সাধুসঙ্গ
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদীখান উপজেলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার সাধু ও বাউলদের নিয়ে সাধুসঙ্গ’র আয়োজন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতভর উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের দোসরপাড়ার ইছামতী নদীর তীরে পদ্মহেম ধামে সাধুসঙ্গ হয়।
পদ্মহেম ধামের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি কবির হোসেনের সঞ্চালনায় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাব্বির আহমেদের সভাপতিত্বে সন্ধ্যায় সাধুসঙ্গের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন সিরাজদীখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুজাহিদুল ইসলাম।
লালন সাঁইজির বিখ্যাত মারফতি গান- গুরু দোহাই তোমার মন লও-গো সুপথে, তোমার দয়ায় বিনে চরণ সাধি কিমতে; গানটি দিয়ে এবারের সাধুসঙ্গের প্রহর শুরু হয়। সুভাব দেও গুরু আমার মনে তোমার চরণ যেনো ভুলিনে, পার করো হে দয়াল চাঁদ আমারে, ধন্য ধন্য বলি তারে, আমায় রাখিলেন সাঁই কূপজল করে আন্ধেলা পুকুরে, এর মতো লালন সাঁইজির বিখ্যাত সব গান পরিবেশন করেন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সাধুরা। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এসব পরিবেশনা।
গান পরিবেশন করেন কুষ্টিয়ার দরবেশ নহীর ফকির, মহরম শাহ, সামসুল ফকির, ফরিদপুর থেকে সাধু-বাউল পাগল বাবলু, দোতারা বাদক ভুট্টা শাহ, সুকুমার ঘোল, বংশীবাদক বজলু শাহ, তবলা বাদক সাঈদ ফকির’র মতো বিখ্যাত সাধকেরা।
লালনের বাণী ও গান শুনতে মঙ্গলবার বিকেল থেকে দূরদূরান্ত থেকে লালনভক্তরা হাজির হন পদ্মহেম ধামে। সন্ধ্যার পর বাড়তে থাকে ভিড়। গান শুনে মুগ্ধ হন শ্রোতারা। প্রিয় সব গানের তালে তালে ঝোলান মাথাও। গান শেষে দেন হাততালি। হই-হুল্লোড়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে পদ্মহেম ধাম।
গান শুনে আবেগে আপ্লুত হন মুন্সীগঞ্জ সদরের ইসলামপুর এলাকার মিনহাজ ইসলাম বলেন, যখনই সিরাজদিখানে সাধুসঙ্গ হয়, তখনই এখানে ছুটে আসি। এত ভাবের গান, হৃদয় ছোয়া গান সাধুসঙ্গ ছাড়া আর কোথাও শুনতে পাইনা। হৃদয়ে নাড়া দেয়। গানে গানে কত কিছু শেখা হয়। গান ও গানের পরিবেশ সম্পূর্ণ আলাদা।
পদ্মহেম ধামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কবির হোসেন বলেন, লালন সাঁইজি চেয়েছিলেন মানুষের মনের হিংসা না থাকুক। মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব গড়ে উঠুক। পৃথিবীটা ভালবাসায় ভরে থাকুক। তার বাণীতে, গানে গানে সেগুলোই তিনি বলেছেন। তাই লালন সাঁইজির সব বাণী ও দর্শন মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে ২০ বছর ধরে এই সাধুসঙ্গ করে আসছি। আমরা মানবিক পৃথিবী গড়তে চাই। যেখানে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ, উঁচু-নিচু পার্থক্য থাকবে না। আমাদের এমন আয়োজন চলমান থাকবে।
রতন/ফয়সাল