লৌহজং নদী পরিষ্কার কার্যক্রম শুরু
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
টাঙ্গাইলের লৌহজং নদীর আবর্জনা পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সারা দেশ থেকে টাঙ্গাইলে এসেছেন ‘বিডি ক্লিন বাংলাদেশে’র প্রায় দুই হাজার সেচ্ছাসেবক। আজ শুক্রবার (১ মার্চ) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হাউজিং মাঠ এলাকায় লৌহজং নদীর ময়লা পরিষ্কার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেন।
টাঙ্গাইল পৌর শহরের হাউজিং ব্রিজ পাড় থেকে বেড়াডোমা ব্রিজ পর্যন্ত তিন কিলোমিটার নদীর বর্জ্য পরিষ্কারে বিডি ক্লিনিরে দুই হাজার সদস্য অংশ নিয়েছেন। এই কাজে সার্বিক সহযোগিতা করেছে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসন ও টাঙ্গাইল পৌরসভা।
আরও পড়ুন: মৃতপ্রায় লৌহজং নদী উদ্ধারে আবারও উদ্যোগ
স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম ও রফিকুল মিয়া বলেন, নদী পরিষ্কার করায় ডিসিকে ধন্যবাদ জানাই। এভাবে পুরো নদী দখল ও দুষণমুক্ত করা প্রয়োজন।
বিডিক্লিনের কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী বলেন, দেশকে ভালোবেসে ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। মরা নদী ও খাল থেকে আমরা স্বেচ্ছায় ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে থাকি। নিজ খরচে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
বিডিক্লিনের সমন্বয়ক জহিরুল ইসলাম রবি বলেন, সারাদেশেই বিডিক্লিন কাজ করে থাকে। সারাদেশে ৫৭টি জেলা ও ১৬৫ টি উপজেলায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলামের আমন্ত্রণে আমরা এখানে এসেছি। আমরা সকালে কাজ শুরু করেছি। বিকেলের মধ্যে আমরা কাজটি শেষ করে গন্তব্যে চলে যাবো।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সদস্যদের মধ্যে শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ সব শ্রেণি পেশার লোকজন রয়েছে। সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে ও দেশকে ভালোবেসে আমরা কাজটি করছি।
বেলার বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দ বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পুরো নদী উদ্ধার ও পরিষ্কার করা প্রয়োজন। এ কাজকে আমরা সাধুবাদ জানাই। অস্থায়ী কাজ না করে স্থায়ী কাজ করা প্রয়োজন। দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে। নদীর উৎসমুখে যে স্লুইজগেট রয়েছে সেটিও অপসারণ করতে হবে। কলকারখানার মাধ্যমে নদীতে যে দূষণ হচ্ছে সেটি রোধ করতে হবে। সবশেষ নদী খনন করে নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কায়ছারুল ইসলাম বলেন, শহরের প্রাণ লৌহজং নদীটি মরা পুকুরের মতো পরিণত হয়েছিল। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করেছি। বিডিক্লিনের দুই হাজারসহ প্রায় তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবী এই নদীটি পরিষ্কার করছে। এটি চলমান কার্যক্রম হিসেবে রাখা হবে। সবার প্রচেষ্টায় লৌহজং নদীকে পূর্বের মতো পানি প্রবাহে ফিরিয়ে আনবো। নদীর দুই পাড়ে যে অবৈধ স্থাপনা রয়েছে পর্যায়ক্রমে সেগুলো উচ্ছেদ করা হবে।
সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেন বলেন, লৌহজং নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সংসদে একাধিকবার আলোচনা করা হয়েছে। ডিপিপি প্রকল্পের মাধ্যমে মির্জাপুর অংশে কাজ চলমান রয়েছে। আগামীতে ডিপিপির মাধ্যমে পুরো নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে পারবো। একটি নান্দনিক নদী ও একটি সৌন্দর্য বর্ধনের জায়গা যাতে পরিণত হয় সেই লক্ষ নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
নদী পরিষ্কার কার্যক্রম উদ্বোধনের সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ওলিউজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শরফুদ্দিন, টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হল আলমগীর, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আনছারী, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদ প্রমুখ।
জানা গেছে, টাঙ্গাইল শহরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া লৌহজং নদী ময়লা, আবর্জনা ও কচুরিপানায় ভরে গেছে। এছাড়াও কল-কারখানার বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। ফলে পঁচা পানি প্রতিনিয়ত দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নদীর দুই পাড়ের পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এর প্রভাব পড়ছে পুরো জীববৈচিত্রে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রায় ৭ বছর আগে নদী উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়। তবে গত প্রায় ৫ বছর ধরে কার্যক্রম না থাকায় অবৈধ দখলদাররা ফের জেঁকে বসেছে। ফলে নদীটি মৃত খালে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, লৌহজং নদীটি সদর উপজেলার যুগনী থেকে বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত ৭৫ কিলোমিটার। এক সময় শহরের নিরালাড়া মোড় এলাকায় নৌবন্দর ছিল। দেশ-বিদেশে থেকে লঞ্চ, স্টিমার, জাহাজ ও বড় বড় নৌকা আসতো এ নৌবন্দরে। মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিল এখানে। বর্তমানে সব কিছুই যেন রূপকথার গল্প।
দীর্ঘদিন ধরে নদীটি ড্রেজিং না করায় নদীটি তার নাব্যতা হারিয়েছে। এই সুযোগে দুই পাড়ের বাসিন্দারা কৌশলে প্রথমে ময়লা আবর্জনা ফেলে দখল করছে। পরবর্তীতে স্থায়ী ভবন, দেয়াল ও স্থাপনা নির্মাণ করছে। এছাড়াও বিভিন্ন মিল কারখানা ও শহরের সব ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলে দূষিত করা হচ্ছে পানি।
নদীটি দূষণ ও দখলমুক্ত করার জন্য ২০১৬ সালে আন্দোলনে নামে স্থানীয় বাসিন্দারা। ওই বছরের ২৯ নভেম্বর নদীটি দূষণ ও দখলমুক্ত কার্যক্রম উদ্বোধন করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন। ওই সময়ে শহরের পুলিশ লাইনস হাজরাঘাট এলাকা থেকে বেড়াডোমা পর্যন্ত চার কিলোমিটার দূষণ ও দখলমুক্ত করা হয়। গত চার বছর যাবত কোনো কার্যক্রম না থাকায় নদীর পানি আর ব্যবহার উপযোগী নেই। নদীর স্বাভাবিক গতি হারিয়ে সরু খালে পরিণত হয়েছে।
কাওছার/মাসুদ
আরো পড়ুন