বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় তৃতীয় পাবনার সুদীপ্ত
পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
বাবা প্রবীর কুমার, বোন স্বর্না এবং মা মিতুর সঙ্গে (বাঁয়ে দ্বিতীয়) সুদীপ্ত পোদ্দার
‘বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল আমি ডাক্তার হবো। কিন্তু, আমার দুই বোনের ইচ্ছা, আমি যেন বুয়েটে পড়ি। সেই থেকে মনের মধ্যে প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন লালন করতাম। বুয়েটে পড়ার স্বপ্ন দেখতাম। লক্ষ্য নির্ধারণ করে পড়ালেখা চালিয়ে গেছি। আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় খুব খুশি। আমার এই সাফল্যের পেছনে বাবা-মা, বোন ও শিক্ষকদের অবদান রয়েছে। ভবিষ্যতে একজন প্রকৌশলী হয়ে দেশ ও মানুষের সেবা করতে চাই আমি।’
গতকাল বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দুপুরে পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার বাসায় বসে এভাবেই নিজের অনুভূতির কথা জানাচ্ছিলেন সুদীপ্ত পোদ্দার। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষায় সারা দেশের মধ্যে মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন তিনি।
গোপালপুর মহল্লার বাসিন্দা প্রবীর কুমার পোদ্দার (স্বপন) ও মিতু পোদ্দার দম্পতির একমাত্র ছেলে সুদীপ্ত পোদ্দার। দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে সুদীপ্ত সবার ছোট। বাবা ব্যবসায়ী ও মা গৃহিণী। তার এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত পুরো পরিবার। সেইসাথে খুশি তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষকরা।
আলাপকালে জানা যায়, সুদীপ্তের পৈত্রিক নিবাস পাবনার বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানার ভবানীপুর মাসুমদিয়া গ্রামে। সন্তানদের লেখাপড়ার সুবাদে ২০১৩ সাল থেকে তাদের বসবাস পাবনা শহরে। লেখাপড়ায় তারা তিন ভাই বোন অত্যন্ত মেধাবী।
সুদীপ্তের বড় বোন শর্মিতা পোদ্দার ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে কেমিস্ট্রিতে মাস্টার্স করে সংসার করছেন। ছোট বোন স্বর্না পোদ্দার পাবনা সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজে একাউন্টিং-এ মাস্টার্স শেষ করে বিসিএস-এর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর সবার ছোট সুদীপ্ত পোদ্দার বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় সারা দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন।
সুদীপ্ত বলেন, ‘পড়ালেখায় আমার কোনো নির্ধারিত সময় ছিল না। প্রতিদিন ১২ঘণ্টা বা ১০ঘণ্টা পড়তে হবে এমনটা কখনোই ভাবিনি। যখন মনে হয়েছে আজ আমার এই পড়াটুকু শেষ করতে হবে সেটা নির্ধারণ করে পড়ালেখা করেছি। সবচেয়ে বড় কথা নিজের ওপর আস্থা ছিল।’
সুদীপ্তর বাবা প্রবীর কুমার পোদ্দার (স্বপন) ও মা মিতু পোদ্দার বলেন, ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবি। পড়াখেলার বাইরে কোথাও কিছু করতো না। ওকে কখনও পড়ার জন্য বলতে হয়নি। কেজি স্কুল থেকে সব সময় প্রথম হয়ে আসছে। সৃষ্টিকর্তার কাছে চাইতাম, ছেলেটার পরিশ্রমে ফল যেন দেন। আজ সেই চাওয়া পূরণ হয়েছে। আশা করি ভবিষ্যতে সে মানুষের মতো মানুষ হয়ে দেশ আর মানুষের সেবা করবে।
সুদীপ্তর ছোট বোন স্বর্না পোদ্দার বলেন, ‘আমি জানতাম আমার ভাইটা প্রথম তিনজনের মধ্যে থাকবে। ওর ওপর আমাদের আস্থা ছিল। তৃতীয় হওয়ায় অন্যরকম আনন্দ লাগছে। মনে হচ্ছে, আমরা সবাই এই সাফল্য অর্জন করেছি। সুদীপ্ত যেহেতু বরাবর ক্লাসে এক নম্বর ছিল। ভবিষ্যতেও সব কাজে যেন এক নম্বরই থাকে।’
এবিষয়ে পাবনা সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মাহবুব সরফরাজ বলেন, ‘আমাদের জন্য অনেক আনন্দের খবর। যারা বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার সুযোগ পায় তারা স্কুল লেভেল থেকেই ভালো ছাত্র। সেই ভালোটাকেই আমরা যত্ন নিতে পারছি, এটা আমাদের জন্য তৃপ্তির জায়গা। এটা কারো একার কৃতিত্ব নয়। মূল কৃতিত্ব শিক্ষার্থীর অবশ্যই। তার বাবা-মা, শিক্ষক আমরা সহায়ক ভূমিকা পালন করেছি।’
প্রসঙ্গত, পাবনা জেলা স্কুল থেকে অষ্টম ও দশম শ্রেণি এবং সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন সুদীপ্ত। এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছেন তিনি। তার মতো একই কলেজের (সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজ) আরও ৫ জন শিক্ষার্থী বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
শাহীন/মাসুদ