ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২ ১৪৩১

কাজে আসছে না ১০ কোটি টাকার পানি শোধনাগার

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৫, ৩ মার্চ ২০২৪  
কাজে আসছে না ১০ কোটি টাকার পানি শোধনাগার

নির্মাণকাজ শেষ হলেও চালু হচ্ছে না মুন্সীগঞ্জের পানি শোধনাগার প্রকল্পের কার্যক্রম। প্রকল্পটি হস্তান্তর নিয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে দেখা দিয়েছে সমন্বয়হীনতা। বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদার ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর পরস্পরের ওপর দায় চাপাচ্ছে। পানি শোধনাগার নির্মাণকাজের মান নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে পৌরসভার। এতে ১০ কোটি ২৬ লাখ টাকার এ প্রকল্পের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পৌরবাসী।

জানা যায়, ২০১৮ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন ৩৭ জেলা শহরে পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় মুন্সীগঞ্জের হাটলক্ষ্মীগঞ্জ এলাকায় পানি শোধনাগার নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রায় ৩৩শ বর্গফুট আয়তনের জায়গায় নির্মিত পানি শোধনাগারটির পরিকল্পনার মধ্যে ছিল পাশের ধলেশ্বরী নদী থেকে প্রতি ঘণ্টায় ৩ লাখ ৫০ হাজার লিটার পানি বিশুদ্ধ করে পৌরবাসীর মাঝে সরবরাহ করা। 

তবে নির্মাণের শুরুতেই নিম্নমানের পাইপ ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। এরপর কয়েক দফা পরিবর্তন করে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। একই বছর খাবার জন্য পানির নমুনা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে সচল ছিল কয়েক মাস। এরপর বন্ধ হয়ে যায় পানি বিশুদ্ধিকরণ কার্যক্রম।

হাটলক্ষ্মীগঞ্জ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পানি শোধনাগারের মূল গেট বন্ধ। প্রকল্পটি দেখাশোনার জন্য একজন নিরাপত্তাকর্মী রয়েছেন। ভেতরে ঢোকে দেখা যায় এর কার্যক্রম বন্ধ। অচল হয়ে পড়ে থাকায় প্রকল্পের কাঠামো ও পানিতে জমেছে শেওলা। কোথাও পানি পচে গেছে।

এ বিষয়ে কথা হয় হাটলক্ষ্মীগঞ্জ এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে। প্রতীক্ষিত পানি শোধনাগারটি চালু না হওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ। তারা জানান, পৌরসভার হাটলক্ষ্মীগঞ্জসহ অনেক এলাকায় নেই পর্যাপ্ত সুপেয় পানির ব্যবস্থা। লাইন ধরে পানি নিতে হয়। সেখানেও আয়রন থাকায় বিপত্তিতে পড়তে হয় তাদের। প্রতীক্ষিত প্রকল্পটি চালু করে দ্রুত সেবা নিশ্চিত করার দাবি তাদের। 

হাটলক্ষ্মীগঞ্জ এলাকার বাদশা মিয়া বলেন, কয়েক মাস পানি শোধনাগারটি চালানো হয়েছিল। তারা বিশুদ্ধ পানি পাবেন বলে আশা করেছিলেন। এটি এখন বন্ধ। তাহলে এত টাকা দিয়ে এটি করে লাভ কী হলো– প্রশ্ন তার।

বিল্লাল হোসেন বলেন, বছরের পর বছর ধরে দেখতেছি এটা খালি করতাছে। কই আমরা তো বিশুদ্ধ পানি পাইলাম না। একবার চালু হয়, আবার বন্ধ হয়, আবার চালু হয়। সরকারের লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে মানুষ যদি উপকারই না পায় তাহলে এটা কার স্বার্থে করা হয়েছে?

আছিয়া বেগম নামের এক নারী বলেন, শিগগিরই পানি শোধনাগারটি চালু করে দিলে তারা বিশুদ্ধ পানি খেতে পারবেন। এটিই তাদের দাবি। 

প্রকল্পটির কাজ করতে গিয়ে অনেক ভুগতে হয়েছে মন্তব্য করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মোহাম্মদ মাসুদুর রশিদ বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে কাজ বুঝে নিতে একাধিকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে জানালেও তারা জানিয়েছে পৌরসভা প্রকল্পটি নিতে চাইছে না। জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরও প্রকল্পটি নিচ্ছে না। এমনিতেই এ কাজে দেড় কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে। এক মাস পানি শোধন করতে এক লাখ টাকা খরচ হয়। তাই কাজ বন্ধ রেখেছি।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্সের প্রকৌশলী জাহিদ হাসান জানান, শিডিউল অনুযায়ী তিন মাস পানি সরবরাহ করা হয়। এ সময়ে বুঝে নেওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পটি বুঝে নেয়নি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কিংবা পৌরসভা। তাদের নিজের ফান্ড থেকে এটি চালানো আর সম্ভব না। এরই মধ্যে তাদের অনেক টাকা লোকসান হয়েছে। তারা বারবার দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাছ থেকে বুঝে নিচ্ছে না, এমনকি তাদের পাওনা টাকাও দিচ্ছে না। প্রকল্পটি বুঝে না নিলে তাদের কোটি টাকার বেশি লোকসান হবে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবীরের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে মুন্সীগঞ্জ জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী এস এম আবদুর রহমান বলেন, প্রকল্পটি যৌথভাবে পৌরসভাকে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল ঠিকাদার ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের। পৌরসভা কাজটি বুঝে নিচ্ছে না, এ জন্য তারাও ঠিকাদারের কাছ থেকে নিতে পারছে না।

মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র সোহেল রানা বলেন, কাজ নিম্নমানের ছিল। এ জন্য সাবেক মেয়র কাজটি বুঝে নেননি। তবে আমরা শিগগিরই পানি শোধনাগারের কাজটি বুঝে নেব। এ বিষয়ে আমাদের আলাপ-আলোচনা চলছে।

রতন/এনএইচ 


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়