খেত চুক্তিতে কেনা তরমজু বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে
ফরাজী মোহাম্মদ ইমরান || রাইজিংবিডি.কম
পটুয়াখালীতে খেত চুক্তিতে তরমুজ বিক্রি করেন কৃষকরা। কিন্তু, সেই তরমুজ দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বিক্রি হয় কেজি দরে। রমজান মাসকে পুঁজি করে মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা শুভংকরের ফাঁকির কাজটি করছেন। এতে প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তারা।
চলতি মৌসুমে পটুয়াখালী জেলার সহস্রাধিক কৃষক ২৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে করেছেন তরমুজ চাষ। ৬ লাখ মেট্রিক টন তরমুজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করেছে জেলা কৃষি বিভাগ।
জানা গেছে, এই এলাকার উৎপাদনকৃত তরমুজ খেত চুক্তিতেই বিক্রি করছেন কৃষকরা। পাইকাররা এসব তরমুজ কিনে ট্রাক কিংবা ট্রলার যোগে সরবারহ করছেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। তরমুজ প্রতি তাদের পরিবহন খরচ হচ্ছে ২০ টাকা। এতে এক একটি তরমুজের দাম পড়ছে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা। তবে, পাইকারদের কাছ থেকে পাইকারি দরে তরমুজ কিনে মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন কেজি হিসেবে। এতে এক একটি তরমুজ বিক্রিতে দাম পড়ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। দ্বিগুণ লাভ করছেন এই ব্যবসায়ীরা। প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা।
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার পক্ষিয়াপাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব কৃষক শাহআলম মিয়া। কলপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের দেবপুর এসে খালাতো ভাই মিঠু মৃধার সঙ্গে যৌথভাবে ১৮ একর জমিতে করেছেন তরমুজ চাষ। ফলন ভালো হওয়ায় হাসি ফুটেছে এই কৃষকের মুখে। জমিতে উৎপাদিত ছোট বড় প্রায় ২৭ হাজার তরমুজের প্রতি পিসের দাম পড়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।
কৃষক শাহআলম বলেন, এ বছর আমাদের জমিতে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। আমরা খেত চুক্তিতেই ৫৪ লাখ টাকায় তরমুজ বিক্রি করেছি।
একই গ্রামের অপর কৃষক ফুল্টু মৃধা বলেন, আমি ৬ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। ৩০ লাখ টাকা খেত চুক্তিতে এক পাইকারের কাছে তরমুজ বিক্রি করেছি।
সাতক্ষীরা থেকে তরমুজ কিনতে আসা পাইকার আবদুল জব্বার বলেন, আমরা এখানে দুই থেকে তিনটা খেত ক্রয় করেছি। এখান থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তরমুজ সরবরাহ করতে আমাদের ২০ থেকে ২৫ টাকা খরচ হয়। আমরা স্বল্প লাভেই বিভিন্ন স্থানে ঠিকা চুক্তিতে পাইকারি তরমুজ বিক্রি করি। কেজির মাপ আসলে আমরা বুঝি না। তবে, যারা খুচরা বিক্রেতা রয়েছেন তারা কেজিতে বিক্রি করেন।
কলাপাড়া উপজেলায় ভ্যানে করে তরমুজ বিক্রি করেন এমন কয়েকজন জানান, তারা প্রতিকেজি তরমুজ ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।
কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আরাফাত হোসেন বলেন, কৃষকরা যাতে ন্যায্য মূল্য পায় এবং ভোক্তারা যাতে সহনীয় পর্যায়ে তরমুজ কিনতে পারেন সে জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে বেশ কয়েকবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। কয়েকজন ব্যবসায়ীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়া, কেজি দরে তরমুজ বিক্রি বন্ধে আমরা কৃষি বিভাগ তৎপর রয়েছি।
ইমরান/মাসুদ