ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

স্ত্রীকে হত্যায় স্বামীর আমৃত্যু কারাদণ্ড, লাশ সাগরে ফেলে দণ্ডিত হোটেল মালিক

নরসিংদী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ৮ মার্চ ২০২৪   আপডেট: ০৯:৪১, ৮ মার্চ ২০২৪
স্ত্রীকে হত্যায় স্বামীর আমৃত্যু কারাদণ্ড, লাশ সাগরে ফেলে দণ্ডিত হোটেল মালিক

নরসিংদীর বেলাবোতে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামী শহীদুল ইসলাম সাগরকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতার জন্য মামুন মিয়া নামে আরেকজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত।

এদিকে, হত্যার পর লাশ গুম করার অভিযোগে হোটেলের দুই মালিক দেলোয়ার হোসেন ও আনোয়ার এবং হোটেলের ম্যানেজার মো. আমির হোসেনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) নরসিংদী অতিরিক্ত জেলা ও দায়রার জজ ১ম আদালতের বিচারক শামিমা পারভিন এ আদেশ দেন।

মামলার সাজাপ্রাপ্তরা হলেন, নিহত মার্জিয়া আক্তার কান্তার স্বামী কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী থানার খলিগঞ্জ গ্রামের গনি মিয়ার ছেলে শহীদুল ইসলাম সাগর, তার ফুফাতো ভাই রতনপুর গ্রামের মামুন মিয়া, কুয়াকাটার ছোবাহান মিয়ার ছেলে হোটেল আল মদিনার মালিক দেলোয়ার হোসেন ও তার ভাই আনোয়ার হোসেন ও হোটেলের ম্যানেজার পটুয়াখালীর মেহেরপুর গ্রামের আমির হোসেন। এদের মধ্যে শহীদুল ও মামুন পলাতক রয়েছেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৮ আগস্ট নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার বীর বাঘবের গ্রামের সোহরাব হোসেন রতনের মেয়ে মার্জিয়া আক্তার কান্তার সঙ্গে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী থানার খলিগঞ্জ গ্রামের গনি মিয়ার ছেলে শহীদুল ইসলাম সাগরের বিয়ে হয়।

বিয়ের পর থেকে দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন নিহতের স্বামী। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর জেরে একবছর পর কান্তাকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

এক মাস পর সাগর কান্তার বাড়িতে আসেন এবং তাকে ভারত বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে নিয়ে কুয়াকাটার আল মদিনা হোটেলে ওঠেন। সেখানে সাগরের ফুফাতো ভাই মামুনকে সঙ্গে নিয়ে কান্তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেন।

হত্যার পর লাশ পলিথিন দিয়ে পেঁচিয়ে বক্স খাটের নিচে লুকিয়ে রেখে তারা পালিয়ে যায়। পরে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে রুমের বক্স খাটের নিচে কান্তার মরদেহ দেখতে পায় হোটেল কর্তৃপক্ষ। পরে হোটেল আল মদিনার মালিক দেলোয়ার, আনোয়ার হোসেন ও হোটেল ম্যানেজার আমিরসহ তিনজন নিহতের লাশ বস্তাবন্দী করে কুয়াকাটা সাগরে ভাসিয়ে দেন।

দীর্ঘদিনেও মেয়ের খোঁজ না পেয়ে নিহতের বাবা সোহরাব মিয়া কুড়িগ্রাম মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে যান। সেখানে মেয়ের খোঁজ জানতে চাইলে তারা জানায় তার মেয়ে কান্তা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। একপর্যায়ে কান্তার বাবাকে নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখান সাগর। এতে তার সন্দেহ বেড়ে যায়।

পরে তিনি মেয়ের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়িসহ পাঁচজনকে আসামি করে নরসিংদী আদালতে মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে পুলিশ নিহত কান্তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেফতারের পর সে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। মামলার দীর্ঘ তদন্ত শেষে ১৮ সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালত রায় ঘোষণা করেন।

নিহতের বাবা ও মামলার বাদী সোহরাব হোসেন রতন বলেন, রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করতে পারছি না। সরকারের কাছে তার ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি। কারণ সে যেভাবে আমার মেয়কে মিথ্যে বলে বাড়ি থেকে নিয়ে হত্যা করেছে, তাতে আমি এই রায় মানতে পারছি না।

আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট অলিউল্লাহ বলেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর এবং ক্লুলেস মামলা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে মামলাটির রহস্য বের করে এনেছেন। মেয়েটিকে খুন করার জন্য প্রথমে শরীয়তপুর পরে পটুয়াখালী নিয়ে যাওয়া হয়। সর্বশেষ কুয়াকাটা নিয়ে হত্যার পর লাশ ফেলে পালিয়ে যান তার স্বামী। আবার হোটেল মালিক লাশ গুম করার জন্য সাগরে ভাসিয়ে দেন। অনেকগুলো ক্রিমিনাল অফেসন্স জড়িত। দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদালত একটি দৃষ্টান্তমূলক রায় দিয়েছেন। এতে আমার খুশি।

হৃদয়/কেআই

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়