ঢাকা     রোববার   ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১৪ ১৪৩১

আদালতে জবানবন্দি দিলেন সেই তরুণী, গ্রেপ্তার হয়নি চেয়ারম্যান 

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৩১, ৮ মার্চ ২০২৪  
আদালতে জবানবন্দি দিলেন সেই তরুণী, গ্রেপ্তার হয়নি চেয়ারম্যান 

ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ

ধর্ষণ ও অপহরণের শিকার সেই তরুণী খুলনা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এ জবানবন্দি দিয়েছেন। শুক্রবার (৮ মার্চ) বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বিচারক রওনক জাহান ওই তরুণীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এর আগে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডুমুরিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মুক্ত রায় চৌধুরী ভুক্তভোগীকে আদালতে হাজির করেন। জবানবন্দি শেষে তরুণীকে তার মায়ের হেফাজতে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার ডুমুরিয়া থানায় আলোচিত ধর্ষণ ও অপহরণ মামলা রেকর্ড হলেও পুলিশ মামলার প্রধান আসামি উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদসহ ৭ জনকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি। 

আরও পড়ুন: ডুমুরিয়ার সেই চেয়ারম্যানসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও অপহরণ মামলা

আরো পড়ুন:

আদালত সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭ পর্যন্ত দুই ঘণ্টা ধরে ভিকটিম খুলনা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক রওনক জাহানের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ভুক্তভোগী তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ এবং হাসপাতাল থেকে উঠিয়ে নিয়ে নির্যাতন ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মুক্ত রায় চৌধুরী বলেন, জবানবন্দি রেকর্ড হওয়ার পর আদালত ওই তরুণীকে মায়ের জিম্মায় দেন। 

ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত কুমার সাহা বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতের নির্দেশ থানায় আসার পর রাতেই মামলাটি রেকর্ডভুক্ত করা হয়েছে। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ওসি (তদন্ত) মুক্ত রায় চৌধুরীকে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আরও পড়ুন: চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগকারী তরুণীকে মাইক্রোবাসে তুলে নিলো দুর্বৃত্তরা

এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন- উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদের চাচাতো ভাই ও রুদাঘরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী তৌহিদুজ্জামান, গাজী আবদুল হক, আল আমিন গাজী, আক্তারুল আলম, সাদ্দাম গাজী ও মো. ইমরান হোসাইন। এছাড়াও আরো ১০-১৫ জনকে নাম না জানা আসামি করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ জানুয়ারি বিকালে ওই তরুণীকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) সামনে থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। সেসময় ঘটনাস্থল থেকে ডুমুরিয়া উপজেলার রুদাঘরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গাজী তৌহিদুজ্জামানকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন স্থানীয়রা। তবে, পরে ওই তরুণী সাংবাদিকদের বলেন, তাকে ধর্ষণ বা অপহরণের ঘটনা ঘটেনি। তার পরিবারও কোনো মামলা করবে না বলে জানিয়ে ওই দিন রাতে নগরীর সোনাডাঙ্গা মডেল থানা থেকে বাড়িতে ফিরে যান। এ ঘটনার এক মাস ১০দিন পর গত বুধবার দুপুরে ভুক্তভোগীর খালাতো ভাই গোলাম রসুল বাদী হয়ে খুলনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ ধর্ষণ ও অপহরণ মামলা করেন। 

আরও পড়ুন: খুলনায় উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গত ২৭ জানুয়ারি রাতে ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা গাজী এজাজ আহমেদ শাহপুর বাজারের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ভুক্তভোগীকে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনার পরদিন রাতেই ভুক্তভোগী খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি হন। এই বিষয়ে খোঁজ নিতে গত ২৮ জানুয়ারি বিকেলে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসির সামনে যান মামলার বাদী গোলাম রসুল। সেখানে তিনি জানতে পারেন, ওসিসি কর্তৃপক্ষ উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ ও ইউপি চেয়ারম্যান গাজী তৌহিদুজ্জামানের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভুক্তভোগীকে যথাযথ চিকিৎসা না দিয়ে ছাড়পত্র দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। ভুক্তভোগী ও তার মা ওসিসি থেকে বের হওয়া মাত্র ইউপি চেয়ারম্যান গাজী তৌহিদুজ্জামানের নেতৃত্বে এজাহারভুক্ত আসামিরা ১০/১৫ জন তাদের মাইক্রোবাসে তুলে অপহরণ করে নিয়ে যায়। সেসময় আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে মোটরসাইকেলসহ গাজী তৌহিদুজ্জামানকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। 

গভীর রাতে নাম না জানা ২-৩ জন ভুক্তভোগী ও তার মাকে খুন-জখম করার হুমকি দিয়ে নগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় নিয়ে ভুক্তভোগীকে দিয়ে পুলিশের কাছে মিথ্যা বক্তব্য দিতে বাধ্য করেন। পরে পুলিশকে ম্যানেজ করে গাজী তৌহিদকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান তারা। এরপর উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ ও ইউপি চেয়ারম্যান গাজী তৌহিদ ভুক্তভোগীকে ডুমুরিয়া থানা এলাকার অজ্ঞাত একটি স্থানে আটকে রাখেন। 

এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, বাদী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তি। পক্ষান্তরে আসামিরা অত্যন্ত অর্থ ও পেশী শক্তির অধিকারী, নারী নির্যাতনকারী, অবৈধ ক্ষমতার প্রভাব বিস্তারকারী, আইন অমান্যকারী। তারা ভিকটিমকে নানাভাবে হুমকি প্রদান করে আসছিল। তারপরও বাদী, ভিকটিমকে উদ্ধার করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে ডুমুরিয়া থানায় মামলা করতে গেলে থানা পুলিশ মামলা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে, ট্রাইব্যুনালে এসে মামলা দায়েরে বিলম্ব হয়। মামলায় আরো বলা হয়, উক্ত দিন ছাড়াও ভুক্তভোগী নারীকে বিয়ের প্রভোলনে এর আগেও একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়েছে।

নূরুজ্জামান/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়