ঢাকা     সোমবার   ০১ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

রাজশাহীর বাগমারায় সোহাগ হত্যায় ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই গ্রেপ্তার

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৪, ৪ এপ্রিল ২০২৪  
রাজশাহীর বাগমারায় সোহাগ হত্যায় ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই গ্রেপ্তার

রাজশাহীর বাগমারায় খুন হয়েছিলেন যশোরের মনিরামপুর উপজেলার আড়শিংগাড়ি গ্রামের সোহাগ হোসেন (২২)। এ হত্যা মামলায় বাগমারা উপজেলার ঝিকড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের ভাই আসাদুল ইসলামকে (৪৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

বুধবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় র‌্যাব-৫ রাজশাহীর একটি দল বাগমারার মরুগ্রামে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।

নির্মম এই হত্যাকাণ্ডে ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামেরও জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তিনি এখনও গ্রেপ্তার হননি। এরইমধ্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাগমারার যোগীপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ নয়ন হোসেন গত ৩০ মার্চ রফিকুল ইসলামকে পাশে বসিয়ে ইফতার করেন। পুলিশ ফাঁড়িতেই ওই ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সোহাগ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আসাদুল ইসলাম বাগমারা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুল হামিদ মরু হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। উচ্চ আদালতে আপিল করে তিনি জামিনে আছেন। বাগমারা দুগুলপাড়া গ্রামের ওমর আলী হত্যা মামলারও আসামি তিনি। ২০০৬ সালে ওমর আলীকে হত্যা করা হয়েছিল। মামলাটি এখন বিচারাধীন। এছাড়া মারামারি-চাঁদাবাজিসহ আরও কয়েকটি মামলা আছে তার বিরুদ্ধে।

র‌্যাব-৫ এর রাজশাহীর অধিনায়ক লেফটেন্যার্ন্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস জানান, বুধবার সন্ধ্যায় র‌্যাব সদস্যরা আসাদুলকে গ্রেপ্তারের জন্য তার বাড়ির সামনে যান। এ সময় আসাদুল বাড়ি থেকে বেরিয়ে ভুট্টাক্ষেত দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পরে ধাওয়া করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে রাতেই তাকে বাগমারা থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

নিহত সোহাগ হোসেন ঢাকায় থাকতেন। সেখানে বাগমারার মরুগ্রাম ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের মনাহার ইসলাম (২৬) এর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। 

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নজরুল স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হক এবং আসাদুল দলীয় প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের পক্ষে কাজ করেন। ভোটে এনামুল পরাজিত হন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়। গত ২ ফেব্রুয়ারি সকালে নজরুলের লিজ নেওয়া পুকুরপাড়ে নিজেদের সরিষা খেতে যান মনাহার। এ নিয়ে প্রতিপক্ষ আসাদুলের লোকজন মনাহারের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তারা মনাহারকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেন।
 
বন্ধুর আহত হওয়ার খবর পেয়ে ঢাকা থেকে সোহাগ তার আরও দুই বন্ধুকে নিয়ে মনাহারকে দেখতে আসেন। এ সময় গ্রামে ‘ভাড়াটে সন্ত্রাসী’ আনা হয়েছে অভিযোগ তুলে আসাদের লোকজন ওই তিন তরুণের ওপর হামলা চালায়। এ সময় দুজন পালিয়ে প্রাণে বাঁচলেও মাঠের মধ্যে পিটিয়ে ও কুপিয়ে সোহাগকে হত্যা করা হয়। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
 
এ ঘটনার পর রাতেই নিহত সোহাগের চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম সাগর বাগমারায় আসেন। সেদিন পুলিশ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে তাকে দিয়ে একটি হত্যা মামলা করায়। ওই মামলায় আসামি হিসেবে কারও নাম উল্লেখ না করে জড়িত অনেককে বাঁচানোর চেষ্টার অভিযোগ তোলেন সোহাগের বাবা শরিফুল ইসলাম। পরে ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে হত্যা মামলা করার আরজি জমা দেন। আদালত এই মামলাটি আগের মামলার সঙ্গে তদন্ত করে একসঙ্গেই প্রতিবেদন দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।

নিহত সোহাগের বাবা আদালতে হত্যা মামলার যে আরজি দেন তাতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামকে ১ নম্বর আসামি করা হয়। আর ২ নম্বর আসামি করা হয় তার ভাই আসাদুলকে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত পুলিশ দুজনকে এবং র‌্যাব তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এই পাঁচজনই সোহাগের বাবার মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।

কেয়া/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়