ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

বেইলি রোড অগ্নিকাণ্ড

ঈদে আর বাড়ি ফিরবে না মেহেদী

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১৪, ৮ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১৯:১৩, ৮ এপ্রিল ২০২৪
ঈদে আর বাড়ি ফিরবে না মেহেদী

বেইলি রোড ট্রাজেডিতে নিহত হয়েছেন মেহেদী; পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে স্বপ্ন ছিল বিদেশে গিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে পরিবারের অভাব-অনটন দূর করবেন। পরিবারের সদস্যদের মুখে ফোটাবেন হাসি।

আর তাই পাসপোর্ট করার জন্য কাগজপত্রও প্রস্তুত করছিলেন। কিন্তু ভাগ্য আর সহায় হলো না তার। তার আগেই ভয়াবহ আগুনে স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেল। এতে করে স্থায়ীভাবেই বন্ধ হয়ে গেছে পরিবারের আনন্দ।

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বানাইল ইউনিয়নের দেওরা গ্রামের বাসিন্দা মেহেদী হাসান কাজ করতেন বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি ফাস্টফুডের দোকানে। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ভবনটিতে লাগা ভয়াবহ আগুনে প্রাণ যায় ৪৬ জনের সঙ্গে তারও। এরপর থেকে এখনো শোকের মাতম কাটেনি পরিবারের। উপার্জনকারী সন্তানকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবারের সদস্যরা।

পরিবারের সঙ্গে কথা কথা বলে জানা গেছে, মেহেদী হাসান ২০১২ সালে মির্জাপুর কোড়ালিয়া পাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ২০১৪ সালে দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি আরফান খান মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। অভাব অনটনের সংসারের হাল ধরতে ঢাকাতে চাকরি নেন।

মেহেদীর ছোট ভাই ইসরাফিল মিয়া বলেন, আমরা দুই ভাই একই জায়গায় কাজ করতাম। অগ্নিকাণ্ডের আগে আমি একটি কাজে ভবনের অন্য আরেকটি ফ্লোরে ছিলাম। পরে আমি ভবন থেকে লাফিয়ে প্রাণে বেঁচে যাই। গত বছর আমরা দুই ভাই বাবা-মার সঙ্গে ঈদ করেছি। আর কোনদিন ভাইয়ের সাথে ঈদ করা হবে না আমাদের। দুই ভাই মিলে সংসারের হাল ধরতে চেয়েছিলাম আর তা কোনদিন পূরণ হবে না। জানি না এখন এ স্বপ্ন আমি পূরণ করতে পারবো কি না। সরকারের কাছে দাবি জানাই আমাদের সহযোগিতা করা হোক।

মেহেদীর বাবা আয়নাল হক বলেন, অভাব অনটনের সংসার চালাতেই দুই ভাই কাজ করতেন ঢাকাতে। বড় ছেলে মেহেদীর বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন ছিল। পাসপোর্ট করার জন্য কাগজপত্র রেডি করছিল। মেহেদী স্বপ্ন দেখতো, বিদেশে গিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে পরিবারের অভাব অনটন দূর করবে। সবার মুখে হাসি ফোটাবে।

তিনি বলেন, আমর বয়স হয়ে গেছে, কিছু করতে পারি না। আমি ঋণ করেছি; বড় ছেলে ঋণের টাকা প্রতি মাসে দিত। এ টাকা এখন কে দিবে। গতবছর মেহেদী আমাদের সাথে ঈদ করেছে। আর কোনদিন আমার ছেলে আমাদের সাথে ঈদ করতে পারবে না। এ সংসার এখন কিভাবে চলবে। কে দেখবে এ সংসার। মাথায় আর কাজ করে না। ঈদ আসলেও আমাদের মাঝে সে আনন্দ নেই। ছেলের মা সব সময় কান্না করে। কান্না করতে করতে ছেলের মাও অসুস্থ হয়ে গেছে। সরকারের কাছে দাবি জানাই আমাদের যেন সহযোগিতা করেন।

মেহেদীর মা কল্পনা বেগম বলেন, মেহেদী বড় ছেলে ছিল। আমাদের সংসারে সব খরচ দিতো। এখন এ সংসার কে দেখবে। গতবছর এক সাথে ঈদ করেছি। আমাদের জন্য গতবছর কাপড় ও বাজার করে নিয়ে আসছিল। এবার আর কেউ আসবে না।
এসব কথা বলে মেহেদীর মা কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। আর মেহেদীর জন্য দোয়া করছেন।

মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ নুরুল আলম বলেন, মেহেদীর পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। আমরা আরও সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো। 

এদিকে, স্থানীয় সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ মেহেদীর পরিবারকে কিছু নগদ অর্থ সহযোগিতা দিয়েছেন। তার ছোট ভাইকে চাকরি দেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পরিবারটি।

কাওছার/ফয়সাল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়