এপ্রিলে বাজারে আসবে বরগুনার তরমুজ
ইমরান হোসেন, বরগুনা || রাইজিংবিডি.কম
বরগুনার একটি তরমুজ খেত
তীব্র গরমে তরমুজের চাহিদা থাকে বেশি। বিশেষ করে রমজানে তরমুজের চাহিদা থাকে কয়েকগুণ। এসময় বাড়তি দামে বিক্রি হয় তরমুজ। কিন্তু, এবার রমজানে দেশের উপকূলীয় জেলা বরগুনায় খুব সামান্য পরিমাণ আগাম তরমুজের চাষ করেছিলেন কৃষকরা। তারা বলছেন, রমজানের বাজার ধরতে আগাম তরমুজের চাষ করেও আশানুরূপ ফলন পাননি তারা। কৃষি বিভাগ বলেছে, এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে বাজারে আসতে শুরু করবে বরগুনার তরমুজ।
বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, জেলায় ৮ হাজার ১৭৭ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে তরমুজ। এর মধ্যে বরগুনা সদরে ২০৬৫ হেক্টর, আমতলীতে ৪৫৯৪ হেক্টর, তালতলীতে ৯০৪ হেক্টর, পাথরঘাটায় ৪২ হেক্টর, বেতাগী ২২ হেক্টর ও বামনায় ১০ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। আগাম জাতের তরমুজ চাষ করা হয়েছিল ৫০০ হেক্টর জমিতে। যা ইতোমধ্যেই বিক্রি হয়েছে ঢাকায়।
আরও পড়ুন: খেত চুক্তিতে কেনা তরমজু বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে
বরগুনা সদর, আমতলী ও তালতলী উপজেলার তরমুজের ক্ষেতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আগাম চাষ করা ক্ষেতের তরমুজ বিক্রি প্রায় শেষের পথে। তবে, ফলন ভালো না পাওয়ায় হতাশ কৃষকরা। কয়েকজন কৃষক আগাম তরমুজ বিক্রি করে লাভবান হলেও সেসব তরমুজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অন্য কৃষকরা।
বরগুনা জেলায় এবার ৫০০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের তরমুজের চাষ হয়েছে
আমতলী উপজেলার হলদিয়া এলাকার জাহিদুল ইসলামের তরমুজ খেতে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, দুই একর জমিতে আগাম জাতের তরমুজের চাষ করেছেন তিনি। রমজানে তরমুজ বিক্রি করাই ছিল তার উদ্দেশ্য। পাইকারদের কাছে তরমুজের গড় কেজি হিসেবে বিক্রি করেছেন তিনি। তরমুজের আকার ছোট হওয়ার কারণে ২৫/৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন তিনি। দুইবার ফসল তুলে বিক্রি করেছেন ৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকার। এখন মাঠে যে তরমুজ আছে তাতে আরও দেড় লাখ টাকার বিক্রি করতে পারবেন তিনি।
তার পাশেই এক একর জমিতে আগাম জাতের তরমুজের চাষ করেছেন কৃষক বিমল চন্দ্র শীল। তিনি বলেন, বেশি লাভের আশায় আগাম জাতের তরমুজের চাষ করেছেন তিনি। এখন পর্যন্ত বিক্রি করেছেন ১ লাখ ৯০ হাজার টাকার তরমুজ। সঠিক মৌসুমে চাষ করলে আরও ভালো ফলন আসতো তরমুজের বলে মনে করেন তিনি।
একই এলাকায় অপর কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, এপ্রিলের শুরুতেই ফসল তুলে বাজারে বিক্রি করবেন তিনি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আগাম জাতের তরমুজের চাষ করেছেন কয়েকজন কৃষক। তাদের তরমুজের মান যথেষ্ট খারাপ। বেশিরভাগ তরমুজের ভেতরই সাদা। ওই সব তরমুজ মিষ্টি বা রসালো নয়। এ কারণে অনেক পাইকাররা আমাদের এলাকা ছেড়েছেন। তারা আর আমাদের তরমুজ নেবেন না।
বরগুনা সদরের এম বালিয়াতলী ও নলটোনা ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ গাছে ফুল থেকে মাত্র তরমুজ বের হওয়া শুরু করেছে।
বালিয়াতলী এলাকার কৃষক ওবায়দুল মিয়া বলেন, আমাদের এলাকার তরমুজ বাজারে পাঠাতে আরও ১০/১৫ দিন সময় লাগবে। তখন তাপমাত্রা বেশি থাকবে। তাই আশাকরি পাইকারদের কাছে ৪৪০ টাকা গড় কেজি হিসেবে বিক্রি করতে পারবো। তবে, আগাম কয়েকজন চাষ করে বরগুনার তরমুজের বদনাম করেছেন। বেশি লাভের আশায় আমরা এখন লোকসানের ঝুঁকিতে আছি।
বিএডিসির সেচযন্ত্রটি বন্ধ থাকায় খেতে পানি দিতে পারছেন না তালতলী উপজেলার কৃষকরা
এদিকে, তালতলী উপজেলায় পানির সংকটে তরমুজের ফলন নিয়ে চিন্তিত কৃষকরা। উপজেলার সোনাকাটা এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ছয় একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। কিন্তু, গত ১৫ দিন ধরে বিএডিসির সেচযন্ত্রটি বন্ধ থাকায় খেতে পানি সেচ দিতে পারি না। গাছ গুলো লালচে হয়ে মারা যাচ্ছে। দ্রুত সেচযন্ত্রটি চালু না হলে আমার এই ফসল সব নষ্ট হয়ে যাবে। ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে আমাকে এলাকা ছাড়তে হবে।
কৃষক কবির হাওলাদার বলেন, দাদন ও গরু বিক্রির টাকা দিয়ে ৭ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। এতে এখন পর্যন্ত ৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। গত ১৫ দিন ধরে সেচযন্ত্রটি বন্ধ থাকায় পানি দিতে পারছি না। পানির অভাবে গাছগুলো লালচে হয়ে মরতে শুরু করেছে। ফল ও ফুল ঝরে পড়ছে। দ্রুত সেচযন্ত্রটি চালু না করলে গাছগুলো সব মরে যাবে। দাদনের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে বিষ খাওয়া ছাড়া আমার আর উপায় থাকবে না।
তালতলী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত আনোয়ার তুমপা রাইজিংবিডিকে বলেন, আমি বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে বিএডিসি ম্যানেজার ফারুক মোল্লার সঙ্গে কথা বলে তাকে নির্দেশ দিয়েছি দ্রুত সময়ের মধ্যে পানির সংকট দূর করতে।
বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম বলেন, এবার বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি এলাকায় কিছু কৃষক আগাম তরমুজের চাষ করেছেন। তবে, ফলন ভালো আসেনি। সঠিক সময়ে পানি না দেওয়ার কারনে এমন হতে পারে। তবে, এপ্রিলের শুরুতেই বাজারে আসতে শুরু করবে বরগুনার তরমুজ। আমরা কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে আসছি। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সব সময় কৃষকদের পাশে রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা ধারণা করছি চলতি মৌসুমে ৩ লাখ ৭০০ হাজার মেট্রিক টন তরমুজের ফলন আসবে।
মাসুদ