উপহার নিয়ে গোলরক্ষক ইয়ারজানের বাড়ি র্যাব-১৩’র অধিনায়ক
পঞ্চগড় প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
দরিদ্র পরিবারের মেয়ে ইয়ারজান বেগম। সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের হয়ে গোলরক্ষক হিসেবে খেলেছেন নেপালের মাঠে। চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তার দল। টুর্নামেন্টের সেরা গোলরক্ষকের ট্রফিটাও নিজের করে নিয়েছেন তিনি। ইয়ারজানের এমন সাফল্যের গল্প শুনে তার বাড়িতে উপহার নিয়ে ছুটে এসেছেন নীলফামারী র্যাব-১৩ এর অধিনায়ক।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বিকেলে ইয়ারজানের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন অধিনায়ক আরাফাত ইসলাম। এ সময় উপহার হিসেবে নগদ ২০ হাজার টাকা ও খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন তাদের হাতে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন র্যাব-১৩ এর উপ-অধিনায়ক মেজর ওমর ফারুক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মর্তুজা, স্কোয়ার্ডন লিডার মাহমুদ বশির, হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম, সাবেক চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীন, ইয়ারজানের দাদা বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দীন, ক্রীড়া সংগঠক এটিএম আখতারুজ্জামান ডাবলু, ইউপি সদস্য জুলহাস উদ্দীন প্রমুখ।
ইয়ারজান বেগমের বাড়ি পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের খোপড়াবান্দি গ্রামে। তিনি সেখানকার আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে। গত রোববার (১০ মার্চ) নেপালের মাঠে ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হন ইয়ারজানরা। খেলায় ভারতকে টাইব্রেকারে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। এই অর্জন সম্ভব হয়েছে কেবল গোলরক্ষক ইয়ারজানের বীরত্বেই। ইয়ারজানের সাফল্যে উচ্ছ্বাস বইছে জেলা জুড়ে।
জেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরের প্রত্যন্ত গ্রামে ইয়ারজানদের বাড়ি। সড়কের পাশেই ছোট ছোট দুটি ঘর তাদের। এরমধ্যে একটি ঘর একেবারেই জরাজীর্ণ। একপাশে ছাউনির টিনগুলো খুলে গেছে। সেই ঘরের শোকেজে সাজানো আছে ইয়ারজানের সাফল্যের ক্রেস্ট এবং ট্রফি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইয়ারজানের বাবা আব্দুর রাজ্জাক শারীরিকভাবে অসুস্থ। কোনো কাজ করতে পারেন না। ফলে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মা রেনু বেগমই। রেনু বেগমের উপার্জনে চলে তাদের সংসার। সম্পদ বলতে তাদের কেবল ভিটেমাটি।
ইয়ারজানের মা রেনু বেগম বলেন, ‘খুব কষ্ট করে আমার মেয়ে এ পর্যন্ত এসেছে। মানুষের কৃষিজমিতে কাজ করে মেয়েকে বড় করেছি। অভাবের সংসারে মেয়েকে তিন বেলা ঠিকমত খাওয়াতে পারিনি। তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাকে সাফল্য এনে দিয়েছে। আমাদের গর্বিত করেছে। আজকে আমার বাড়িতে বড় বড় অফিসাররা আসছেন, অনেক বেশি গর্বিত আমি।’
উৎফুল্ল ইয়ারজানের বাবা আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘মেয়ের সাফল্যে গর্বে আমার বুক ভরে গেছে। বাড়িতে এত মানুষ দেখে খুব ভালো লাগছে আমার। আমার মেয়ে আমাকে অনেক বেশি সম্মান এনে দিয়েছে। এত বেশি প্রত্যাশা কখনই ছিল না। আমি কিচ্ছু চাই না, শুধু মানুষের ভালোবাসা চাই। আমি চাই, আমার মেয়ে ভালো কিছু করুক। আমাদের নাম উজ্জল করুক।’
নীলফামারী র্যাব-১৩’র অধিনায়ক আরাফাত ইসলাম বলেন, ‘সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে আমরা দেখেছি বাংলাদেশ দল চ্যাম্পিয়ন হবার নেপথ্যে ছিল ইয়ারজান। জেনেছি তিনি পঞ্চগড়ের সন্তান। বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখেছি, তার পরিবার একেবারেই হত-দরিদ্র। তাই আমরা র্যাব-১৩ টিম তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। আমি চাই, অন্যান্য অর্গানাইজেশনগুলোও এভাবে পাশে দাঁড়াক।’
নাঈম/বকুল