ঢাকা     শনিবার   ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২৭ ১৪৩১

মালয়েশিয়ায় ট্রেনের ধাক্কায় নিহত ২ বাংলাদেশি

কুমিল্লা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০০, ৬ মার্চ ২০২৪   আপডেট: ২২:৫৯, ৬ মার্চ ২০২৪
মালয়েশিয়ায় ট্রেনের ধাক্কায় নিহত ২ বাংলাদেশি

নিহত কামাল হোসেন ও দুলাল। (ছবি- সংগৃহীত)

মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর রাজ্যের কাজাংয়ে কমিউটার ট্রেনের ধাক্কায় নিহত দুই বাংলাদেশি শ্রমিকের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে।

রোববার (৩ মার্চ) স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে এ কাজাং কেটিএম পুনচাক উতামা জেড হিল ট্র্যাকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- কুমিল্লা দেবীদ্বারের ৭নং ওয়ার্ডের এলাহাবাদ গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে মো. দুলাল (৩৩) ও একই গ্রামের মো. শহিদের ছেলে মো. কামাল হোসেন (৩২)। এ ঘটনায় নিহত অপরজন মায়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক বলে জানা গেছে।

এক বছর ৪ মাস পূর্বে ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে কলিং ভিসায় মালয়েশিয়ায় যান ২ জন। ওখানে তারা কাজ না পেয়ে কিছুদিন পালিয়ে থেকে একটি ওয়ার্কশপে গোপনে কাজ শুরু করেন। ঘটনার দিন রাতে কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে ৩ জন নিহত হন।

বুধবার (৬ মার্চ) সরেজমিনে নিহতদের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের আহাজারি আর্তনাদের হৃদয় বিদারক দৃশ্যের দেখা মিলে।
নিহত কামাল হোসেনের বড় ভাই সেলিম জানান, গত সোমবার রাতে ট্রেনে কাটা পরে ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদটি পান। পরে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত আত্মীয়দের কাছ থেকে জানতে পারেন, কারখানায় কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে একদল তামিল ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে তার ভাইসহ ৩ জন। ওরা তাদের হত্যা করে জঙ্গলে ফেলে রাখা অবস্থায় পুলিশের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করেন। ট্রেনে কাটা পরে মারা যায়নি। কারণ মালয়েশিয়ায় মেট্রোরেলসহ সব ধরনের রেললাইনের দু’পাশেই ইস্পাতের শক্ত বেড়া দেওয়া থাকে। যাতে রেললাইনে কোনো মানুষ ও জীবজন্তু প্রবেশ করতে পারে না। আর নিহতদের মরদেহ পাওয়া গেছে রেললাইনের অনেক দূরে জঙ্গল থেকে।

মালয়েশিয়ায় নিহত কামাল হোসাইন’র পিতা মো. সহিদ মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার ছেলের সাথে সর্বশেষ কথা হয় গত বুধবার রাতে। সে জানায়, দেড় মাস ধরে তেমন কোনো কাজ পাইনি। তবে আব্বা চিন্তা করবেন না; কয়েক দিনের মধ্যে কিছু টাকা পাঠাব। আমার ছেলেকে বিদেশ পাঠাতে সুদে ঋণ করে ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকায় তাকে মালয়েশিয়ায় পাঠাই। ছেলের দেওয়া কিছু টাকা এবং একটি গরু বিক্রি করে কিছু দেনা শোধ করেছি। এখনো সুদের ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণে আছি।

নিহত কামালের মা মোসা. আনোয়ারা বেগম আর্তনাদ করে বলেন, আমার কামাল মানিক গত বুধবার রাতে ভিডিও কলে কথা বলেছিল। বিদ্যুৎ না থাকায় চেহারাটা ভালো করে দেখতে পারি নাই, আমার ছেলে শুকিয়ে গেছে। দু’বছর পর দেশে আসলে বিয়ে করাব ভাবছিলাম। আমি আমার মানিকের জন্য বৌমাও মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম।

তিনি অঝোরে কাঁদছেন আর বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন।

অপরদিকে নিহত দুলালের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। হতদরিদ্র দুলাল স্ত্রী, মা ও ২ শিশু সন্তান রেখে ভাগ্য ফেরাতে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন। এক শতাংশ জমির উপর থাকার দোচালা একটি ঘর ছাড়া আর কোনো সম্পদ রেখে যাননি বলে জানান তার স্বজনেরা। বিদেশ যাওয়ার টাকা আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধার-দেনা ও সুদে নিলেও ঋণের টাকা রেখেই তার মৃত্যু হল।

নিহত দুলালের স্ত্রী আকলিমা আক্তার কুমিল্লা ইপিজেডে চাকুরির সুবাদে শাশুড়ি আনোয়ারা বেগম এবং দুই কন্যা নামিয়া (৪) ও সামিয়াকে (২) নিয়ে কুমিল্লা শহরেই থাকেন।

রুবেল/ফয়সাল


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়